কোহলিদের জীবনে এর চেয়ে দারুণ মৌসুম এসেছে নাকি?

স্টোকসের হারিয়ে মৌসুমটা দারুণভাবেই শেষ হলো কোহলিদের।ছবি: এএফপি

কী দারুণ একটা মৌসুমই না কাটাল ভারত। বিরাট কোহলিরা এই মৌসুমে একের পর এক সিরিজ জিতে রীতিমতো আকাশে উড়ছেন। টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডকে নাকাল করার পর টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে সিরিজও জিতেছেন তাঁরা। এর আগে জানুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টেস্ট সিরিজে ঐতিহাসিক সেই জয় তো আছেই।

ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রীর দৃষ্টিতে মৌসুমটা দুর্দান্ত। তিনি এক ধাপ এগিয়ে বলেই দিয়েছেন, এটি ভারতের ক্রিকেটারদের ‘জীবনের সেরা মৌসুম।’

পুনেতে গতকাল শ্বাসরুদ্ধকর শেষ ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডকে ৭ রানে হারিয়ে তিন ওয়ানডের সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে ভারত। এরপর টুইটারে দলকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে শাস্ত্রীর কথা, এই কঠিন সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট দল যেন পৃথিবীর দুই গোলার্ধ্বই জয় করেছে, ‘এই কঠিন সময় তিন সংস্করণে পৃথিবীর দুই সেরা ক্রিকেট দলকে দুই গোলার্ধ্বে হারানোয় দলের সব খেলোয়াড়কে অভিনন্দন। তোমরা আমার টুপি–খোলা অভিনন্দন গ্রহণ করো। জীবনের সেরা মৌসুমটাই কাটালে তোমরা।’

গতকাল পুনেতে স্যাম কারেনের অপরাজিত ৯৫ রানের দারুণ ইনিংসটা মাঠেই মারা গেছে। আগে ব্যাটিং করে ইংল্যান্ডকে ৩৩০ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ভারত। ঋষভ পন্তের ৬২ বলে ৭৮ রানের পাশাপাশি শিখর ধাওয়ানের ৫৬ বলে ৬৭ ও হার্দিক পান্ডিয়ার ৪৪ বলে ৬৪ রানের তিন ইনিংস ভারতকে পথ দেখায়।

জবাবে ইংলিশরা একপর্যায়ে ২০০ রান তুলতেই হারিয়ে বসে ৭ উইকেট। এই সময়ই কারেন বাধা হয়ে দাঁড়ান ভারতের সামনে। আদিল রশিদকে সঙ্গে নিয়ে কোহলি-শাস্ত্রীদের কপালের ভাঁজ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কারেন। ওয়ানডেতে আটে নেমে সর্বোচ্চ রানের বিশ্ব রেকর্ড ছোঁয়া কারেনকে শেষ পর্যন্ত হতাশা উপহার দেয় ভারত।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৪ রান দরকার হলেও টি নটরাজনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয়টা দূরেই থেকে গেছে ইংল্যান্ডের জন্য। তবে তার আগের নাটক নিশ্চিত করে দিয়েছে, সিরিজের আগের দুই ম্যাচের মতো শেষ ওয়ানডেটাও শিহরণ ছড়িয়ে যাবে।

করোনার এই কঠিন সময়ে জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকে খেলাটাই যেখানে কঠিন হয়ে গেছে, সেখানে ভারতীয় ক্রিকেট দল যেভাবে খেলেছে, তাতে এই মৌসুমকে কোহলিদের জীবনের সেরা মৌসুম বলাটা অস্বাভাবিক নয় কারও জন্য। শাস্ত্রী তো খুব কাছ থেকেই দেখেছেন সবকিছু।

কোহলি ভারতে ফিরে যাওয়ার পর রাহানেকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতকে জিতিয়েছেন শাস্ত্রী।
ছবি: এএফপি

অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে সীমিত ওভারের ম্যাচগুলোয় পারফরম্যান্স কিছুটা মিশ্র হলেও টেস্ট সিরিজটাকে ঐতিহাসিক বানিয়ে রেখেছে ভারত। ‘৩৬’ দুঃস্বপ্ন দিয়ে যাওয়া অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টে ভরাডুবির পর যেভাবে ভারত ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেটি অবাক বিস্ময়ে দেখেছে গোটা ক্রিকেট দুনিয়া।

সন্তান জন্মের সময়ে স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য ওই টেস্টের পর দেশে ফিরে যান কোহলি। কিন্তু তাঁকে ছাড়াই প্রথমে মেলবোর্নে জিতে সিরিজে সমতা আনা, এরপর মানসিক শক্তির দুর্দান্ত প্রয়োগ ঘটিয়ে সিডনির নিশ্চিত হারতে বসা ম্যান বাঁচানো।

ব্রিসবেনে শেষ টেস্টের আগে চোট সমস্যা এমনভাবে পেয়ে বসেছিল যে একাদশ নামানোই মুশকিল হয়ে গিয়েছিল তাদের। সেই টেস্টটাই হয়ে থাকল ভারতীয় ক্রিকেটের গভীরত্ব প্রমাণের ম্যাচ। যে ক্রিকেটারদের খেলারই কথা ছিল না, তাঁরাই ব্রিসবেনে অবদান রাখলেন ভারতের দুর্দান্ত এক জয়ে।

ভারত ও ইংল্যান্ডের সিরিজ দারুণ রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে।
ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়া সফর সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, ভারতীয় ক্রিকেটের শক্তি কতটা বিস্তৃত। যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো দলকেই যে তারা হারাতে পারে, সেটাও প্রমাণ করেছে ব্রিসবেন আর অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। সেই সিরিজের আত্মবিশ্বাসই ঘরের মাঠে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডকেও পরাভূত করল সব সংস্করণে।

বিশ্বের দুই সেরা দল তাদের কাছে পরাস্ত—যে মৌসুম এমন সাফল্যে ভরা, সেটি তো কোহলিদের জীবনের সেরা মৌসুম হবেই।