জন্মদিনে এমন কীর্তি শুধু তাঁরই আছে

ওয়ানডেতে এ পর্যন্ত নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন ল্যাথামছবি: এএফপি

যখন ক্রিজে নেমেছেন, ৮ ওভার পুরো শেষ না হতেই ৩০ রানে ৩ উইকেট পড়ে গেছে নিউজিল্যান্ডের। ৪ বল পর রস টেলরও ফিরে যেতে স্কোরটা ৩১/৪। তার ৭ বল পর ৩২/৫। টম ল্যাথাম বুঝি প্রমাদ গুনছিলেন। জন্মদিনটা এভাবে বিস্বাদ হয়ে যাবে!

হয়নি, বরং কেকটা এখন আরও মিষ্টিই লাগার কথা নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের। শতক পেয়েছেন, তাতে শেষ পর্যন্ত ২৬৪ রান করার পর দল জিতেছে ১১৮ রানে। ৩০তম জন্মদিনে অনন্য এক কীর্তিও গড়েছেন ল্যাথাম।

ওয়ানডেতে জন্মদিনে শতক পাওয়া ব্যাটসম্যানই ল্যাথামকে নিয়ে পাঁচজন। এর আগে জন্মদিনে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড ছিল ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের, সেটি ভেঙেছেন ল্যাথাম। তবে জন্মদিনে তিন অঙ্ক পেরোনো অন্য চারজনের চেয়ে একটা জায়গায় ল্যাথাম আলাদা। আগের চারজনের কেউ-ই যে সে সময়ে দলের অধিনায়ক ছিলেন না। তার ওপর ল্যাথামের ১২৩ বলে ১৪০ রানের ইনিংসটি তাঁর ১০৪৩ম ওয়ানডের ক্যারিয়ারেরও সর্বোচ্চ!

এত কিছু বলা হলো, ম্যাচটা কোথায়, কার সঙ্গে খেলেছে নিউজিল্যান্ড, সেটাই বলা হলো না। বলতে পারেন, নাটকীয়তা ধরে রাখার উদ্দেশ্যেই। ল্যাথামনামার কিছু না জেনে থাকলে হয়তো ভাবতেন, নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ বুঝি অস্ট্রেলিয়া-ভারত-পাকিস্তান-ইংল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মানের কোনো দল ছিল, মোটেও তা নয়। হ্যামিল্টনে আজ নিউজিল্যান্ড ম্যাচটা খেলেছে পুঁচকে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে।

দারুণ তিন জুটিতে ইনিংস গড়া ল্যাথাম শেষদিকে ছিলেন আগ্রাসী
ছবি: এএফপি

তিন ওয়ানডের সিরিজের প্রথম ম্যাচে গত মঙ্গলবার ৭ উইকেটের সহজ জয় পাওয়া নিউজিল্যান্ড আজ ১১৮ রানের জয়ে সিরিজ জিতে গেছে। অবশ্য সেটিই তো হওয়ার কথা! তবে এত সহজে হলে সম্ভবত এ ম্যাচ নিয়ে কারও মাথাব্যথা থাকত না। ম্যাচটা শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছে ল্যাথামের কীর্তি আর সেটি যে পরিস্থিতিতে এসেছে, সে কারণে।

অবশ্য পরিস্থিতিটা যে নিউজিল্যান্ডের জন্য আরও খারাপ বানাতে পারেনি, সে জন্য নিজেদেরই দুষবে নেদারল্যান্ডস। ১১তম ওভারে মিড অনে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের ক্যাচ হাতছাড়া করে নেদারল্যান্ডস। তার কিছুক্ষণ আগেই ক্রিজে নামা ল্যাথাম তখনো ৭ বল খেলে রানশূন্য, ওই ক্যাচ মিসে এক রান নিয়ে রানের খাতা খুলেছেন ডি গ্র্যান্ডহোম। লগান ফন বিক আর ফ্রেড ক্লাসেনের তোপে নিউজিল্যান্ডের রান তখন ৫ উইকেটে ৩২। সেখানেই উইকেটটা পড়ে গেলে কী হতো কে জানে!

ল্যাথামের সঙ্গে ৯০ রানের জুটিতে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন ব্রেসওয়েল
ছবি: এএফপি

গ্র্যান্ডহোম যে বড় ইনিংস খেলে ফেলেছেন, তা নয়। ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হচ্ছেন, তাঁর নামের পাশে ৪০ বলে ১৬ রান। কিন্তু তাঁর রানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সম্ভবত এটি যে নিউজিল্যান্ড ততক্ষণে ঘুরে দাঁড়ানোর ভিত্তি পেয়ে গেছে। ল্যাথাম ততক্ষণে ক্রিজে সেট হয়ে গেছেন। গ্র্যান্ডহোম ফেরার সময়ে নিউজিল্যান্ডের রান ৮৯/৬, গ্র্যান্ডহোমের সঙ্গে ৭৯ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়ে ফেলা ল্যাথামের ৪২ বলে ৩৭।

এরপর? অনেকের চোখে ১৯৮৩ বিশ্বকাপে কপিল দেবের সেই ঐতিহাসিক ইনিংস মনে করিয়ে দেওয়া ব্যাটিং ল্যাথামের। ৬ চারে ৬২ বলে অর্ধশতক হলো তাঁর, পরের ৫০ এল ৩৯ বলে ৩ চার আর ১ ছক্কায়। সে পথে সপ্তম উইকেটে ডগ ব্রেসওয়েলের (৫১ বলে ৪১ রান) সঙ্গে গড়লেন ৯০ রানের জুটি, অষ্টম উইকেটে ইশ সোধির সঙ্গে জুটিটা হলো ৪২ রানের।

নেদারল্যান্ডসের ফন বিক চার উইকেট নিয়েছেন
ছবি: এএফপি

শেষ পর্যন্ত ল্যাথাম অপরাজিতই থাকলেন, নিউজিল্যান্ডের রান ৫০ ওভার শেষে হলো ৯ উইকেটে ২৬৪। ওয়ানডেতে এর বেশি তাড়া করে নেদারল্যান্ডসের জয়ের রেকর্ডই আছে একটি, তা-ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (২৯০ রান তাড়া করে, ২০১৯ সালে)।

এ বেলায় আর সেটি হলো না। তিন অঙ্কে যেতে পেরেছেন শুধু তিন ব্যাটসম্যান, সর্বোচ্চ ৩৭ রান বাস ডি লিডের। ১৪৬ রানেই অলআউট হয়ে বিশাল ব্যবধানে হারের পর নেদারল্যান্ডসের হয়তো আফসোস, গ্র্যান্ডহোমের ক্যাচ হাতছাড়া করার ওই ছোট ভুলটা না করলে দিনটা অন্যরকম হতে পারত!

উল্টো ল্যাথামের জন্মদিনটা হয়ে থাকল ল্যাথামের অনন্য রেকর্ডের দিন।