গলে এমন ফল কখনো দেখেনি শ্রীলঙ্কা

সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রুট।
ছবি: টুইটার

এমন নয় যে গলে শ্রীলঙ্কা হারে না। গত সপ্তাহেই এই মাঠে ইংলিশদের কাছে হার মেনেছে তারা। দুই বছর আগেও ইংল্যান্ডের কাছে গলে হার মেনেছে লঙ্কানরা। তবু গলের মাঠের একটি রেকর্ড আশা দেখাচ্ছিল স্বাগতিকদের। টেস্টে এ মাঠে যে টানা দুই ম্যাচ কখনো হারেনি শ্রীলঙ্কা। সে রেকর্ড আজ দুমড়েমুচড়ে গেল।

শ্রীলঙ্কার মাটিতে ইংলিশদের দাপট দেখানো শুরু ২০১২ সাল থেকে। সেবার গলে টেস্ট হারের পর লঙ্কার মাটিতে আর কখনো হার দেখেনি তারা। সে দাপট আজও বজায় থাকল। গলে টানা দুই ম্যাচ জিতে করোনাকালের নতুন স্বাভাবিকের মাঝেও অতীতের দাপট ধরে রাখল ইংল্যান্ড।

গলে উইকেট উৎসবের এক দিনে ৬ উইকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিল ইংল্যান্ড। টানা দ্বিতীয়বারের মতো সফর করতে এসে শ্রীলঙ্কাকে ধবলধোলাই করল ইংল্যান্ড। এ সুখস্বাদ নিয়েই ভারতে যাচ্ছেন রুট ও তাঁর দল।

ডম বেস আরও একবার শ্রীলঙ্কাকে বিপাকে ফেলেছেন।
ছবি: এসএলসি

ম্যাচ ও সিরিজ সেরা জো রুটই হয়েছেন। প্রথম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় টেস্টেও ১৮৬ রানের এক ইনিংসে অন্য কাউকে সুযোগ দেননি। তবে আজ নায়ক তো নন, পার্শ্ব নায়কের চরিত্রেও ছিলেন না রুট। সকাল থেকেই সেই ভূমিকাগুলো তিন স্পিনার ও এক ব্যাটসম্যানের দখলে।

৩৩৯ রানে দিন শুরু করা ইংল্যান্ডকে আজ চতুর্থ দিনের শুরুতে আর ৫ রান করতে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ইংলিশদের ৩৭ রানের লিডই গলের উইকেট মহা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে হয়েছিল। লাসিথ এম্বুলদেনিয়ার ৭ উইকেট প্রাপ্তি এ উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে স্পিনারদের নিয়ে শ্রীলঙ্কার আশা বাড়াচ্ছিল। কিন্তু স্বাগতিক দলের সে আশা উড়ে গেছে আজ সকালের সেশনেই। ইংল্যান্ডের স্পিনাররাই বরং তৃতীয় ইনিংসেই নাচিয়ে ছেড়েছেন লঙ্কানদের।

প্রথম ইনিংসে প্রথম কোনো দল হিসেবে গলে ১০ উইকেটের সবগুলো পেসারদের নিতে দেখেছে ইংল্যান্ড। আজ দ্বিতীয় সেশনে পেস বোলাররা বল হাতে পেয়েছেন মাত্র ৪ ওভার। প্রথম ইনিংসে তিন উইকেট পাওয়া মার্ক উড তো বলই পাননি। লঙ্কান ইনিংসের ১০ উইকেটই এবার স্পিনারদের। তাতে একটা রেকর্ডও হলো। প্রথম ইনিংসে ১০ উইকেট পেসারদের, দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ উইকেট স্পিনারদের—টেস্ট ইতিহাস এমনটা দেখেছে এই প্রথমবার।

ভারতে যাওয়ার আগে ফর্ম ফিরে পেলেন সিবলি।
ছবি: এসএলসি

দুই স্পিনার ডম বেস ও জ্যাক লিচের দাপটে মধ্যাহ্নবিরতির আগেই ৬ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ড্রেসিংরুমমুখী এ যাত্রা মধ্যাহ্নভোজন শেষেও থামেনি। জো রুটও দুই ওভার বল করে কোনো রান না দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট! ৭৮ রানে ৮ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা যে শেষ পর্যন্ত ১২৬ করতে পেরেছে, এর পেছনে অবদান এম্বুলদেনিয়ার। নিজের বোলিংয়ের পুঁজি নিজেই বের করে নেওয়ার আশায় ৪২ বলে ৪০ রান তুলেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ১০–এ নামা এম্বুলদেনিয়ার পর দ্বিতীয় সর্বোচ স্কোর আরেক স্পিনার রমেশ মেন্ডিসের, ১৬!

তখন মনে হয়েছিল এ উইকেটে ১৬৪ রান তুলতে ঘাম ছুটে যাবে ইংল্যান্ডের। পঞ্চম ওভারে জ্যাক ক্রলিকে ফিরিয়ে শুরুটা করেওছিলেন এম্বুলদেনিয়া। কিন্তু সিরিজে প্রথমবাররের মতো দৃঢ়তা দেখালেন ওপেনার ডম সিবলি। দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাওয়ার জবাব দিতেই যেন নেমেছিলেন। অন্যদিকে বেয়ারস্টো (২৯), রুট (১১) ও লরেন্স (২) বিদায় নিলেও হাল ছাড়েননি।

৮৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবু এক প্রান্তে দাঁড়িয়েছিলেন সিবলি। আর অন্যদিকে স্বভাবসুলভ আক্রমণ চালিয়েছেন জস বাটলার। তাঁর ৪৮ বলে ৪৬ রানের ইনিংসেই এক দিন বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ হয়ে এসেছে। অন্যদিকে আগের তিন ইনিংসে ৬ রান পাওয়া সিবলি অপরাজিত ছিলেন ৫৬ রানে। ১৪৪ বলের ইনিংসে মাত্র ২টি চার মেরেছেন সিবলি। ওদিকে এম্বুলদেনিয়া ৭৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মতো ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
শ্রীলঙ্কাঃ
৩৮১ ও ১২৬ (এম্বুলদেনিয়া ৪০; বেস ৪/৪৯,লিচ ৪/৫৯, রুট ০/২)
ইংল্যান্ডঃ ৩৪৪ ও ১৬৪/৪ (সিবলি ৫৬*, বাটলার ৪৬*; এম্বুলদেনিয়া ৩/৭৩, মেন্ডিস ১/৪৮)
ফলঃ ইংল্যান্ড ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরাঃ জো রুট
সিরিজ সেরাঃ জো রুট

সিরিজঃ ২-০ ব্যবধানে জয়ী ইংল্যান্ড।