তবু নাঈমই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান

জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নাঈম।ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ জাতীয় দলে মোহাম্মদ নাঈম এখনো থিতু হতে পারেননি। একটি ওয়ানডে খেললেও মূলত টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রায় দুই বছর জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন তিনি। ৮ ম্যাচ খেলা সেই নাঈম এখন টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। অন্তত আইসিসির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিং সে কথাই বলছে।

টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ থেকে শীর্ষে রয়েছেন বাঁ হাতি এ ব্যাটসম্যান। ১৩ ধাপ লাফ দিয়ে ২৮তম স্থানে উঠে এসেছেন নাঈম। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে এ সংস্করণে বাংলাদেশের সেরা হলেন তিনি। আর তাতে অবদান (!) রয়েছেন লিটন দাসের।

আজ হালনাগাদকৃত র‌্যাঙ্কিং প্রকাশের আগে টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের সেরা ছিলেন লিটন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে প্রথম দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মিলিয়ে মাত্র ১০ রান করায় ৬ ধাপ অবনমন ঘটে ২৯তম স্থানে নেমে গেছেন এই ওপেনার। আর নাঈম প্রথম ম্যাচে করেন ১৮ বলে ২৭ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৫ বলে ৩৮।

আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে নাঈমের এই দেশসেরা হওয়ায় একটি বাস্তবতাও চোখে বিঁধছে। কথায় আছে, ‘মন্দের ভালো’—হ্যাঁ, এই মন্দের ভালো হিসেবেই টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের সেরা হলেন তিনি। কীভাবে?

এই সংস্করণে নাঈমের স্ট্রাইকরেট ১২০.৩৩। আধুনিক ক্রিকেটের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে তা কতটুকু মানানসই, যেখানে র‌্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় এবং তাঁর মতোই ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চের স্ট্রাইকরেট ১৫০–এর বেশি। ফিঞ্চের কথা বাদ দিন, নাঈমের পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা ডেভন কনওয়ের স্ট্রাইকরেট ১৫১.১১। পাঁচ ধাপ এগিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের চারে উঠে এসেছেন এই কিউই।

অর্থাৎ মোটামুটি ১৪০–এর ওপাশে স্ট্রাইকরেট রাখার চেষ্টায় ব্যাট করে থাকেন টি-টোয়েন্টিতে প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানরা।

কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় দলে তেমন কেউ নেই। সর্বোচ্চ যার, সেই লিটনের স্ট্রাইকরেট ১৩৪.৩০। দ্বিতীয় সৌম্য সরকারের স্ট্রাইকরেট ১২৭.৩৩। বাস্তবতা যেহেতু এমন, তাই নাঈমের এই দেশসেরা হওয়ায় তৃপ্তির তেমন কোনো জায়গা নেই, আর র‌্যাঙ্কিংও প্রতি সপ্তাহে হালনাগাদ করা হয়। তবে নাঈমের স্ট্রাইকরেট বাড়ানোর প্রতি নজর দেওয়ার সময়টা ঠিক এখনই। সর্বশেষ ম্যাচের চিত্র মাথায় রেখে তিনি এ নিয়ে কাজ করতে পারেন।

কাল দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬ ওভারে ১৭১ রানের লক্ষ্যে লিটনের সঙ্গে ওপেন করেন নাঈম। দ্বিতীয় ওভারে লিটন চলে গেলেও এক প্রান্ত ধরে রেখে নাঈম ১০৮.৫৭ স্ট্রাইকরেটে খেলেছেন ৩৫ বলে ৩৮ রানের ইনিংস। যেখানে দলকে জেতাতে মরিয়া সৌম্য সরকার করেন ২৭ বলে ৫১।

রান তাড়া করতে নেমে দলের চাহিদার প্রতি সুবিচার করে ব্যাট করতে পারেননি তিনি। সত্যি বলতে, একটি ইনিংস ছাড়া নাঈমের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত বাকি সব কটি ইনিংস-ই টি-টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিংয়ের মোটামুটি বিপরীত প্রতিচ্ছবি। ভ্রুকুটির আগে পরিসংখ্যান দেখুন।

২০১৯ সালে নাগপুরে ভারতের বিপক্ষে ৪৮ বলে ৮১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন ২১ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান। এর বাইরে তাঁর বাকি সাতটি ইনিংস—২৮ বলে ২৬, ৩১ বলে ৩৬, ৪১ বলে ৪৩, ১ বলে ০, ৩৪ বলে ৩৩, ১৮ বলে ২৭ ও ৩৫ বলে ৩৮ রান। এক শর আশপাশে স্ট্রাইকরেট (১২০.৩৩)।

আধুনিক ক্রিকেটে এই স্ট্রাইকরেট নিশ্চিতভাবেই বাড়াতে চাইবেন যেকোনো ব্যাটসম্যান। অন্তত টি-টোয়েন্টিতে দেশসেরার জায়গা মর্যাদার সঙ্গে ধরে রাখতে হলে এর বিকল্প নেই।

কেননা, এই সংস্করণে দলের বড় রান কিংবা বড় রান তাড়া করার ক্ষেত্রে নাঈম এখনো সেভাবে প্রভাব রাখতে পারেননি, যে কাজটা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েও অন্তত মাঝেমধ্যে করে দেখান লিটন-সৌম্য।

নাঈমের মতো সৌম্যও উঠে এসেছেন র‌্যাঙ্কিংয়ে। কাল নেপিয়ারে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি ম্যাচে।
ছবি: এএফপি

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে নাঈম ও লিটনের পরেই আছেন মাহমুদউল্লাহ। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক এক ধাপ পিছিয়ে নেমেছেন ৩১তম স্থানে। র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ এক শতে বাংলাদেশের আটজনের মধ্যে এগিয়েছেন শুধু সৌম্য সরকার। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঝোড়ো ফিফটিতে পাঁচ ধাপ এগিয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

৪১তম স্থানে উঠে এসেছেন সৌম্য। মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল শীর্ষ পঞ্চাশে জায়গা পাননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলছেন না জাতীয় দলের এই তিন সিনিয়র ক্রিকেটার।