টি-টোয়েন্টির এ যুগের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ভালো লাগে না গেইলের

ক্রিস গেইলছবি: সংগৃহীত

শুধু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি হিসাবে নিলে তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১৩৭.৫০। ক্ষেত্রটা একটু বড় করে আন্তর্জাতিকের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টও হিসাবে নিলে স্ট্রাইক রেট আরও বাড়ে। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৪৫.৪৪।

এমনি এমনি তো আর টি-টোয়েন্টিতে ক্রিস গেইলের এত সমাদর হয়নি! তাঁকে ‘মিস্টার টি-টোয়েন্টি’ও এমনি এমনি ডাকা হয় না। গত বছর দু-একে হয়তো আর আগের মতো পারছেন না, তবে টি-টোয়েন্টিতে গেইল মানে সব সময় ছিল আগ্রাসী ব্যাটিং, ইনিংসের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের বোলারদের ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলা। সেই গেইলের কাছে এ যুগের টি-টোয়েন্টির উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং মোটেও ভালো লাগছে না।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪২ বছর বয়সী বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের চোখে, এখনকার ওপেনারদের সতর্ক ব্যাটিং ‘টি-টোয়েন্টির মজাই নষ্ট করে দিচ্ছে।’

বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে গত এক দশকে গেইলই ছিলেন সবার আগ্রহের কেন্দ্রে
ছবি: আইপিএল

এ মুহূর্তে আবুধাবিতে চলতে থাকা টি-১০ টুর্নামেন্টের দিকে নজর ফিরিয়ে গেইল জানান, ১০ ওভারের এ ম্যাচগুলোতে যেমন ব্যাটিং করেন ব্যাটসম্যানরা, টি-টোয়েন্টির শুরুর দিকেও ব্যাটিং এমনই আগ্রাসী ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতেও এখন বিনোদনের চেয়ে দেখেশুনে খেলা গড়াতেই বেশি মনোযোগ থাকে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের।

আবুধাবি টি-১০ লিগে ‘টিম আবুধাবি’র হয়ে খেলছেন গেইল। গতকাল বাংলা টাইগার্সের কাছে তাঁর দল শেষ পর্যন্ত ১০ রানে হেরে গেলেও চারে নেমে গেইল খেলেছেন ২৩ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস। স্ট্রাইক রেট ২২৬.০৮!

ম্যাচ শেষেই গেইল কথা বলেন টি-টোয়েন্টির এ যুগের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের নিয়ে, ‘আমার মনে হয় টি-১০ ক্রিকেটে যা হচ্ছে...টি-টোয়েন্টির শুরুটাও এমনই হয়েছিল। প্রথম ওভার থেকে ব্যাটসম্যানরা চালিয়ে খেলতে শুরু করত। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এরপর থেকে অনেক ধীরগতির হয়ে গেছে। টি-১০ ক্রিকেট এসে এখন আবার (ব্যাটিংয়ে আগ্রাসনের) মানটা আরেকটু উঁচুতে নিয়ে গেছে।’

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে এখনই পুরোপুরি অবসরে যাচ্ছেন না গেইল
ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে এ যুগের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের দেখেশুনে শুরু, ইনিংস গড়ার দিকে মনোযোগ ওই সংস্করণের ক্রিকেটে দর্শকদের বিনোদন কমিয়ে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে গেইলের, ‘একেবারে সোজা কথায় বললে, টি-টোয়েন্টিতে ওরা মজাটা নষ্ট করে দিচ্ছে। কারণ, প্রথম ছয় ওভারে (যখন শুধু দুজন ফিল্ডার ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে রাখা যায়) আমরা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরা আরও বেশি রান করতে পারি, কিন্তু এখনকার ব্যাটসম্যানরা আক্রমণ শুরু করতে অনেক বেশি সময় নিচ্ছে।’

এদিক থেকে টি-১০ ক্রিকেটকে এগিয়ে রেখে আরও সংক্ষেপিত এ সংস্করণের বিজ্ঞাপনই করে যাচ্ছেন এক সময়ের ‘টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা।’ তাঁর চোখে এ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণেই টি-১০ ক্রিকেট আরও বেশি বেশি হওয়া উচিত, ‘মাঝেমধ্যে ওরা (টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরা) হয়তো নিজেরা বড় ইনিংস খেলতে চায়। তাতে প্রথম ছয় ওভারে ওদের ব্যাটে যে আগুন থাকা উচিত, সেটা থাকে না। কিন্তু টি-১০ একেবারে ঠিক আছে। আশা করি, সামনে আরও বেশি বেশি টি-১০ ক্রিকেট দেখব।’

এ সংযুক্ত আরব আমিরাতেই কয়েক দিন আগে হয়ে গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে পিচগুলো অবশ্য আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য খুব একটা উপযোগী ছিল না। গেইলের নিজের দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেটি বুঝেছে চরম মূল্য দিয়ে। ইনিংস ধরে রাখার মতো তেমন ব্যাটসম্যান ছাড়াই বিশ্বকাপে যাওয়া উইন্ডিজ বাদ পড়েছে গ্রুপ পর্বে।

তবু গেইলের মনে হচ্ছে, হিসাব কষে ব্যাটিং টি-টোয়েন্টির জন্য নয়, ‘প্রথম ছয় ওভারে কেন ব্যাটসম্যানরা এত খাঁচাবন্দী হয়ে থাকে, আমি বুঝতে পারি না। আপনি যদি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে ফিরে দেখেন, টি-টোয়েন্টি যখন শুরু হয়েছিল, ব্যাটসম্যানরা প্রথম বল থেকে শট খেলতে চাইত।’

এখন যে ব্যাটসম্যানরা দেখেশুনে শুরু করতে চায়, সেটিতে আপত্তি গেইলের, ‘এখনকার এ ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে না। আমার মনে হয় আমাদের শুরু থেকেই চালিয়ে খেলা উচিত। টি-টোয়েন্টির যে বিনোদন সেটি ঠিক রাখা উচিত। প্রথম ছয় ওভারে আগ্রাসী ব্যাটিং করা উচিত।’