ক্রিকেট-সাহসিকতার গল্পগাথা

ঘরের মাঠে দুর্দান্ত এক দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ফাইল ছবি
ঘরের মাঠে দুর্দান্ত এক দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ফাইল ছবি

পরিষ্কার মনে আছে সে দিনগুলোর কথা। যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে বাউন্ডারি এলে খুশিতে আটখানা হতো স্টেডিয়ামে উপস্থিত জনতা। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোনো বোলারকে কীভাবে চার হাঁকালেন, তা নিয়ে গবেষণায় গরম হতো চায়ের আসর। ক্রিকেট খেলিয়ে অন্যান্য দেশের তারকাদের মতো আমাদের ক্রিকেটাররা কবে মাঠ মাতাতে পারবেন, সে স্বপ্নে বিভোর হতো আমাদের হৃদয়, বিশ্বকাপ বা এমনি কোনো আসরে প্রতিবেশী কোনো দেশের পক্ষ নিয়ে আমাদের খেলাপ্রেমী সমাজ মনের হাহাকার ঢাকার চেষ্টা করত। খুব মনে আছে সে দিনগুলোর কথা।

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ক্যালেন্ডারের হিসাবে পিছিয়ে যেতে হবে এক কুড়ি সাল। দু–এক বছর আরও নেওয়া যেতে পারে। আচ্ছা, ঠিক আছে নির্দিষ্ট করেই ধরুন—নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিনগুলো। পশ্চিমবঙ্গ ক্রিকেট দল পদ্মার এপারে বেড়াতে এল। ঠিক বেড়ানো নয়, খান কতক ক্রিকেট ম্যাচও ছিল সেই সফরের কারণ। সৌরভ গাঙ্গুলী নামের এক তরুণ সে দলের উদীয়মান তারকা। ঢাকা স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে সেই তরুণের সে যে কী উন্মত্ততা! বাংলাদেশের কোনো এক বোলারকে ছক্কা মেরে রীতিমতো তাঁর নাকের জল-চোখের জল এক করে দিয়েছে সে। পরদিন পত্রিকায় বড় করে তাঁর ছবি। সৌরভের সঙ্গে খেলতে পেরেই আমরা তখন বর্তে যাই। তাঁর সিনিয়র সতীর্থরা—তাঁরা ভারতীয় ক্রিকেট দলে কোনো দিন খেলেছেন কি খেলেননি, তা আজ আর মনে নেই। কী নসিহত! উন্নতি করতে হলে তোমাদের এই করতে হবে, সেই করতে হবে! এরই মধ্যে কোনো একটি ম্যাচে বাংলাদেশের সে সময়কার তারকা ক্রিকেটার এনামুল হক মণি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসলেন। তাঁর সেই সেঞ্চুরি নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমী মহলে কাটাছেঁড়া।

ঘরের মাঠে দুর্দান্ত এক দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ফাইল ছবি
ঘরের মাঠে দুর্দান্ত এক দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ফাইল ছবি

কী অসাধারণ সেঞ্চুরি। সেই সেঞ্চুরির সঙ্গে ব্যক্তিগত কিছু পারফরম্যান্সই প্রাপ্তি। দু–একটি বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে বড় হারও সঙ্গী হলো। ক্রিকেট যাঁরা ভালোবাসেন, ক্রিকেট দুনিয়ায় বাংলাদেশকে যাঁরা একটা জায়গায় দেখতে চান, তাঁদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন হতাশা। পশ্চিমবঙ্গ ক্রিকেট দলের সঙ্গেই আমাদের এ অবস্থা! পশ্চিমবঙ্গ তো ভারতে ক্রিকেটে পিছিয়ে থাকা কয়েকটি রাজ্যের একটি। ওদের সঙ্গে আমাদের এত পার্থক্য। না–জানি ভারতীয় দল কতটা এগিয়ে। ভারতীয় দল কতটা এগিয়ে, সেটির পরীক্ষাও তো তার আগেই হয়ে গেছে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে ৫০ ওভার ব্যাট করে আমরা সাকল্যে ৯৯ রান করেছি। চণ্ডীগড়ে তার দুই বছর পর দ্বিতীয় ম্যাচে উন্নতির ছাপ স্পষ্ট হলেও সে ম্যাচেও আমরা রীতিমতো উড়ে গেছি। ক্রিকেটে কোনো আশা কি তবে নেই!

