জাতীয় দলে এক ম্যাচেই শেষ '১৯' দলের যাঁরা

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে উঠে এসে জাতীয় দলে মাত্র এক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন কিছু ক্রিকেটার
বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট দলে বিকাশ রঞ্জন (সামনে সবুজ ক্যাপ পড়ে বসে আছেন)। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট দলে বিকাশ রঞ্জন (সামনে সবুজ ক্যাপ পড়ে বসে আছেন)। ছবি: প্রথম আলো

সাইফ হাসান এই দলে নেই। ২০১৮-তে অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এ ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কেবল শুরু হলো। সবে খেলেছেন রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট। সামনে এখনো অনেক পথ। ঝরে না পড়লে হয়তো অনেক দূরই যাবেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলোয়াড়দের পরবর্তী সময়ে ঝরে পড়ার প্রশ্নটা উঠছে। অতীতে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বেশ কিছু ক্রিকেটার জাতীয় দলে পা রেখেও যে দ্রুত মিলিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটা সময় ছিল যখন জাতীয় দলে কমবেশি ভালোই সুযোগ পেতেন ক্রিকেটাররা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পায়ের তলে দলের মাটি তখন শক্ত ছিল না। আর তাই বাজিয়ে দেখার প্রবণতা এখনকার থেকে বেশি ছিল। কিন্তু খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, তখনো কিন্তু বেশ কিছু ক্রিকেটার সেভাবে সুযোগ পাননি জাতীয় দলে। ‘পাইপলাইন’ বলা হয় যে দলকে, সেই অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে এসেও বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তাঁরা। মাত্র এক ম্যাচ!

হ্যাঁ, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এমন কিছু ক্রিকেটার আছেন, জাতীয় দলে যাঁরা মাত্র এক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এরপর আর দেখা যায়নি। কেউ নিজের দোষে কিংবা বিবেচনার বাইরে থাকায় হারিয়ে গেছেন বিস্মৃতির অতলে। এই ‘দুর্ভাগা’ ক্রিকেটারের সংখ্যাটা আবার সৌভাগ্যের সংখ্যা—৭! অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে এসে জাতীয় দলে মাত্র ১ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া সেই সাত ক্রিকেটার হলেন মাহবুবুর রহমান, মাজহারুল হক, নাজমুস সাদাত, বিকাশ রঞ্জন দাস, রনি তালুকদার, শরিফুল হক ও জাকির হাসান জুনিয়র।

মাহবুবুর রহমানকে দিয়েই শুরু করা যাক। আশির দশকে ময়মনসিংহ থেকে অনেক ভালো ক্রিকেটার উঠে এসেছে। ‘সেলিম’ ডাকনামের মাহবুবুর রহমান তাঁদের একজন। ১৯৮৯ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪০ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৮ রানের দুটি ইনিংস খেলেছিলেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান। জাতীয় দলে আসতে এক দশক সময় লেগে যায় তাঁর। ১৯৯৯ মেরিল ইন্টারন্যাশনাল কাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পান মাহবুবুর। মেহরাব হোসেনের বাংলাদেশকে প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি এনে দেওয়া সে ম্যাচে ৩ রান করে আউট হয়েছিলেন মাহবুবুর। এরপর আর জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাননি তিনি।

মাজহারুল হক সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন দেশের ক্রিকেটে। ১৯৯৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দল খেলে জাতীয় দলে এসেছিলেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান। তিন বছর পর কলম্বোয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। মাহবুবুর রহমানের মতো মাজহারুলও ৩ রান করে আউট হন। জাতীয় দলে সেটাই মাজহারুলের প্রথম ও শেষ ম্যাচ। পরে বিসিবির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়া এ ক্রিকেটার ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান হিসেবে ভালোই পরিচিতি পেয়েছিলেন নাজমুস সাদাত। ২০০৬ সালে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অভিষেক ঘটেছিল নাজমুসের। ওপেন করতে নেমে মাত্র ৪ রান করে আউট হন তিনি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও ব্যাটসম্যান হিসেবে তেমন ভালো করতে পারেননি খুলনার এ ক্রিকেটার। ২০০৫ আফ্রো-এশিয়া কাপে ৪ ম্যাচে সর্বসাকল্যে করেছিলেন ১৬ রান।

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিকাশ রঞ্জনের নাম। বাঁহাতি এ পেসার ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলেছিলেন। ভারতের ওপেনার সদাগোপান রমেশকে আউট করেছিলেন। সে বছর জানুয়ারিতে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন বিকাশ। কিন্তু অভিষেক টেস্টের পর জাতীয় দলে আর সুযোগ পাননি তিনি। পরে ঘরোয়ায় বহুদিন খেলেছেন তিনি। পেসার থেকে বাঁহাতি স্পিন বোলিংও করেছেন বিকাশ। বর্তমানে ধর্মান্তরিত হয়ে পুরোদস্তুর ব্যাংকার এই পেসার। নাম নিয়েছেন—মাহমুদুর রহমান।

রনি তালুকদার। ছবি: প্রথম আলো
রনি তালুকদার। ছবি: প্রথম আলো

রনি তালুকদার ঘরোয়ায় ডাকসাইটে ব্যাটসম্যানদের একজন। ২০১৫ সালে ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে টপ অর্ডার এ ব্যাটসম্যানের। সে ম্যাচে সাতে নেমে ২১ রান করে আউট হন তিনি। ২০০৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে প্রথম খেলার সুযোগ পান রনি। ৮ বছর পর সুযোগ পান জাতীয় দলে। কিন্তু এক ম্যাচ খেলেই থেমে যেতে হয়েছে তাঁকে।

জাকির হাসান বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলেছেন বেশি দিন হয়নি। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করে ১০ রানে আউট হন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ওটাই হয়ে আছে তাঁর শেষ ম্যাচ। এর আগে ২০১৩-১৪ ও ২০১৫-১৬ মৌসুমে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন সাবেক অফ স্পিনার শরিফুল হক। এরপর ১৯৯৮ সালে ইন্ডিপেনডেন্স কাপে ভারতের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে খেলেন তিনি। ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। জাতীয় দলে ওটাই ছিল শরিফুলের প্রথম ও শেষ ম্যাচ। এর ১৪ বছর পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে বিসিবি তাঁকে নিষিদ্ধ করে।