জাতীয় দলে আর অধিনায়কত্ব করার সম্ভাবনা নেই মুশফিকের

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে মুশফিকুর রহিম অধিনায়কত্ব করছেন বেক্সিমকো ঢাকার।ছবি: প্রথম আলো

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মুশফিকুর রহিম অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে মহা বিতর্কিত এক অধ্যায়ের পর। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করেছেন। কিছুদিন জাতীয় দলের সহ–অধিনায়কও ছিলেন। তবে সাকিব আল হাসানকে যখন অধিনায়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো, তখন তাঁর ডেপুটিও ছিলেন না যে অনুমিতভাবে তাঁর কাঁধেই আসবে নেতৃত্বের ভার। ২০১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মুশফিকুর রহিমের কাছে অধিনায়কত্ব আসে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই।

সাকিব-তামিমকে বিতর্কিতভাবে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর অধিনায়ক হয়েছিলেন মুশফিক। দলে জেঁকে বসা গুমোট হাওয়াটা সরিয়ে দিতে দায়িত্বের প্রথম প্রহরেই মুশফিক ‘অফ দ্য ফিল্ডে’ করেছিলেন দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব। অধিনায়কত্ব শুরু করেছিলেন জয় দিয়ে, যেটির নায়ক তিনি নিজেই। ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টি-টোয়েন্টি দিয়ে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচের শুরু টস জয়ে। আর সেটির শেষ জয় এনে দেওয়া ছক্কায়। অথচ এই অধিনায়কত্বই যেন পরে তাঁর কাছে মান-অভিমানের একটা জায়গা হয়ে দাঁড়াল!

২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে অভিমান করে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেন। অভিমান ভুলে অবশ্য পরে আবার ফিরেছেন নেতৃত্বে। ২০১১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সেপ্টেম্বর—টানা ছয় বছর বাংলাদেশ টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ৩৪টি টেস্টে অধিনায়কত্ব করে জয় পেয়েছেন সাতটিতে। জয় ছিল ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় দলের বিপক্ষেও। টেস্টে কমপক্ষে পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন অধিনায়কদের মধ্যে মুশফিকের (২০.৫৮%) চেয়ে জয়ের হার বেশি কেবল সাকিব আল হাসানেরই (২১.৪২%)।

বাংলাদেশ দলকে আর কোনো অধিনায়কেরই মুশফিকের মতো লম্বা সময়ে নেতৃত্ব দেওয়ার উদাহরণ নেই। তবুও ২০১৭ সালে জাতীয় দলে তাঁর অধিনায়কত্বের পর্বটা শেষ হলো তিক্ততায়। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এমন কিছু ঘটনা ঘটল, নেতৃত্বের ভারটা যেন তাঁর কাছে বড় ভারী হয়ে উঠল! সেই তিক্ততার পর মুশফিক আর বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করতে আগ্রহী হলেন না। গত বছর জুলাইয়ে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা চোটে পড়ার পর সুযোগ এলেও তিনি আগ্রহ দেখাননি পুরোনো পথে হাঁটতে। এমনকি ঘরোয়া টুর্নামেন্টেও মুশফিক অধিনায়কত্বের চাপ নিতে আগ্রহী নন।

জাতীয় দলে আর অধিনায়কত্ব করার সম্ভাবনা দেখেন না মুশফিক।
ছবি: প্রথম আলো

এবার ব্যতিক্রম ঘটল। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে মুশফিক রাজি হয়েছেন বেক্সিমকো ঢাকার অধিনায়কত্ব করতে। কোন ভাবনায় এই সিদ্ধান্ত, সেটির ব্যাখ্যায় মুশফিক আজ বলেছেন, ‘জাতীয় দল বা অন্য দলে হোক, তরুণ খেলোয়াড় যারা আছে, তাদের হয়তো ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করা হয়। আমার জাতীয় দলে অধিনায়কত্ব করার সম্ভাবনা আর নেই বলেই মনে করি। জাতীয় দলে যাদের সম্ভাবনা আছে, তাদের এ টুর্নামেন্টে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে ভালো হয়। তাদের জন্য এটা খুব ভালো সুযোগ। তরুণ খেলোয়াড়েরা যত দায়িত্ব নেবে, তাদের দায়িত্ববোধ তত বাড়বে।’

ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকার দায়িত্ব নেওয়ারও, ‘অধিনায়কত্বের ব্যাপারটা অনেক সময় নির্ভর করে ফ্র্যাঞ্চাইজি কী চাইছে, তার ওপর। তারা (ঢাকা) হয়তো আমাকে সঠিক ব্যক্তি মনে করেছে—যে দলকে পথ দেখাতে পারবে। অধিনায়ক হিসেবে দলকে শীর্ষে নেওয়া একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নিতে আমি তৈরি। আমার দলে যারা আছে, তারা যদি ঠিকঠাক সমর্থন করতে পারে, এটা (উতরে যাওয়া) অসম্ভব নয়।’