টি–টোয়েন্টির ব্যাটিং হলো না তামিমের

লাহোরের হয়ে আজও থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি তামিম।ছবি: টু্ইটার

ভালো করার জ্বালানিটা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন আমির সোহেল। পাকিস্তানের সাবেক এই ওপেনার বলেছিলেন, তামিম ইকবাল বড় ম্যাচে রান করতে পারে না। কয়েক বছরের ফাইনালগুলোই এর প্রমাণ। আমির সোহেলের কথা নিশ্চয়ই তামিমের কানে পৌঁছেছে? আজ পিএসএলের ফাইনালে তামিম তাঁর ব্যাটে এ কথার কতটুকু জবাব দিতে পারলেন?

লাহোর কালান্দার্সের ইনিংস দেখে থাকলে উত্তরটা সবারই জানা। মোক্ষম জবাব যাকে বলে, সেটি তো দিতে পারেনইনি, এমনকি কালান্দার্স সমর্থকেরাও হতাশ হবেন বাংলাদেশি ওপেনারের ব্যাটিংয়ে। কারণ, ব্যাটিংটা যে টি-টোয়েন্টির মতো হয়নি। সেই বরাবরের মতোই থিতু হতে গিয়ে ধীরলয়ে শুরু, মাঝে দু-একটি চোখধাঁধানো শট, তারপর ইনিংসটা যখন একটু বড় হচ্ছে ঠিক তখনই আউট। করাচি কিংসের বিপক্ষে ফাইনালে ৩৮ বলে ৩৫ রানে আউট হয়েছেন তামিম। ৪ চার ও ১ ছক্কায় এর মধ্যে ২২ রান এসেছে বাউন্ডারি থেকে।

প্লে-অফের দুই ম্যাচ আর আজকের ফাইনালে তামিমের ইনিংসকে পাশাপাশি রাখলে একটি বিষয় পরিষ্কার। ১৮, ৩০ ও ৩৫—এই তিনটি ইনিংসে সবচেয়ে চেনা দৃশ্য হলো, প্রতিবারই ভালো শুরু পেয়ে আউট হয়ে যাওয়া। অনেকে রসিকতা করে বলতে পারেন, পরের ইনিংসে তামিম ফিফটি পেলেও পেতে পারেন! যেহেতু তিন ইনিংসে রানসংখ্যা একটু একটু করে বেড়েছে! রসিকতা রেখে সহজ কথায় বলা যায়, পিএসএলে এবার তামিম আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে হতাশাই বাড়িয়েছেন।

তামিমের শুরুটা ধীর হলেও দর্শনীয় শটও খেলেছেন।
ছবি: টুইটার

ফাইনালের ইনিংসটি বিশ্লেষণ করা যায়। ফাইনাল মানেই তো চাপের ম্যাচ। কালান্দার্স আগে ব্যাট করতে নামায় তামিমের ওপর ভালো শুরুর চাপ ছিল। এই চাপ কাটিয়ে উঠতে উইকেটে একটু থিতু হতে চাওয়া দোষের কিছু না। কিন্তু ইনিংসের শুরুটা হয়েছে এভাবে—ইমাদ ওয়াসিমের করা প্রথম ওভারে শুধু একটি চার আদায় করতে পারেন তামিম। পুরো ওভার খেলেও কোনো সিঙ্গেল বের করতে পারেননি। একপর্যায়ে তাঁর সংগ্রহ ছিল ২৪ বলে ১৪। টি-টোয়েন্টিতে ওপেনারের কাছ থেকে এমন ধীরলয়ের ব্যাটিং, সেটিও কুড়িটির বেশি বল খেলে ফেলার পর—ভাবা কষ্টকর।

ওপেনারের মূল কাজটা হলো দলকে অন্তত বড় সংগ্রহ পাওয়ার ভিত গড়ে দেওয়া—সেটি সেভাবে হয়নি, কারণ দলীয় ৬৮ রানে তামিম আউট হলেও ততক্ষণে ইনিংসের অর্ধেক অর্থাৎ ১০ ওভার শেষ।

ইনিংসের শুরুতে বল ব্যাটে আনতে বেগ পেতে হয়েছে তামিমকে। করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের উইকেট একটু মন্থর হলেও মানিয়ে নিতে সময় পেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু বল ব্যাটে না আসায় মরিয়া হয়ে মাঝেমধ্যেই আলগাভাবে ব্যাট চালিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে আবার চোখধাঁধানো ক্রিকেটীয় শটও ছিল। ইমাদকে প্রথম ওভারে মারা স্কয়ার কাটটা ছিল দারুণ। এ ছাড়া ষষ্ঠ ওভারে আরশাদ ইকবালকে মারা ফ্লিক, লং অনের ওপর দিয়ে মারা ছক্কা, উমাইদ আসিফকে মারা পুল—দর্শনীয় ছিল তিনটি শট। কিন্তু ওপেনারের মূল কাজটা হলো দলকে অন্তত বড় সংগ্রহ পাওয়ার ভিত গড়ে দেওয়া—সেটি সেভাবে হয়নি, কারণ দলীয় ৬৮ রানে তামিম আউট হলেও ততক্ষণে ইনিংসের অর্ধেক অর্থাৎ ১০ ওভার শেষ। ১১তম ওভারের প্রথম বলে উমাইদ আসিফকে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন তামিম।

প্লে-অফে ক্রিস লিনের বিকল্প হিসেবে তামিমকে নিয়ে এসেছে লাহোর। পেশোয়ার জালমির বিপক্ষে প্রথম এলিমিনেটরে ১ ছক্কা ও ২ চারে ১০ বলে ১৮ রান করেন তিনি। পরের এলিমিনেটরে ৫ চারে ২০ বলে করেন ৩০ রান। দুই ইনিংসেই তামিমের শুরুটা ছিল আশা-জাগানিয়া। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। ফাইনাল ঘিরে তামিমের বড় ইনিংস দেখার আশায় ছিলেন সবাই। এ–যাত্রায় পূরণ হলো না সেই প্রত্যাশা।

তামিমের দল শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে তুলেছে ৭ উইকেটে ১৩৪ রান।