কোহলি বলেছিলেন, প্রিয় খাবারে হাত দিও ক্যারিয়ার শেষে

কোহলির এক কথাতেই বদলে গেছে সঞ্জু স্যামসনের মানসিকতা।ছবি: টুইটার

সঞ্জু স্যামসন এবারের আইপিএলে খেলছেন দারুণ। রাজস্থান রয়্যালসের এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান তাঁর ব্যাটিং দিয়েই মাত করে দিচ্ছেন। ২০১৫ সালে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া সঞ্জু ভারত জাতীয় দলে জায়গা পোক্ত করতে পারেননি। ৪ ম্যাচে মাত্র ৩৫ রান করা এ ক্রিকেটার আদৌ ভারতীয় দলে খেলার যোগ্য কিনা, সে প্রশ্নও উঠেছে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠানরত এবারের আইপিএল সঞ্জু সম্পর্কে নির্বাচকদের ধারণা কিছুটা হলেও বদলাতে সাহায্য করবে। ত্রিভান্দ্রামের এই ক্রিকেটারের বদলে যাওয়ার রহস্য বিরাট কোহলি। সম্প্রতি ভারতীয় অধিনায়কের কিছু কথা থেকেই ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন সঞ্জু স্যামসন।

ক্রিকেটের প্রতি আত্মনিবেদনই বদলে গেছে সঞ্জুর, কোহলির এক কথায়।
ছবি: টুইটার

কোহলি এমন কি বলেছেন, যা বদলে দিয়েছে সঞ্জুর মানসিকতা! তিনি কি ব্যাটিং নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, নাকি ফিটনেস নিয়ে? সঞ্জু জানিয়েছেন, কোহলির কথাগুলো খুবই সাধারণ কিন্তু এর মধ্যে এমন কিছু অসাধারণত্ব লুকিয়ে আছে, যা হয়তো তাঁকে অনুপ্রাণিত করে যাবে ক্যারিয়ারের বাকিটা সময়।

কিছুদিন আগে ভারতীয় ক্রিকেট দলের এক নেট সেশনে কোহলির সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় সঞ্জুর। কোহলি সঞ্জুকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করেছিলেন, সঞ্জু কত দিন খেলা চালিয়ে যেতে চাও। সঞ্জু নিজের ইচ্ছার কথা জানানোর পর কোহলি এমন কিছু বলেছিলেন, যেটা প্রথমে সঞ্জুকে অবাক করলেও পরে তাঁর মনে হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক যা বলেছেন, এর চেয়ে খাঁটি কথা আর হয় না।

সঞ্জুর মুখেই শোনা যাক সে কথা, ‘ আমি তাঁকে ভারতীয় দলের নেট সেশনে পেয়ে ফিটনেস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, তুমি কত দিন খেলবে বলে ঠিক করেছ? বললাম, এই ধরুন আর দশ বছর তো খেলবই। এরপর তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, যদি তুমি আরও দশ বছর খেলতে চাও। তাহলে তোমার জীবনের সবকিছু এই দশ বছরকে দিয়ে দাও। দশ বছর পর তুমি তোমার প্রিয় খাবারগুলো খেয়ো। দশ বছর যা যা করতে পারোনি, সেগুলো তখন করো। তুমি তো দশ বছর পর আর ক্রিকেট খেলবে না। তাহলে তুমি এই দশ বছর ক্রিকেটের জন্য জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য গুলো ত্যাগ করতে পারবে না?’

কোহলির এই কথাই বদলে দিয়েছে সঞ্জুকে আপাদমস্তক, ‘কোহলি ভাইয়ের এ কথাই ক্রিকেটের প্রতি আমার আত্মনিবেদন বদলে দিয়েছে। ঠিকই তো, আমি তো সারা জীবন ক্রিকেট খেলব না। যত দিন খেলব, এই সময়টা না হয় নিজের সবকিছু খেলাটাকে দিই। ফিটনেস ঠিক রাখার স্বার্থে যদি আমাকে আমার প্রিয় জিনিসগুলো বিসর্জনও দিতে হয়, তা-ই সই।’

এবারের আইপিএলে রাজস্থানের দুটি জয়েই সঞ্জুর বড় অবদান। চেন্নাই সুপারকিংসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ৭৪ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেছেন। পরের ম্যাচেই কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ৮৫। তাঁর মেরে খেলার প্রবণতা তো অনেককেই মহেন্দ্র সিং ধোনির ফর্মের তুঙ্গে থাকার সময়গুলোকে মনে করিয়ে দিয়েছে। উইকেটরক্ষক হিসেবেও তিনি খারাপ করছেন না। চেন্নাইয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ২ স্টাম্পিং আর ২ ক্যাচের নির্ভরতা দিয়েছেন তাঁর দলকে।

২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেটি হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচে ১৯ রান করেছিলেন। নির্বাচকদের মন ভরাতে পারেননি। বাদ পড়ে যান দল থেকে। ২০২০ সালে আবার জাতীয় দলে ফিরে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছেন আরও ৩ ম্যাচ। লঙ্কানদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে আর নিউজিল্যান্ড সফরে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল খুবই বাজে। তিন ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ১৬ রান। আইপিএলে অবশ্য সঞ্জুর পারফরম্যান্স বেশ ভালো। ৯৬ ম্যাচে ২ হাজার ৩৭৬ রান তাঁর। গড় ২৮.৬৩। ১৩৩.৫৬ স্ট্রাইকরেটে ২টি সেঞ্চুরি আর ১২টি ফিফটির মালিক তিনি।