আশা জাগল। ওই নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই। আইসিসি ঘোষণা করল যারা টেস্ট খেলে না, এমন দেশগুলোর মধ্য থেকে শীর্ষ তিনটি দেশকে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার সুযোগ তারা দেবে। এ ঘোষণাটাই আসলে আমাদের সাহস জোগাল। ক্রিকেটের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে পার্থক্য অনেক থাকলেও টেস্টের বাইরে আমরা তখন খুব একটা পিছিয়ে ছিলাম না। অন্তত ১৯৯০ সালের আইসিসি ট্রফির ফল সেটিই বলছিল। এই আইসিসি ট্রফিই টেস্টের বাইরে থেকে বিশ্বকাপে খেলার একমাত্র সদর দরজা। সেখানে সর্বশেষ আসরে আমরা তৃতীয় হয়েছিলাম, খেলেছিলাম শেষ চারে। কপালটা নেহাতই মন্দ ছিল, নয়তো অভিজ্ঞতায় পেরে উঠিনি। নব্বইয়ের আইসিসি ট্রফি জিতে যে দেশটি, মানে জিম্বাবুয়ে ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলীয়-নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপে খেলেছিল, তাদের তো আমরা প্রায় ধরেই দিয়েছিলাম।

বিশ্বকাপের স্বপ্নই ক্রিকেটে সাহস এনে দিল। বিশ্বকাপে গিয়ে কী হবে, সে পরে দেখা যাবে। আগে তো ওখানকার টিকিট হাতে নিই। পরের আইসিসি ট্রফির স্বাগতিক ছিল কেনিয়া। ১৯৯৪ সালে সেই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে বদলে যাবে আমাদের ক্রিকেটের দিগন্ত—এমন স্বপ্ন খুব করেই দেখা শুরু করল দেশের মানুষ। যাক, অন্তত একটা খেলায় আমরা বৈশ্বিক অবস্থানে নিজেদের নিতে পারছি বা নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেই সুখানুভূতি খুব করেই স্পর্শ করল সবাইকে।

ঘরের মাঠে দুর্দান্ত এক দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ফাইল ছবি
ঘরের মাঠে দুর্দান্ত এক দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ফাইল ছবি

কত প্রস্তুতি সেই লক্ষ্য সামনে রেখে। বিদেশ থেকে কোচ আনা হলো। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ক্রিকেট দুনিয়ায় কোচ বস্তুটির প্রচলন খুব বেশি না থাকলেও আমরা পাশের দেশ ভারত থেকে তাদেরই এক স্বনামধন্য সাবেক ক্রিকেটারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিলাম। মহিন্দর অমরনাথ। যিনি মাত্র নয় বছর আগেই তাঁর দেশকে রীতিমতো একক নৈপুণ্যে বিশ্বকাপের প্রথম শিরোপাটি এনে দিয়েছেন। বিশ্বকাপের মহিমা বুঝতেই যেন অমরনাথের ডাক পড়ল। ভদ্রলোক খুব চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর স্পর্শে উন্নতিটাও হয়েছিল আশাপ্রদ। আইসিসি ট্রফি খেলতে কেনিয়া যাওয়ার আগে ১৯৯৪ সালের গোড়ায় সে সময়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, মহা পরাক্রমশীল পাকিস্তানিদের বিপক্ষে আমরা ঘরের মাঠে দুটি প্রদর্শনী ম্যাচে যে ক্রিকেটটা উপহার দিলাম, তাতে এ দেশ তো বটেই, ক্রিকেট দুনিয়ারও অনেক বিদগ্ধজনের কোনো সন্দেহই রইল না ১৯৯৬ সালে উপমহাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত পরের বিশ্বকাপে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বাইরে উপমহাদেশের আরও একটি দেশ খেলতে যাচ্ছ, সেটি অবশ্যই বাংলাদেশ।

