টি–টোয়েন্টি শুরু ৬৬ রানের হারে

ব্যর্থ ব্যাটিংয়ে ব্যতিক্রম ছিলেন আফিফ হোসেন।ছবি: এএফপি

নিউজিল্যান্ড সিরিজের গল্পটা একইরকম। ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা। ওয়ানডে সিরিজে গোটা দল ব্যর্থ, টি-টোয়েন্টিতেও অবস্থার খুব একটা বদল হলো না। নিউজিল্যান্ডের ২১১ রানের পাহাড় ডিঙাতে গেলে যে ধরনের ব্যাটিং দরকার, তার ধার কাছ দিয়েও যেতে পারল না বাংলাদেশ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। তবে এই হারে যদি ইতিবাচক কিছু পাওয়া যায়, সেটি নাসুমের বোলিং আর আফিফ হোসেনের ব্যাটিং। প্রথমে সুযোগ তৈরি করেছিলেন নাসুম, পরে অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মধ্যে আফিফ ছিলেন দারুণ ব্যতিক্রম। নিউজিল্যান্ডের ৩ উইকেটে করা ২১০ রানের জবাবে শেষ অবধি বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৪৪।

নিউজিল্যান্ডের রানের পাহাড়ে চড়তে গিয়ে শুরুটা ইতিবাচক ছিল বাংলাদেশের। এ সফরে প্রথম সুযোগ পাওয়া নাঈম শেখ প্রথম থেকেই হাত খুলে খেলছিলেন। বাউন্ডারি মেরে পাল্টা আক্রমণটা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু ওই যে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ইনিংসের ছন্দ ধরে রাখতে পারেন না, নাঈমের বেলাতেও ঘটল সেটিই। লকি ফার্গুসনের বলে ১৮ বলে ২৭ রান করে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন তিনি। এর পরের গল্পটা ব্যর্থতারই। দলের ভরসা লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ আর মোহাম্মদ মিঠুন—চারজনই ফিরেছেন দলকে তেমন ভরসা না দেখিয়েই।

প্রথমে ফিরেছেন লিটন। নিউজিল্যান্ড সফরে ব্যর্থতায় দারুণ ‘ধারাবাহিক’। একটি ম্যাচেও প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু করতে পারেননি। দলের সংগ্রহ যখন ২০, তখন ৫ বলে ৪ রান করে টিম সাউদির বলে ইশ সোধির ক্যাচ হন। সৌম্য ইশ সোধিকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। মিঠুন সোধির বল বুঝে ওঠার আগেই বোল্ড। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও বুঝতে পারেননি লেগ স্পিনার সোধিকে। বোল্ড তিনিও।

নাঈমের শুরুটা ছিল ইতিবাচক। কিন্তু তিনি টেনে নিয়ে যেতে পারেননি দলকে।
ছবি: এএফপি

২১০ রান তাড়া করতে নেমে ৫৯ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আর কিছুই করার থাকে না। কিন্তু এই সময়ই আফিফ হোসেন তাঁর ব্যাট দিয়ে প্রমাণ করেন, টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের করার ছিল অনেক কিছুই। আফিফ খুব সহজেই নিউজিল্যান্ডের বোলারদের খেলেছেন। টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ে সবকিছু যেমন ‘জটিল’ মনে হচ্ছিল, আফিফের ব্যাটে সেই জটিলতা ছিল না। ৩৩ বলে ৪৫ রান করেছেন তিনি। ৫টি বাউন্ডারি আর একটি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ৫৬ বলে ৬৩ রানের একটা জুটি গড়ে বাংলাদেশের মুখ রক্ষা করেন। এই জুটিটি ছাড়া বাংলাদেশের ইনিংসে বলার মতো তো কিছু নেই। সাইফউদ্দিন ৩৪ বলে ৩৪ করেছেন, ৩ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়। বোলিংয়ে নিজের ব্যর্থতা ব্যাট দিয়ে ঢেকে দিতে চেয়েছেন এই অলরাউন্ডার।

মিঠুন বলের লাইনই বুঝতে পারলেন নাসোধির বলে।
ছবি: এএফপি

আফিফ লকি ফার্গুসনের বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন। আগের বলেই লং অন দিয়ে দারুণ দারুণ একটা চার মেরেছিলেন, ফার্গুসনের গতি ব্যবহার করে। ফার্গুসন পরের বলটি করলেন একেবারে আফিফের পা লক্ষ্য করে। আফিফও চার মেরে একটু বেশিই হয়তো তেতে ছিলেন। তবে তাঁকে দল বল একটা ধন্যবাদ হয়তো দেবে। হ্যামিল্টনে আজ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তাঁর জন্যই বড় লজ্জা পায়নি দল। স্কোরবোর্ডকে দেখাচ্ছে কিছুটা ভদ্রোচিত।

নিউজিল্যান্ড দলের সেরা বোলিং ওই সোধিরই। ২৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ফার্গুসনের ঝুলিতে ২ উইকেট। বাকিরা নিয়েছেন এক উইকেট করে। সাউদি, হামিশ বেনেটরা মাথা খাটিয়ে বোলিং করেছেন। আফিফ-সাইফরা চড়াও ছিলেন মার্ক চ্যাপম্যান, গ্লেন ফিলিপস, ড্যারেল মিচেলদের ওপর। কিন্তু সেটি দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট ছিল না।

নিউজিল্যান্ড সফরের আরও একটি দিন, আরও একটি হার। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচ খেলে দেশে ফিরতে পারলেই এখন যেন বেঁচে যান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।