চেন্নাই সুপার কিংস: ধোনির জাদু আরেকবার?

আইপিএলে এবার আলো ছড়াবে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস?ছবি: এএফপি

আইপিএলের লিগ পর্ব থেকে বিদায় নিতে কেমন লাগে, মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস জানত না সেটা। গত মৌসুমে সে অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে দলটার। এবার যেন সে অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেটার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

গতবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সুরেশ রায়না খেলেননি, এবার ফিরেছেন তিনিও। সঙ্গে নিলামের মাধ্যমে দলে এসেছেন বেশ কিছু নতুন মুখ। সব মিলিয়ে চেন্নাই সুপার কিংসের অবস্থাটা ঠিক কেমন?

আসুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক আইপিএলের চতুর্দশ আসরে নিজেদের চতুর্থ শিরোপার খোঁজে নামতে যাওয়া চেন্নাই সুপার কিংসের খুঁটিনাটি।

গত মৌসুমটা ভালো কাটেনি চেন্নাইয়ের।
ছবি: টু্ইটার

সম্পূর্ণ স্কোয়াড

ব্যাটসম্যান
সুরেশ রায়না, ফ্যাফ ডু প্লেসিস, রবিন উথাপ্পা, অম্বাতি রাইড়ু, চেতেশ্বর পূজারা, রুতুরাজ গায়কোয়াড়, ভগত ভার্মা, হরি নিশান্ত

পেসার
দীপক চাহার, লুঙ্গি এনগিদি, শার্দুল ঠাকুর, কে এম আসিফ, হরিশংকর রেড্ডি

স্পিনার
ইমরান তাহির, মিচেল স্যান্টনার, করণ শর্মা, রবিশ্রীনিবাসন সাই কিশোর

অলরাউন্ডার
ডোয়াইন ব্রাভো, মঈন আলী, স্যাম কারেন, রবীন্দ্র জাদেজা, কৃষ্ণপ্পা গৌতম\

উইকেটকিপার
মহেন্দ্র সিং ধোনি, নারায়ণ জগদীশান

ধোনি-জাদেজারা অনেকদিন ধরে একসঙ্গে খেলছেন চেন্নাইতে।
ছবি: আইপিএল

শক্তি

কোনো ধরনের সন্দেহ ছাড়াই চেন্নাই সুপার কিংসের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হলো তাদের অভিজ্ঞতা। ধোনির পাশাপাশি রায়না, জাদেজা, ব্রাভো, ডু প্লেসিস, তাহির, রাইড়ু, চাহার বেশ কয়েক মৌসুম ধরে একসঙ্গে খেলছেন। এ কারণে নিজেদের মধ্যে রসায়ন দুর্দান্ত তাঁদের। এ ছাড়া মঈন আলী, রবিন উথাপ্পা, পূজারা—প্রত্যেকেই পোড় খাওয়া যোদ্ধা, তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হোক কিংবা আইপিএলে। ম্যাচের যেকোনো পরিস্থিতির মধ্য থেকে এ অভিজ্ঞতার কারণেই রক্ষা পেয়ে যেতে পারে চেন্নাই।

মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। তর্কযোগ্যভাবে ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষুরধার এই মস্তিষ্কের হাত ধরেই সাফল্য পেয়েছে চেন্নাই। এবারও তাঁর ক্ষিপ্রতা ও বুদ্ধিদীপ্ততার দিকেই তাকিয়ে থাকবে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।

গতবার ডেপুটি রায়না ছিলেন না, এবার তিনিও আছেন। মিডল অর্ডারে রানের চাকা সচল রাখার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী দুই-এক ওভার স্পিন বোলিং করে থাকেন রায়না। নিজেদের ‘হোম গ্রাউন্ড’ চিপকের মতো স্পিনবান্ধব মাঠ হওয়ার কারণে চেন্নাইয়ের স্পিন শক্তি বরাবরই সনীহ জাগানিয়া, এবারও তাঁর ব্যতিক্রম নয়।

দুই বিদেশি ইমরান তাহির ও মিচেল স্যান্টবারের পাশাপাশি দেশীয় স্পিনার করণ শর্মা ও রবিশ্রীনিবাসন সাই কিশোর বাড়াবেন চেন্নাইয়ের স্পিন শক্তি। শুধু তা–ই নয়, অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা, মঈন আলীও আছেন; যারা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বেশ কার্যকর স্পিন বোলিং করতে পারেন। এমনকি ৯ কোটি ২৫ লাখ রুপি খরচ করে যে কৃষ্ণপ্পা গৌতমকে কেনা হয়েছে, তিনিও স্পিনিং অলরাউন্ডার। ফলে স্পিন বোলিং নিয়ে অন্তত চেন্নাইয়ের চিন্তা নেই। ডানহাতি, বাঁহাতি অফস্পিনার, লেগস্পিনার—সবই আছে চেন্নাইয়ের সংগ্রহে।