খেলাধুলায় ভাগ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ক্রিকেটে তো এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। কী করে যেন কেনিয়ার মাটিতে ভাগ্য আমাদের শিকেয় ছিঁড়ল না। পা হড়কাতে থাকলাম একের পর এক। সংযুক্ত আরব আমিরাত (এই দলটির ওপর বাংলাদেশের মানুষের সে সময় প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল। তাদের দলের বেশির ভাগ, নির্দিষ্ট করে বললে শতকরা ৯৯ ভাগই আমদানি হয়েছিল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা থেকে), হল্যান্ড ও কেনিয়ার বিপক্ষে মাত্র তিনটি ম্যাচের ব্যর্থতাই আমাদের স্বপ্নভঙ্গের জন্য যথেষ্ট হলো। এর মধ্যে কেনিয়ার বিপক্ষে ২৯৫ রান তাড়া করে বাংলাদেশ হেরে গেল মাত্র ১৩ রানে। রোজার সে দিনটি আজও স্পষ্ট মনে আছে। তারাবির সময় খেলার অন্তিম মুহূর্ত। শেষ পর্যন্ত পরাজয়। চুরানব্বইয়ের ফেব্রুয়ারির সেই সন্ধ্যাটি আজও হয়তো দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে আসে সে প্রজন্মের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে।

বিশ্বকাপে যেতে পারলাম না, খেলা হলো না উপমহাদেশের বর্ণিল আয়োজনে। তাতে কী! সব কী শেষ হয়ে যাবে? যে দেশ ১৯৭১ সালে একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফসল, যে দেশের মানুষ প্রকৃতির রূঢ়তা আর বৈরী আচরণের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকে বছরের পর বছর, তারা একটা ব্যর্থতাতেই মুষড়ে পড়বে? সেটি কী করে হয়। হয়ওনি। আমরা ক্রিকেটে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছি। খুব বেশি দিন লাগেনি। তিন বছরের মাথাতে এসেই আমরা সাফল্য পেয়েছি। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আমরা উদ্ধার করেছিলাম সেই স্বপ্ন, যেটি হাত ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল ১৯৯৪ সালে কেনিয়ায়।

নতুন স্বপ্নের শুরু সেখান থেকেই। যে দশকের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দলের সঙ্গে খেলতে গিয়ে আমাদের দিশেহারা অবস্থা হয়েছিল, সেই দশকের শেষে আমরা ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেললাম। বুকে ধারণ করা স্বপ্ন নিয়ে বিপুল বিক্রমে সামনে এগিয়ে গিয়ে লক্ষ্য ছোঁয়ার এমন উদাহরণ খুব বেশি আছে নাকি! ক্রিকেট দুনিয়াতেই তো কত শক্তিধর দেশ আছে। খেলাটি নিয়ে এমন সাহসিকতার গল্প, এমন দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চলা, বারবার মার খেয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনি বোধ হয় খুব বেশি লেখার নেই।

