কোহলি সেই মুহূর্তে থাকতে চান যেকোনো মূল্যে

সন্তানের জন্ম–মুহূর্তে স্ত্রী আনুশকার পাশে কোহলি থাকতে চান যেকোনো মূল্যে।ছবি: এএফপি

অ্যাডিলেড টেস্ট খেলেই বিরাট কোহলি দেশে ফিরে যাবেন। প্রথম সন্তান জন্মের মুহূর্তে উপস্থিত থাকবেন স্ত্রী আনুশকা শর্মার পাশে। ব্যাপারটি নিয়ে বিতর্ক চলছে যথেষ্টই। সুনীল গাভাস্কার তো রীতিমতো বিরক্ত ভারত–অধিনায়কের ওপর। টেস্ট ম্যাচ বাদ দিয়ে কেন কোহলি দেশে ফিরে আসবেন—এটাই ভারতীয় কিংবদন্তির মাথায় ঢুকছে না। নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের কথা স্মরণ করে বলেছেন, তাঁর প্রথম সন্তান জন্মের পর দীর্ঘদিন তিনি শিশুর মুখ দেখেননি কেবল দেশের হয়ে খেলার জন্য।

গাভাস্কারই নন, ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেবও আকারে–ইঙ্গিত কোহলির সমালোচনাই করেছেন এমন সিদ্ধান্তের জন্য। তবে যাঁকে নিয়ে এত সমালোচনা–বিতর্ক, সেই কোহলি মনে করেন সন্তান জন্মের সময় উপস্থিত থাকা নিয়ে তাঁর মনে কোনো দ্বিধাই নেই। তিনি এমন অসাধারণ মুহূর্তটি কোনোভাবেই মিস করতে চান না। আনন্দময় এ মুহূর্তের অংশ হতে চান যেকোনো মূল্যেই।

বিসিসিআইয়ের অফিশিয়াল পেজে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি এ কথা বলেছেন। সেই ভিডিওতে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথের সঙ্গে দারুণ উপভোগ্য এক আলাপচারিতায় মেতেছিলেন কোহলি। সন্তান জন্মের মুহূর্তে দেশে ফিরে যাওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য খুবই সোজাসাপটা, ‘এটা এমন একটা সিদ্ধান্ত, যা নিয়ে আমার মনে কোনো দ্বিধাই নেই। ব্যাপারটা দেশের হয়ে খেলার মতোই ব্যাপার। দেশের প্রতি আমি যে ধরনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ধরে নিন এটাও তেমন ব্যাপার। প্রথম সন্তানের জন্ম হওয়া জীবনের খুবই বিশেষ এক মুহূর্ত। এটা এমন কিছু, যেখানে যে কেউই উপস্থিত থাকতে চাইবে যেকোনো মূল্যে।’

কোহলির অনুপস্থিতিতে ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন অজিঙ্কা রাহানে। কোহলি নিজেও দারুণ উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন তাঁর অনুপস্থিতিতে রাহানে কেমন অধিনায়কত্ব করেন, সেটি দেখার জন্য। তিনি আরও একটি বিষয় নিয়ে আগ্রহী। সেটি হনুমা বিহারি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেমন করেন, সেটি নিয়ে, ‘আমি অজিঙ্কা কেমন করে, সেটি দেখতে মুখিয়ে আছি। আমি মনে করি সে এমন একজন ক্রিকেটার, যে ব্যাপারটা উপভোগ করবে। সময় এসেছে তাঁর নিজের দায়িত্বশীলতা প্রমাণের। আমি মনে করি, সে দায়িত্বটা ঠিকমতোই পালন করবে। আরেকজনের খেলা দেখতে আমি মুখিয়ে আছি, সে হলো হনুমা বিহারি। আমার মতে, সে দুর্দান্ত এক ব্যাটসম্যান।’

স্টিভ স্মিথের সঙ্গে অন্য অনেক আলাপের মধ্যে কোহলি জানিয়েছেন, ক্রিকেটকে কখন তিনি ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন, ‘আমি সব সময়ই চাইতাম ক্রিকেটটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার। আমি ক্রিকেটটা ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম তখনই, যখন আমার বাবা চলে গেলেন। ঠিক সেই সময়ই আমার মনে হলো আমার ক্রিকেট নিয়ে আরও অনেক বেশি সিরিয়াস হওয়া উচিত। খেলাটার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া আর এমন অখণ্ড মনোযোগ স্থাপন করা যেটি কখনোই বিচ্যুত না হয়। সেই সময় থেকে আমার মনে একটাই চিন্তা। আমাকে ভারতের পক্ষে খেলতে হবে। এবং খেলে যেতে হবে দীর্ঘদিন ধরে।’

বল বিকৃতির অভিযোগে ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন স্মিথ। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় দর্শকদের বাজে মন্তব্যের শিকারও হতে হয়েছে অস্ট্রেলীয় তারকাকে। তবে কোহলি সে সময় স্মিথের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দর্শকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন স্মিথকে কটাক্ষ না করতে।

আলাপচারিতায় স্মিথ সে সময়ের কথা মনে করে ধন্যবাদ জানান কোহলিকে। ভারত অধিনায়ক অবশ্য ব্যাপারটিকে তাঁর দায়িত্ব হিসেবেই নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্মিথকে ‘তুমি সে সময় অনেক দিন পর ক্রিকেটে ফিরেছিলে। গোটা সময়টা যতটা বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো, তুমি গিয়েছিলে। আমি মনে করি, জীবনে অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু সেটি দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কোনো মানে হয় না। আমার মনে হয়েছিল, তোমার সঙ্গে দর্শক যে আচরণ করছে, সেটা ঠিক নয়। এসব ব্যাপারে কোনো ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর ব্যাপারটি আমার পছন্দ নয়। আমরা যতই একে অন্যের সঙ্গে লড়ি, আমাদের সবার মধ্যেই একটা মানবিক সত্তা আছে। তুমি মাঠে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারো, কিন্তু মাঠের বাইরে তোমার বাজে আচরণ প্রাপ্য নয়। আমি এই ব্যাপারগুলোই অনুধাবন করেছি কেবল।’