জন্মভূমি ভারতের বিপক্ষেই রেকর্ড করলেন এজাজ

ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়লেন এজাজ প্যাটেলছবি: এএফপি

জিম লেকার অভিনন্দন জানাতে পারেননি। সে সুযোগ নেই। ৩৫ বছর আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন এই ইংরেজ, তবে অনিল কুম্বলে দেরি করেননি।

টেস্টে ‘ইনিংসে ১০ উইকেট’-এর ক্লাবে নবীনতম সদস্যকে সঙ্গে সঙ্গেই অভিনন্দন জানান কুম্বলে। তাঁর টুইট, ‘এজাজ প্যাটেলকে ‘‘পারফেক্ট ১০”–এর ক্লাবে স্বাগত। দারুণ বল করেছ। টেস্টের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের মধ্যে এটা করা খুব কঠিন।’

কঠিন? সে তো বটেই! টেস্ট ক্রিকেটে ১৪৪ বছরের ইতিহাসে এর আগে ‘পারফেক্ট ১০’-এর ক্লাবে নাম লেখাতে পেরেছেন মাত্র দুজন বোলার—১৯৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লেকার ও ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে কুম্বলে।

আজ এ তালিকায় দুই কিংবদন্তির পাশে বসলেন নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল। মুম্বাই টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে তাঁর বোলিং ফিগার-১০/১১৯!

ঘরের বাইরে প্রথম বোলার হিসেবে এ কীর্তি গড়লেন এজাজ প্যাটেল

এজাজের এমন পারফরম্যান্সের পর ভারতীয় সমর্থকদের কেউ কেউ তাঁকে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ বলে ডাকতেও পারেন! ভারতীয় সমর্থকেরা খেলার প্রতি যেমন আবেগপ্রবণ, তাতে এমন কথা বলাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

এজাজ ইউনুস প্যাটেলের জন্ম যে ভারতেরই মুম্বাইয়ে, যেখানে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট চলছে। এই টেস্টে মাঠে নামার সময়ই বিরল এক তালিকায় নাম লেখান তিনি। ভারতে জন্ম নিয়ে ভারতেরই মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে নিজের জন্ম শহরে টেস্ট খেলা দ্বিতীয় ক্রিকেটার এজাজ প্যাটেল।

এ তালিকায় প্রথমজন কিংবদন্তি। সেই যে ‘বডিলাইন সিরিজ, লেগ সাইডে ব্যাঙের ছাতার মতো ফিল্ডার সাজানো, তাতে ‘বধ’ ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া—বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত, যা–ই বলুন না কেন, সেই সিরিজ ঘিরে একটা নামই উঠে আসে সবার আগে। ডগলাস জার্ডিন!

ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি এ পেসারের জন্মও ভারতের মুম্বাইয়ে। ১৯৩৩ সালে ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্ব দেন জার্ডিন। সেই টেস্টও হয়েছিল মুম্বাইয়ে। ইংল্যান্ডের ৯ উইকেটে জয়ের সে ম্যাচে বল করেননি ৩৩ বছর বয়সী জার্ডিন। এজাজ তাই অন্তত এখানে জার্ডিনের চেয়ে এগিয়ে।

স্ত্রীর সঙ্গে ডগলাস জার্ডিন
ছবি: ইএসপিএনক্রিকইনফো

শুধু সেখানে কেন, এজাজ এখন এ তালিকার একটি জায়গায় সবার ওপরে। জন্মভূমির বিপক্ষে জন্মভূমিতেই টেস্ট খেলতে নেমে সেরা বোলিং ফিগার এখন এজাজের। এত দিন এ তালিকায় সবার ওপরে ছিলেন পাকিস্তানের করাচিতে জন্ম নেওয়া ভারতের সাবেক পেসার গুলাব্রাই রামচাঁদ।

১৯৫৫ সালে করাচি টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসে ৪৯ রানে ৬ উইকেট নেন রামচাঁদ। একই তালিকায় ৬ উইকেট আছে আরও দুজনের—২০০২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যান্ড্রু ক্যাডিক (ইংল্যান্ড, ৬/৬৩) ও ১৯৯০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডেভন ম্যালকম (ইংল্যান্ড, ৬/৭৭)।

ক্যারিয়ারের ১১তম টেস্টে এসে ‘পারফেক্ট ১০’-এ নাম লেখালেন এজাজ প্যাটেল। তাঁর আগেই এই তালিকায় নাম লেখাতে পারতেন আরও এক প্যাটেল। ১৯৫৫ সালে করাচিতে যে টেস্টে ৬ উইকেট নেন রামচাঁদ, সে ম্যাচেই ভারতের হয়ে অভিষেক ঘটেছিল জসুভাই প্যাটেলের।

সাবেক এ অফ স্পিনার চার বছর পর কানপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংসে ৬৯ রানে নেন ৯ উইকেট। সে যা–ই হোক, যে প্যাটেল আজ কুম্বলে-লেকারদের ক্লাবে নাম লেখালেন তিনি একটি জায়গায় তাঁর দুই পূর্বসূরীর তুলনায় অনন্য—ঘরের বাইরে প্রথম বোলার হিসেবে ইনিংসে নিলেন ১০ উইকেট। সেটাও প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টের প্রথম ইনিংসে! অর্থাৎ, উইকেট যখন পুরোপুরি স্পিনবান্ধব হয়নি তখন এই কীর্তি গড়েছেন এজাজ প্যাটেল। কুম্বলের টুইটের অর্থটা এখন পরিষ্কার।

ঘরের বাইরে এর আগে ইনিংসে ১০ উইকেট নিতে না পারলেও ২৮ রানে ৯ উইকেট নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি পেসার জর্জ লোহম্যান। ১৮৯৬ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৮ রানে ৯ উইকেট নেন লোহম্যান।