দুর্বলতা

চেন্নাইয়ের শক্তির দিকগুলো কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলতাও বটে। ধোনি, ব্রাভো, রাইড়ু, উথাপ্পা, রায়না, তাহিররা দলটাকে অভিজ্ঞতা দিলেও এটা স্বীকার করতে আপত্তি নেই, চেন্নাই বেশ বুড়িয়ে যাওয়া দল। খেলোয়াড়দের গড় বয়স ৩৩–এর চেয়ে বেশি।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এখন খেলোয়াড়দের কাছ থেকে যেমন ক্ষিপ্রতা আশা করা হয়, চেন্নাইয়ের খেলোয়াড়েরা সেই পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারবেন কি না, প্রশ্ন থেকেই যায়। ধোনি, রায়না, ব্রাভো, রাইড়ুদের হাত ধরে অতীতে চেন্নাইয়ের সাফল্য এলেও আস্তে আস্তে তাঁদের যে নতুন যুগে প্রবেশ করতে হবে, সে ব্যাপারে এখনো তাঁদের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই।

রুতুরাজদের জ্বলে উঠতে হবে।
ছবি: আইপিএল

যে কারণে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী দলটায় হয়তো এক রবীন্দ্র জাদেজা ছাড়া আর কেউ চেন্নাই সুপার কিংস থেকে সুযোগ পাবেন না।

রুতুরাজ গায়কোয়াড়, কৃষ্ণপ্পা গৌতম, নারায়ণ জগদীশান—প্রত্যেকের প্রতিভা থাকলেও, এখনো আনকোরাই বলা যায় তাঁদের। আধুনিক যুগে যাঁরা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আলো ছড়াচ্ছেন, তাঁদের মোটামুটি কেউই চেন্নাইতে খেলেন না, বলাই যায়।

মহেন্দ্র সিং ধোনি চেন্নাইয়ের সবচেয়ে শক্তির জায়গা হলেও অন্তত গত মৌসুমে বোঝা গেছে, দলের অন্যতম চিন্তার জায়গাও সেই ধোনি। আগের মতো পরিস্থিতির দাবি মেনে আর ব্যাট করতে পারেন না, এই ধোনি এখন আরও বেশি সাবধানী। উইকেট বাঁচিয়ে খেলতে গিয়ে স্ট্রাইক রেট বাড়াতে পারেন না, উলটো ঝামেলায় পড়ে যায় চেন্নাই। তবে এ ধরনের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করে কেউ যদি উন্নতি করতে চান, সেটা ধোনিই ভালো পারবেন নিঃসন্দেহে।

চেন্নাইয়ের সম্ভাব্য একাদশ :

ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, ফ্যাফ ডু প্লেসিস, সুরেশ রায়না, স্যাম কারেন, মঈন আলী, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রবীন্দ্র জাদেজা, কৃষ্ণপ্পা গৌতম, দীপক চাহার, শার্দুল ঠাকুর, লুঙ্গি এনগিদি

টপ অর্ডারে সেভাবে ঝড় তোলার কেউ নেই চেন্নাইয়ে আপাতত। শেন ওয়াটসনের অনুপস্থিতি এখনো ভোগাচ্ছে দলটাকে। নতুন গায়কোয়াড়ের সঙ্গে ফ্যাফ ডু প্লেসিস সে সমস্যা কতটুকু মেটাতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।

আগেই বলা হয়েছে, চেন্নাইয়ের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হলো স্পিন। কিন্তু এবার ঘরের মাঠে খেলতে পারবে না তারা, খেলবে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে; যে স্টেডিয়াম পেসারদেরও স্বর্গরাজ্য হয়ে যায় মাঝেমধ্যে। এই পিচে ভালো করতে হলে যেকোনো দলকে অবশ্যই পেস শক্তিতে বলীয়ান হতে হবে। চেন্নাইয়ের সেই শক্তি আছে কি না, প্রশ্ন তোলাই যায়।

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়ান পেসার জশ হ্যাজলউড স্কোয়াড থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। ফলে চিন্তা আরও বেড়েছে চেন্নাইয়ের। দীপক চাহারের সুইংয়ের সঙ্গে গত মৌসুমে আলো ছড়ানো স্যাম কারেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার লুঙ্গি এনগিদি আর দেশীয় শার্দুল ঠাকুরের ওপরেই পেস নিয়ে ভরসা করতে হবে চেন্নাইকে।