ছেলেদের ২১ ছাড়িয়ে মেয়েদের ২২

দুর্দান্ত এক রেকর্ড গড়ল অস্ট্রেলিয়া।
ছবি: টুইটার

কথাটা কানেই তুলতে চাইছিলেন না মেগ ল্যানিং, অ্যালিসা হিলিরা। এমন উপলক্ষ থাকলে বরাবরই আলোচনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলতে রাজি হচ্ছিলেন না তাঁরা। শোনাচ্ছিলেন সেই সব আপ্তবাক্য—‘রেকর্ডের কথা ভাবছি না’, ‘রেকর্ডের জন্য কেউ খেলে না’। আজ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে দাপটের সঙ্গে হারানোর পরই তাঁদের আসল অনুভূতিটা টের পাওয়া গেল। অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা স্বীকার করলেন, এমন কিছু অর্জন করতে পারার অনুভূতি বিশেষ কিছু।

মেয়েদের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ানদের দাপট কেমন, সেটা আজ আবার টের পাওয়া গেল। নিউজিল্যান্ডের মেয়েদের দেওয়া ২১৩ রানের লক্ষ্য ৬৯ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে পার করেছে অস্ট্রেলিয়া। সে সুবাদেই দাপুটে ক্রিকেটের স্বীকৃতি হিসেবে অনন্য এক রেকর্ড দখলে নিয়ে নিল দলটি। রিকি পন্টিংয়ের সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়ান দলের যে কীর্তি আর কেউ ছুঁতে পারবে না বলে ভাবা হয়েছিল, টানা জয়ের সে রেকর্ডটা নিজেদের দখলে নিয়ে নিলেন মেগ ল্যানিংরা। ওয়ানডেতে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতার রেকর্ড এখনো অস্ট্রেলিয়ারই থাকছে, তবে সেটি এখন মেয়েদের দলের দখলে।

পন্টিংদের সে দলের রেকর্ড পেছনে চলে গেল আজ।
ছবি: ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার এই দল কেন এমন দাপুটে, সেটা আজ আবার তারা বুঝিয়ে দিয়েছে। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আজ ঘরের মাঠে একপর্যায়ে ২ উইকেটে ১৫৯ রান তুলে ফেলেছিল নিউজিল্যান্ড। সে অবস্থা থেকে ১১ ওভারের মধ্যে মাত্র ৫৩ রানে প্রতিপক্ষের ৮ উইকেট তুলে নিয়েছেন মেগান শুট ও নিকোলা ক্যারিরা। তাড়া করতে নামা অস্ট্রেলিয়াকে দেখে কখনো মনে হয়নি দলটি পরাজয়ের শঙ্কায় আছে। ৩৭ রানের মধ্যে র‍্যাচেল হেইনেস ও অধিনায়ক ল্যানিং ফেরার পরও না। স্বভাবসুলভ আক্রমণ চালিয়ে গেছেন হিলি। এলিসা পেরি নিয়েছিলেন দলকে থিতু করার দায়িত্ব।

ইনিংসের মাঝপথে হিলি (৬৮ বলে ৬৫ রান) ফিরে গেলেও নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায়নি। পেরিকে (৫৬*) এক পাশে রেখে ঝোড়ো ফিফটিতে ম্যাচ শেষ করে এনেছেন অ্যাশলি গার্ডনার। ৪১ বলে ৫৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন গার্ডনার।
তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পরই কেবল রেকর্ড নিয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখালেন হিলি, ‘আমার ধারণা এখন কথা বলাই যায়। এটা অনন্য এক অনুভূতি এবং আমি নিশ্চিত এই রেকর্ড কেউ হালকাভাবে নিচ্ছে না। এটা ভাঙার জন্য দারুণ এক রেকর্ড। বিশেষ রেকর্ড। এই রুমে থাকা অনেকেই, বিশেষ করে আমি রিকি পন্টিংকে আদর্শ মেনে বড় হয়েছি। আমি তাঁর মতোই ব্যাট করতে এবং খেলতে পছন্দ করি।’

অ্যালিসা হিলি, বেথ মুনি, অ্যাশলি গার্ডনার, র‍্যাচেল হেইনেস—চারজনই ২২ জয়ের সঙ্গী।
ছবি: টুইটার

আজকের এই জয় ওয়ানডেতে হিলি-পেরিদের টানা ২২তম। ওয়ানডে ক্রিকেটে এত দিন টানা জয়ের রেকর্ডটি ছিল রিকি পন্টিংদের। ২০০৩ সালে টানা ২১ ম্যাচে জয় পেয়েছিলেন পন্টিংরা। এর মধ্যে ১১টি ম্যাচ ছিল ২০০৩ বিশ্বকাপের অংশ। অদম্য সেই অস্ট্রেলিয়া দল বিশ্বকাপে গিয়েছিল টানা ছয় ওয়ানডে জয়ের স্বাদ নিয়ে। বিশ্বকাপের পরও দলটির জয়রথ ছুটেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও টানা চার ম্যাচ জেতা অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ডটা শেষ হয়েছিল বেশ চমকপ্রদভাবে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সাত ম্যাচের সেই সিরিজের প্রথম চার ম্যাচ জিতে সিরিজ জেতা অস্ট্রেলিয়া সিরিজের বাকি তিন ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল!

হিলিদের স্বপ্নযাত্রাও নিশ্চয় কোনো না কোনো দিন শেষ হবে। আপাতত এ নিয়ে নয়, বরং অর্জনটা উপভোগ করায় মন দিচ্ছেন এই উইকেটকিপার। রেকর্ড হওয়ার আগ পর্যন্ত এ নিয়ে কথা না বলে যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, সেটার ফল ভোগ করতে চান আজ, ‘আমাদের সবার জন্য পন্টিংয়ের দলের রেকর্ড ভাঙাটা বিশেষ কিছু। কোনো সন্দেহ নেই যখন ড্রেসিংরুমে যাব এবং আমাদের ফোন চালু করব, তখন এ নিয়ে বেশ হাসি-উল্লাস হবে। আমরা আসলেই এ নিয়ে এত দিন কথা বলিনি কিন্তু সবার মুখেই এ ব্যাপারে হাসি ছিল।’