চোখের জল ও ১৬ বলে শেষ রস টেলরের ১৬ বছরের গল্প

আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি টেলরছবি: এএফপি

সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই কঠিন, এরপরের কাজটা সহজ—বলেছিলেন তিনি নিজেই। ম্যাচের আগে জাতীয় সংগীত বাজানোর অনুরোধ নিজেই করেছিলেন। কিন্তু আজ যখন শেষবারের মতো ক্রিকেট মাঠে ‘ঈশ্বর নিউজিল্যান্ডকে রক্ষা করুন’ গাইছিলেন, তখন বারবার থেমে যেতে হচ্ছিল, চোখের জল সামলাতে মুখ বন্ধ করে ফেলতে হচ্ছিল লুতেরু রস পুতোয়া লোতে টেলরকে। আজ হ্যামিলটনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষবারের মতো দেখা যাচ্ছে রস টেলরকে।

তিন ওয়ানডের সিরিজের শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলছে নিউজিল্যান্ড। ব্ল্যাক ক্যাপসের জার্সিতে ১৬ বছর পার করা টেলর নিজের শেষ ইনিংসে ঠিক ১৬ বলই খেলেছেন। লোগান ফন বিককে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বোলারের হাতেই ধরা পড়া টেলর নিজের শেষ ইনিংসে ফিরেছেন ১৪ রানে। নিউজিল্যান্ডের গড়া ৩৩৩ রানের পাহাড় অবশ্য টি-টোয়েন্টি ও টেস্টের পর ওয়ানডেতেও জয় দিয়েই টেলরের বিদায় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে।

নামার সময় প্রতিপক্ষের গার্ড অব অনার পেয়েছেন, নিজের বিদায়ী ওয়ানডে ইনিংসে টেলর করেছেন ১৪ রান। ক্রাইস্টচার্চে বিদায়ী টেস্ট ইনিংসেও বাংলাদেশের কাছ থেকে একই রকম গার্ড অব অনার পেয়েছিলেন। কাকতালই হবে, সেদিন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান করেছিলেন আজকের রানের ঠিক দ্বিগুণ। নিজের শেষ ম্যাচে আরও ভালো অবদান রাখার ইচ্ছা ছিল তাঁর, ‘আপনি শুধু অবদান রাখার চেষ্টা করতে পারেন। শেষবারের মতো সব উপভোগ করতে পারেন। এ নিয়ে খুব বেশি না ভাবার চেষ্টা করাই ঠিক। মুহূর্তটা উপভোগ করা এবং সম্ভব হলে অবদান রাখা। আমার শেষ ম্যাচে ব্যাটিং করি বা ফিল্ডিং, চাইছি, সবকিছু শেষবারের মতো উপভোগ করতে।’

গার্ড অব অনার পেয়েছেন টেলর
ছবি: এএফপি

তাঁকে অবশ্য আজ খুব বেশি অবদান রাখার সুযোগ দেননি দলের অন্য ব্যাটসম্যানরা। চারে ব্যাট করতে পছন্দ করেন টেলর। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বন্ধু মার্টিন গাপটিল ও উইল ইয়ংয়ের ২০৩ রানের জুটিই টেলরের আজ বড় ইনিংস খেলার সম্ভাবনা মুছে দিয়েছে। গাপটিলের ১০৬ রানের ইনিংস থামার পর নেমেছিলেন। ফিরে গেছেন ১২০ রান করা উইল ইয়ংয়ের আগেই।

শেষ ইনিংস বড় করতে না পারা নিয়ে অবশ্য আক্ষেপ থাকার কথা নয় ৩৮ বছর বয়সী টেলরের। আজ নিজের ৪৫০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যখন নামছেন, তখন তাঁর নামের পাশে দারুণ সব কীর্তি। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন সংস্করণেই ১০০ ম্যাচ খেলেছেন। টেস্টে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ওয়ানডেতেও তা-ই, এ ফরম্যাটে দেশটির হয়ে সবচেয়ে বেশি শতকও তাঁর। এত এত সব স্মৃতি নিয়ে যখন তিন সন্তান—ম্যাকেঞ্জি, জন্টি ও অ্যাডিলেডকে নিয়ে আজ দেশের জাতীয় সংগীত শুনছিলেন, তখন কান্না আটকাতে পারেননি।

ম্যাচের আগে যদিও বলছিলেন, এভাবে খেলাকে বিদায় জানানো, এত দিনের সঙ্গীদের সঙ্গে আর মাঠে না নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর জন্য কত কঠিন ছিল, ‘এ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোই ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার পর ব্যাপারটা অত খারাপ লাগাচ্ছে না। অবশ্যই, আমি অনেক মিস করব, আমার সতীর্থদের অভাববোধ করব।’

জাতীয় সংগীতের সময় তাঁর তিন সন্তান ছিল মাঠে। গ্যালারিতেও আজ পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন টেলর। স্ত্রী ভিক্টোরিয়া তো আছেনই, পরিবার-বন্ধুবান্ধব—সবাই আজ হাজির হয়েছেন তাঁকে বিদায়ী সম্মান জানাতে।

আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরছেন টেলর, এমন কিছু আর দেখা যাবে না
ছবি: এএফপি

স্পার্ক স্পোর্টের সঙ্গে আজ ম্যাচের আগের কথোপকথনে এ নিয়ে টেলর বলছিলেন, ‘মিথ্যা বলব না, নিশ্চিতভাবেই অনেক আবেগ থাকবে। অনেক টিকিট বিতরণ করতে হয়েছে আমাকে, এতে কিছুটা ব্যস্ত থাকায় ভালো হয়েছে। কিছু রাজমিস্ত্রির সঙ্গে দেখা হয়েছিল, হাতে কিছু বাড়তি টিকিট ছিল। ওরাও আগেভাগে কাজ শেষ করে খেলা দেখতে আসছে। বেশ ভালো কয়েকটা দিন ছিল।’

আজ ক্যারিয়ারের ৪৫০তম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন টেলর। ১৬ বছর ধরে দেশের জার্সিতে খেলেছেন, অনেক দীর্ঘ সময়। এত লম্বা না হয়ে মাত্র এক দিনের জন্যও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করলেও নাকি তৃপ্তি নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ হতো তাঁর, ‘আমি বেশ কিছু বিশ্বমানের খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলেছি, কিছু বিশ্বমানের দলেও খেলেছি। আমি নিশ্চিত, যখন অবসর নেব, তখন বেশ কিছু সুখস্মৃতি থাকবে। আপনারা জানেন, অনেক চড়াই-উতরাই ছিল, কিন্তু এতে আমি গর্বিত। আজ ৪৫০তম ম্যাচ খেলতে নামছি, আমি একটি হলেই খুশি থাকতাম।’