ডি ককের চোখধাঁধানো ব্যাটিংও হার মানে এমন অবিশ্বাস্য সমাপ্তির কাছে

অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেছেন ডি ককছবি: আইপিএল

আগে ফলটা জানিয়ে দেওয়া যাক, কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ২ রানে হারিয়েছে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস। এ জয়ে প্লে-অফ খেলা নিশ্চিত হয়েছে লক্ষ্ণৌয়ের, টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে কলকাতার। কিন্তু তার আগে যে নাটক হয়েছে, সেটি হয়তো ‘ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা’ আপ্তবাক্যেও বোঝানো সম্ভব নয়!

কুইন্টন ডি ককের চোখধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ৭০ বলে ১৪০ রান, আগে ব্যাট করে লক্ষ্ণৌয়ের বিনা উইকেটেই ২১০ রান তুলে ইনিংস শেষ করা—এতটুকুকে এখন কেমন দূর অতীতের কোনো ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছে! জবাবে ৯ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলা কলকাতা ইনিংসের ২০ বল বাকি থাকার সময়েও জয় থেকে ৬১ রান দূরে ছিল, হাতে ছিল ৪ উইকেট।

এ অবস্থায় যাঁর ওপর ভরসা সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা ছিল, সেই আন্দ্রে রাসেলই কিনা ১১ বলে ৫ রান করে ফিরেছেন। সেই ম্যাচেই কলকাতা শেষ পর্যন্ত ২ বলে ৩ রানের সমীকরণে নিয়ে আসা, শেষ দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে আবার দুই রানেই হেরে যাওয়া... নাহ, ক্রিকেটেও এত নাটকীয়তা একটু বাড়াবাড়ি বলে মনে হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়।

এই অতিনাটকীয়তার রূপকার কারা? রিঙ্কু সিং ও সুনীল নারাইন। রাসেল আউট হওয়ার সময় কলকাতার ২০ বলে ৬১ রানের সমীকরণটাকে শেষ ২ বলে ৩ রানে নামিয়ে নিয়ে এসেছে তো দুজনের ১৯ বলে ৫৮ রানের জুটিই।

অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নিয়ে রিঙ্কু সিংকে ফিরিয়েছেন এভিন লুইস

শেষ ওভারের পঞ্চম বলে এভিন লুইসের এক হাতের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হওয়ার আগে ১৫ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৪০ রান করেছেন রিঙ্কু, এর মধ্যে শেষ ওভারের প্রথম ৪ বলেই মার্কাস স্টয়নিসকে মেরেছেন ২টি ছক্কা ও ১টি চার। নারাইন ৭ বলে ৩ ছক্কায় ২১ রান নিয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে গেলেন। হয়তো আফসোসে মরেছেন, শেষ ২ বলে একটিবার শুধু যদি স্ট্রাইকে যাওয়ার সুযোগ পেতেন!

অথচ এর আগপর্যন্ত কলকাতার ইনিংসে গতি ছিল কিন্তু ম্যাচে উত্তেজনা বলতে কিছু ছিল না। শেষ পর্যন্ত কুইন্টন ডি ককের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের পর লক্ষ্ণৌর বড় জয়ের গল্প লেখা হবে বলেই মনে হচ্ছিল।

আইপিএল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড গড়েছেন ডি কক ও রাহুল
ছবি: আইপিএল

কী করেছেন কুইন্টন ডি কক? শুধু সংখ্যা বলবে, ৭০ বলে ২০০ স্ট্রাইক রেটের একটা ইনিংস খেলেছেন। চার, ছক্কা, রানের হিসাব তো আগেই জেনেছেন। বাকিটুকু বলবে রেকর্ড। মৌসুমের সর্বোচ্চ ইনিংস (১৪০*), এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছয় (১০), সর্বোচ্চ রানের জুটি (লোকেশ রাহুলের সঙ্গে প্রথম উইকেটে ২১০*)—রাতটা নিজের করে নেওয়ার পথে আইপিএলের ইতিহাসও রাঙিয়ে দিয়েছেন ডি কক। ৩৬ বলে অর্ধশতকে পৌঁছেছেন, ১০০ হয়ে গেছে ৫৯ বলে।

কলকাতার অভিজিত তোমারের বুঝি আফসোস হচ্ছে, ডি ককের ১২ রানেই তাঁকে আউট করার সুযোগটা হারিয়েছেন তোমার। ‘রাতটা আমার’—মনে মনে বুঝি তখনই ঠিক করে ফেলেছিলেন ডি কক! লোকেশ রাহুলের (৫১ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৮) সঙ্গে তাঁর উদ্বোধনী জুটি পুরো ২০ ওভারই ব্যাট করেছে, আইপিএলের ইতিহাসে এমন কীর্তি আর নেই। আইপিএলের ইতিহাসে নেই এত রানের উদ্বোধনী জুটিও।

এরপর? নিতীশ রানার ২২ বলে ৪২, অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের ২৯ বলে ৫০, স্যাম বিলিংসের ২৪ বলে ৩৬ রানের ইনিংসগুলো কলকাতার ইনিংসে গতি ধরে রেখেছে। তবে গতিটা কখনোই লক্ষ্ণৌর ২১১ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে যাওয়ার মতো বলে মনে হয়নি। দলকে ১৫০ রানে রেখে ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে আন্দ্রে রাসেল ফেরার পর তো লক্ষ্ণৌর জয় নিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছিল।

জয় লক্ষ্ণৌ ঠিকই পেয়েছে, তবে তার আগে তাদের রিঙ্কু-নারাইনের প্রলয় নাচন সইতে হলো আরকি!