চলে গেলেন টেস্টে ছক্কা মেরে রানের খাতা খোলা প্রথম ব্যাটসম্যান

৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার এরিক ফ্রিম্যান।ছবি: টুইটার

চলে গেলেন এরিক ফ্রিম্যান। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার ৭৬ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন গত সোমবার রাতে। গত সপ্তাহে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ক্রিকেট ও অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়া ফ্রিম্যান।

১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১১টি টেস্ট খেলেছেন ফ্রিম্যান। এই ১১ টেস্টে ফ্রিম্যান উইকেট নিয়েছেন ৩৪টি। এমন সাদামাটা পরিসংখ্যানের খেলোয়াড়কে তবু মনে রেখেছে ক্রিকেট ইতিহাস। বলা ভালো, মনে রাখতে বাধ্য হয়েছে। ক্রিকেট পরিসংখ্যানের একটি পাতা যে যোগ হয়েছে ফ্রিম্যানের হাতে!

বোলিং নয়, টেস্ট অভিষেকে ব্যাট হাতেই ইতিহাস গড়েছিলেন ফ্রিম্যান। ১৯৬৮ সালে ব্রিসবেন টেস্টে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক তাঁর। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফ্রিম্যান নামেন ৮ নম্বরে। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলটিতে কোনো রান করতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় বলেই ভারতীয় বিখ্যাত অফ স্পিনার এরাপল্লি প্রসন্নকে ছক্কা মেরে দেন ফ্রিম্যান। ইতিহাস হলো তাতেই।

টেস্ট ক্রিকেটে ফ্রিম্যানের আগে কোনো ব্যাটসম্যান ছক্কা মেরে রানের খাতা খুলতে পারেননি। এরপর অবশ্য ওই কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন আরও ১১ ব্যাটসম্যান। যাঁদের চারজনই আবার বাংলাদেশের—শফিউল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, আল আমিন হোসেন ও কামরুল ইসলাম।

রুলস ফুটবলও ভালো খেলতেন এরিক ফ্রিম্যান।
সংগৃহীত ছবি

ফ্রিম্যান ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ইনিংসে ২৪ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় করেছিলেন ১৮ রান। পরে আসল কাজ বোলিংয়ে খারাপ করেননি, ভারতের প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৯.১৬ গড়ে ৩৪৫ রান করা ফ্রিম্যান বল হাতে ৩৩.১৭ গড়ে নিয়েছেন ৩৪ উইকেট। ১৯৭০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলেন ২৫ বছর বয়সী ফ্রিম্যান।

অস্ট্রেলীয় গ্রীষ্মে ক্রিকেট খেলা ফ্রিম্যান শীতকালটা কাটাতেন রুলস ফুটবল খেলে। রাগবি জাতীয় খেলাটার শীর্ষ পর্যায়েই খেলতেন তিনি। পোর্ট অ্যাডিলেডে যে পাঁচটি মৌসুম খেলেছেন, তাতে প্রতিবারই গোলকিকিং তালিকায় দলের সবার ওপরে ছিল তাঁর নাম। এই সময়ে ১১৬ ম্যাচে ৩৯০টি গোলকিকিং করেন ফ্রিম্যান।

অস্ট্রেলীয় গ্রেট গ্রেগ চ্যাপেলের (বাঁয়ে) সঙ্গে এরিক ফ্রিম্যান। চ্যাপেলের হাতে ফ্রিম্যানের আত্মজীবনী। ছবি: টুইটার

১৯৭৩–৭৪ মৌসুমে খেলা ছাড়ার পর ক্রীড়া প্রশাসক, কোচ ও ধারাভাষ্যে যুক্ত ছিলেন ফ্রিম্যান। খেলাধুলায় অবদানের জন্য ২০০২ সালে মেডেল অব দ্য অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া খেতাব দেওয়া হয় তাঁকে।

ফ্রিম্যানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান আর্ল এডিংস। ফ্রিম্যানকে সত্যিকারে অলরাউন্ডার হিসেবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তিনি, ‘সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের অন্যতম সেরা অ্যাথলেট হিসেবে এরিককে মনে রাখবে সবাই। সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন অলরাউন্ডার ছিলেন। ক্রিকেটে ব্যাট ও বল হাতে শক্তিমান ছিলেন, শীতকালে আবার ম্যাগপাইয়ের হয়ে কী অসাধারণ গোলকিকার হয়ে যেতেন।’