‘ক্রিকেটের চেতনা’ ও ‘আইন’–এর বিতর্ক আবার উসকে দিলেন অশ্বিন
ফিল্ডারের থ্রো ব্যাটসম্যানের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করার পর ‘ওভারথ্রো’ থেকে রান নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। মাঠে এ নিয়ে কলকাতার টিম সাউদি ও এউইন মরগানের সঙ্গে একচোট বিতণ্ডা হয়ে গেছে অশ্বিনের। আজ বেশ কয়েকটা টুইটে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন অশ্বিন। বলেছেন, সাউদি বা মরগান কারোরই ‘নৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে থাকার অধিকার’ নেই। ‘ক্রিকেটের চেতনা’ ও ‘আইন’—এ দুটিকে তাই আবারও মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন অশ্বিন।
ঘটনাটা গত পরশু আইপিএলে কলকাতা ও দিল্লির ম্যাচের। আগে ব্যাটিং করা দিল্লির ইনিংসের ১৯তম ওভারের শেষ বলে পয়েন্টে খেলেছিলেন ঋষভ পন্ত। সেখান থেকে রাহুল ত্রিপাঠির করা থ্রো এসে পন্তের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করেছিল। সে ‘ওভারথ্রো’ থেকে আরেকটা রান নিয়েছেন পন্ত ও ক্রিজে তাঁর সঙ্গী অশ্বিন। কলকাতার উইকেটকিপার দীনেশ কার্তিক জানিয়েছিলেন, রান নেওয়ার জন্য অশ্বিনই ডেকেছিলেন পন্তকে।
এমনিতেও আইপিএলের প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, এমন ওভারথ্রো থেকে রান নিতে কোনো বাধা নেই। শুধু কখন কোনো ব্যাটসম্যান ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ বা ‘ফিল্ডিংয়ে বাধা দেওয়ার কারণে’ আউট হবে—সে–সংক্রান্ত ধারা নির্দিষ্ট করা আছে। সাধারণত ব্যাটসম্যানের গায়ে থ্রো এসে লাগলে এরপর রান নেন না ব্যাটসম্যানরা। তবে আইন অনুযায়ী, সেই ‘ওভারথ্রো’ থেকে বাউন্ডারি হলে আম্পায়ারকে সেটা দিতেই হবে।
‘ওভারথ্রো’ থেকে রান নেওয়ার পরের ওভারের প্রথম বলেই সাউদির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অশ্বিন। আউট হয়ে ফেরার পথে প্রথমে সাউদির সঙ্গে, এরপর মরগানের সঙ্গে বিতণ্ডা হয় তাঁর। পরে কার্তিক এসে মিটমাট করান সে ঘটনার। দিল্লির বোলিংয়ের সময় মরগানকে আউট করার পর অশ্বিনের বুনো উল্লাসটাই বলে দিচ্ছিল, সে ঘটনা দ্রুত ভুলছেন না তিনি।
আজ টুইটারে অশ্বিন বলেছেন, মরগান তাঁকে ‘কলঙ্ক’ বলেছেন। তবে সেটা মানতে মোটেও রাজি নন। তাঁর মতে, পন্তের গায়ে থ্রোটি লেগেছিল, সেটা তখন বুঝতে পারেননি তিনি। তবে বুঝলেও রানটা নিতেন। কারণ, ক্রিকেটের আইনে সে রান নিতে কোনো বাধা নেই।
মোট ছয়টি টুইটে নিজের অবস্থানটা অশ্বিন ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘ফিল্ডার থ্রো করার সঙ্গে সঙ্গেই আমি রান নিতে দৌড় দিয়েছি, বল যে ঋষভের গায়ে লেগেছিল, সেটা জানতাম না। দেখতে পেলে কি রানটা নিতাম? অবশ্যই নিতাম, কারণ, এটা আমার অধিকার। আর মরগান আমাকে যেমন “কলঙ্ক”..., আমি কি তেমন কিছু? মোটেও না।’
‘আমি কি মারামারি করেছি? না, বরং নিজের অধিকার আদায় করতে চেয়েছি। আমার শিক্ষক এবং মা–বাবা এটাই শিখিয়েছেন, আপনারাও সন্তানদের এমন শিক্ষা দিন। মরগান বা সাউদির ক্রিকেট–জগতে কোনটা ভালো বা কোনটা মন্দ—তারা নিজেরা যা ইচ্ছা বিশ্বাস করতে পারে। তবে নৈতিকভাবে এগিয়ে থাকার অধিকার নেই তাদের, অবমাননাকর কোনো শব্দ ব্যবহার করার অধিকারও নেই।’
‘মজার ব্যাপার হলো, লোকে এখানে কে ভালো, কে মন্দ—সেটা আলাপ করছে! “ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা” ভাবা সবার জন্য বলি—লাখ লাখ ক্রিকেটারের অনেক অনেক চিন্তাভাবনা থাকে। যারা এখানে ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তাদের বলুন যে আপনাকে আউট করার উদ্দেশ্যে করা বাজে একটা থ্রো থেকে অতিরিক্ত রান আপনার ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করবে। আর নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে বাড়তি কিছু জায়গা চুরি করে রান নিলে আপনার ক্যারিয়ার ধসে পড়বে।’
‘রান নিতে না চাইলে লোকে আপনাকে ভালো বলবে, নন-স্ট্রাইকারকে সতর্ক না করলে বাজে বলবে—এসব বলে তাদের ধন্দে ফেলে দেবেন না। কারণ, যারা এসব বলছে, তারা এরই মাঝে অন্য কিছু করে রোজগার করে, তারা অন্য কোনো জায়গায় সফল।’
‘মাঠে সবকিছু উজাড় করে দিন, আইন মেনে খেলুন। ম্যাচ শেষে প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলান। আমার কাছে ক্রিকেটের একমাত্র চেতনা এটাই।’
এর আগে ‘মানকাড’ বা নন-স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে রানআউট করেও বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন অশ্বিন। ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী, এমন আউট করাটা বোলারের অধিকারের পর্যায়েই পড়ে। তবে সেটা ‘ক্রিকেটের চেতনা’র বিরোধী মনে করেন অনেকেই। অশ্বিন অবশ্য প্রকাশ্যেই বলে এসেছেন, আইনে আছে বলে এমন রান-আউট নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকা উচিত নয়।