জাতীয় দল ছেড়ে আইপিএলে? তাহলে বিদায়!

আইপিএল থেকে মোটা টাকা আয় করে থাকেন বাটলার–মরগানরা।ছবি: টুইটার

বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটারদের যেন একটা বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছে আইপিএল।
ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে টাকা উড়ে বেড়ায়, পাশাপাশি এর গ্ল্যামার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তারকার মেলা মিলিয়ে অন্য রকম একটা আকর্ষণ তো আছেই।

কিন্তু সেটির জন্য জাতীয় দলে খেলা বাদ দিতে হলে তখন কী করবেন ক্রিকেটাররা? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচিতে অনেকেরই তো আইপিএলের আগে-পরে অন্য অনেক টুর্নামেন্ট থাকে। করোনার এই সময়ে কোয়ারেন্টিন, সূচিজট মিলিয়ে আইপিএল আর জাতীয় দলের খেলা নিয়ে ঝামেলাটা আরও বেড়েছে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ বাদ দিয়ে সাকিব আল হাসানের আইপিএল খেলতে চাওয়া নিয়ে কদিন আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটেই কত আলোচনা-সমালোচনা হলো! অন্য দেশগুলোতেও ব্যতিক্রম নয়। ইংল্যান্ডেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে অনেক।

আর এ নিয়ে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনের মত, জাতীয় দলের চেয়ে আইপিএলকে কোনো ক্রিকেটার অগ্রাধিকার দিলে তাঁকে বিদায় জানিয়ে ইংল্যান্ড দলের দরজা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

এউইন মরগান, বেন স্টোকস, মঈন আলী, ‘কারেন ব্রাদার্স’—স্যাম ও টম কারেন...আর ৭ দিন পর শুরু হতে যাওয়া ২০২১ আইপিএলে খেলবেন ইংল্যান্ডের অনেক তারকা। এখানে ঝামেলাটা হচ্ছে, ২ জুন থেকে লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের দুই টেস্টের সিরিজ শুরু। এদিকে আইপিএল শেষ হবে ৩০ মে।

আইপিএলে কোনো ইংলিশ ক্রিকেটারের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত গেলে, সেই ক্রিকেটারের পক্ষে আইপিএল শেষে ইংল্যান্ডে ফেরার সময়ই সেভাবে থাকবে না, কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষ করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নামা তো দূরের ব্যাপার! ‘আইপিএল না জাতীয় দল’ বিতর্কটা তাই ফিরছেই! বিতর্কে নিজের মতটা ভন জানিয়েছেন ইংলিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফে লেখা কলামে।

আইপিএলের প্রতি আকর্ষণের কারণে ক্রিকেটাররা জাতীয় দলের চুক্তি ফিরিয়ে দিতে পারেন—ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) এমন ধারণা নিয়ে ভনের কলামে ছিল শ্লেষ, ‘ইংল্যান্ড যদি ভেবে থাকে যে আইপিএলের কারণে (আইপিএলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে) ক্রিকেটাররা কেন্দ্রীয় চুক্তি ফিরিয়ে দেবে, তাহলে এটা তাদের ভ্রম। অ্যাশলি জাইলস (ইসিবির ক্রিকেট পরিচালক) এই সপ্তাহে বিবিসিতে আমার অনুষ্ঠানে বললেন যে আইপিএলের কারণে তাঁরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে পায়ে পা বাঁধিয়ে লড়াই করবেন না, কারণ সে ক্ষেত্রে আমরা নাকি দীর্ঘ মেয়াদে ‘‘আমাদের সেরা খেলোয়াড়দের অনেককেই হারানোর ঝুঁকিতে থাকব।’’ কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা একটা ভুল বার্তা পাঠানো হচ্ছে।’

বরং আইপিএলকে কোনো ক্রিকেটার জাতীয় দলের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিলে সে ক্ষেত্রে ইসিবিকে কঠোর ব্যবস্থায় যেতে বললেন ভন, ‘যদি ইংল্যান্ড জাতীয় দলের কোনো খেলোয়াড় ২৬-২৭ বছর বয়সে এসে বলে যে সে ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তির চেয়ে আইপিএল ও অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে বেশি গুরুত্ব দেবে, সে ক্ষেত্রে আমার জবাবটা খুবই সহজ হবে—“যেতে চাচ্ছ, যাও। পরে কখনো দেখা হবে। চিরবিদায়। তবে এতটুকু বলি, এক-দুই বছরের মধ্যে তুমি আমার দরজায় এসে আবার দরজা খটখটাবে”।’

বাটলারদের মতো বহু ইংলিশ ক্রিকেটারই এখন আইপিএলের অপেক্ষায় থাকেন।
ছবি: টুইটার

ইংল্যান্ডের এ সময়ের ক্রিকেটাররা আইপিএলকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাঁদের চোখে, টি-টোয়েন্টি লিগ যা দেয়, সেটা অন্য কেউ দিতে পারে না। ইংল্যান্ডের প্রধান কোচ ক্রিস সিলভারউডও কদিন আগে বলেছেন, ইংল্যান্ডে ক্রিকেটারদের আইপিএলে খেলা থেকে বিরত রাখা কঠিন হবে। এমনকি জেফরি বয়কটের মতো কিংবদন্তিও এ বিতর্কে কথা বলেছেন। তবে বয়কটের সুর ছিল ভনের মতোই। দেশের চেয়ে আইপিএলে খেলাকে অগ্রাধিকার দিলে সেই ক্রিকেটারের বেতন ও ম্যাচ ফি কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বয়কট।

ভনের পরামর্শ একটু ভিন্ন। তিনি বরং আর্চার-স্টোকসদের আরও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আটকে ফেলার পক্ষে, ‘যদি ইংল্যান্ড সত্যিই চায় এমন কিছু না হোক (দেশের চেয়ে আইপিএলকে প্রাধান্য দেওয়া) সে ক্ষেত্রে তারা সেরা ক্রিকেটারদের দু-তিন বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তি দেয় না কেন? উঁচু মাপের খেলায় সেরা খেলোয়াড়দের দেখেশুনে রাখতেই হয়, সে হিসেবে আপনার বেন স্টোকস কিংবা জফরা আর্চারদের তো এক বছরের বেশি মেয়াদি চুক্তি দেওয়াই উচিত! সেটা হলে আপনি ওদের দীর্ঘ সময়ের জন্য বেঁধে রাখতে পারবেন। কিন্তু সেটা না করে আপনি ওদের ১২ মাসের চুক্তি দিচ্ছেন!’