নব্বইয়ের দশকটা ক্রিকেটে বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রার দশক। এই সময়টা খেলাটিতে আমাদের নেতৃত্বও দিয়েছেন একদল স্বপ্ন বিলাসী মানুষ। আসলে স্বপ্নটা বড় না হলে, বুকে বড় কিছু করে দেখানোর বলটা না থাকলে যে কিছুই হয় না, সেটি ক্রিকেটে আমাদের কর্তারা খুব ভালোই অনুধাবন করেছিলেন। বিশ্বকাপ খেলা হয়ে গিয়েছিল, বাকি ছিল ক্রিকেট দুনিয়ার চিরস্থায়ী জায়গা দখলের। সেটি মানেই এলিট শ্রেণির টিকিট, মানে টেস্ট খেলা। স্বাধীনতার আগে এই ঢাকাতেই ৭টি টেস্ট ম্যাচে পাকিস্তানিরা টিকিট বিক্রি করে পয়সা কামিয়ে গিয়েছিল। সে দেশের অংশ হয়েও আমাদের ক্রিকেটাররা সেই টেস্ট ম্যাচগুলোতে দর্শক হয়েই ছিল। নব্বইয়ের দশকের শেষে এসে আমরা সুযোগ পেলাম সেই আফসোস, সেই খেদ মেটানোর। আমাদের ক্রিকেট কর্তারা ক্রিকেট কূটনীতিতে জিতে আনলেন ক্রিকেটে এলিট ক্লাবের জায়গা। টেস্ট ক্রিকেটের দশম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াল ২০০০ সালের জুনে। সে বছরেরই ১০ নভেম্বর আমরা খেললাম প্রথম টেস্ট। ১৯৭৬ সালে আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে নাম লেখানোর পর ১৯৮৬ সালে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পা রাখা, ১৯৮৮ সালে দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আয়োজন, ১৯৯৭ সালে বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন, ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে খেলা, বিশ্বকাপে গিয়ে পাকিস্তানের মতো দলকে হারানো, ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তি, ভারতের সঙ্গে প্রথম টেস্ট—ক্রিকেটে নতুন অর্জনের পথে আমরা এগিয়ে গেলাম আরও দৃপ্ত পদক্ষেপে।

সেই নতুন অর্জনের পথটা তো ছিল আরও বন্ধুর। আরও কঠিন। সেই পথে ছিল বারবার পা পিছলে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা, আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হওয়ার কাল। বিশ্ব ক্রিকেটে একটি দল হয়ে ওঠাটা তো আর সহজ কিছু ছিল না। আমরা তো ক্রিকেটটা কারও দয়ায় খেলতে শিখিনি। কেউ আমাদের হাত ধরে এগিয়ে দেয়নি সামনের দিকে। আমরা পাইনি তৈরি কোনো মঞ্চ, যেখান থেকে আলো ছড়ানো শুরু করা যায়। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর ক্রিকেটের সবচেয়ে ধ্রুপদি পরিসরটা আস্তে আস্তে আমরা চিনতে শুরু করলাম। হারের পর হার, দুঃসহ সেই সব স্মৃতি। কিন্তু লড়াইয়ের সাহসটা আমরা কোনো দিনই হারিয়ে ফেলিনি। সে কারণেই তো নব্বইয়ের দশকের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গ ক্রিকেট দলের সঙ্গে লড়তেই যেখানে গলদঘর্ম হতে হতো, সেখানে নতুন শতকের প্রথম ভাগেই আমরা বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন শক্তি হিসেবে নিজেদের উত্থানটা আমরা জানান দিতে শুরু করলাম। আমরা হারালাম ভারতকে, অস্ট্রেলিয়াকে। এরই মধ্যে জেতা হয়ে গেল প্রথম টেস্টটাও। যে বিশ্বকাপটাকে সামনে রেখে আমরা নিজেদের স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম, নতুন শতকের প্রথম দশকের মধ্যেই আমরা সেই বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্ব পেরিয়ে জায়গা করে নিলাম পরের ধাপে। বিশ্ব ক্রিকেটের বড় শক্তিগুলো একে একে আত্মসমর্পণ করতে লাগল আমাদের কাছে।

ক্রিকেটে আজ আমরা এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে, যেখান থেকে কেবল সামনের দিকে তাকিয়ে নতুন নতুন অর্জনের অপেক্ষাই করা যায়। নৈরাশ্য এখানে বিরল এক বস্তু। হতাশা আসে মাঝেমধ্যে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার উপায়ও আমরা খুঁজে নিই ইতিহাস থেকে। প্রথম টেস্ট খেলার ১৭তম বার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট-সাহসিকতার আখ্যানটা নিরন্তর এক গর্বের বিষয় হয়ে ওঠে আমাদের কাছে।