তসলিমার প্রশ্ন—দোষটা কী ছিল আমার?

ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার মঈন আলীকে নিয়ে বিতর্কিত এক মন্তব্যের পর সমালোচিত হচ্ছেন তসলিমা নাসরিন।ছবি: ফেসবুক

ইংল্যান্ড জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মঈন আলীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর ভীষণ সমালোচিত হচ্ছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

এরপর আজ একটু অভিমানের সুরেই ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে আরেকটি পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে মন্তব্য করেন, ‘মঈন আলীকে অ্যাবিউজ (খারাপ আচরণ) করা ঠিক নয়, আমাকে অ্যাবিউজ করা ঠিক।’ তসলিমা আরও লিখেছেন, ‘তাঁকে নিয়ে যদি কৌতুক করিই, তাহলে কি টুইটারের অ্যাকাউন্ট উড়ে যাবে? হ্যাঁ, এমনই “থ্রেট” (হুমকি) এসেছে।’

ঘটনার শুরু মঈন আলীকে নিয়ে তসলিমার একটি বিতর্কিত টুইটে। পরশু তিনি টুইট করেন, ‘মঈন আলী ক্রিকেট না খেললে সিরিয়াতে গিয়ে আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগ দিত।’

এরপর রীতিমতো আগুন জ্বলে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মঈনের জাতীয় দল সতীর্থ জফরা আর্চার, স্যাম বিলিংসরা টুইট ও রিটুইট করে তুমুল সমালোচনা করেন এই লেখিকার। ক্রিকেটপ্রেমী কিংবা সাধারণ টুইটার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও চুপ করে থাকেননি।

অনেকে অকথ্য ভাষায়ও সমালোচনা করছেন ‘লজ্জা’ ও ‘আমার মেয়েবেলা’ বইয়ের লেখিকা তসলিমার। পরে সেই পোস্ট টুইটার থেকে মুছেও ফেলেন তসলিমা। তবে আজ ফেসবুকে নিজের ভাবনা ও অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি আরেকটি পোস্ট দেন।

১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত এই লেখিকা পোস্টে লিখেছেন, ‘টুইটারে হাজার হাজার অ্যাবিউজ–বিরোধী সেনা আমাকে অ্যাবিউজ করছে, আমার দোষ কেন আমি মঈন আলীকে “অ্যাবিউজ” করেছি। এর মানে মঈন আলীকে অ্যাবিউজ করা ঠিক নয়, আমাকে অ্যাবিউজ করা ঠিক। অপমান, অসম্মান, অত্যাচার জীবনে কম দেখিনি। যত দিন বাঁচি, তত দিন দেখতে হবে জানি। ঝাঁকে ঝাঁকে মুসলিম মৌলবাদী, ফেক বাম, আমাকে না পড়া লোক, আমার কিছুই না জানা লোক, পঙ্গপালের মতো আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, লক্ষ শকুন যেন জীবন্ত আমাকে খুবলে খাচ্ছে। পকেটমার সন্দেহে গরিব নিরীহ ছেলেকে উন্মত্ত জনতা যেমন পিটিয়ে মেরে ফেলে, সে রকম মনে হচ্ছিল আমার, যেন আমি সেই গরিব নিরীহ ছেলেটি।’ তসলিমার প্রশ্ন, ‘দোষটা কী ছিল আমার? একটি জোক (কৌতুক)।’

নিজের পোস্টে তসলিমা আরও লিখেছেন, ‘মঈন আলীকে নিয়ে লেখা টুইট ছিল কয়েক দিন আগের। সেটিতে দু–তিন হাজার লাইক পড়েছিল, কেউ কিন্তু তখন কোনো অভিযোগ করেনি। হঠাৎ গতকাল কবিতা কৃষ্ণন নামে একজন বামপন্থী আমাকে গালিগালাজ করলেন টুইটটি নিয়ে। অমনি শুরু হয়ে গেল, তথাকথিত বাম এবং মুসলিম মৌলবাদীদের তসলিমা অ্যাবিউজ । গালি, গালি এবং গালি। সংগঠিত মৌলবাদীরা আজও চালিয়ে যাচ্ছে অ্যাবিউজ। সাধারণ মানুষও এসে কুৎসিত কথা বলে যাচ্ছে। মাঝখানে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররাও যা নয় তা তো বললেনই, আমার টুইটার অ্যাকাউন্ট রিপোর্ট করার জন্যও ভক্তদের বলে গেলেন। ঘৃণার মতো সংক্রামক বোধ হয় ডেডলি ভাইরাসও নয়।’

সম্প্রতি ভারতের সংবাদমাধ্যম জানায়, আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে মদ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের লোগো থাকায় মঈন নিজের জার্সি থেকে সেই প্রতিষ্ঠানের লোগো তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু চেন্নাই দাবি করেছে, সংবাদটি ভুল।

এরপরই আইএসআইয়ের সঙ্গে মঈনকে জড়িয়ে ওই টুইট করেন তসলিমা। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের পেসার জফরা আর্চার টুইটটি রিটুইট করে লেখেন, ‘আপনি কি সুস্থ? আমার তো মনে হয় না!’

ইংল্যান্ডের হয়ে ৪টি টেস্ট ও ৩টি ওয়ানডে খেলা বেন ডাকেট তসলিমার টুইটার আইডি রিপোর্ট (বাতিল) করার অনুরোধ জানিয়ে টুইট করেন, ‘এই অ্যাপের এটাই সমস্যা। লোকে এমন কথাও বলতে পারে। বিরক্তিকর। অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। দয়া করে এই অ্যাকাউন্ট রিপোর্ট করুন।’

ডাকেট আরেক টুইটে মন্তব্য করেন, ‘বিশ্বাস হচ্ছে না। বিরক্তিকর টুইট। বিরক্তিকর মানুষ।’ তাঁর টুইটে ইংল্যান্ডের হয়ে ২২ ওয়ানডে ও ৩০ টি-টোয়েন্টি খেলা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান স্যাম বিলিংসের মন্তব্য, ‘দয়া করে সবাই তসলিমার অ্যাকাউন্ট রিপোর্ট করুন। বিরক্তিকর!’

আরেকটি টুইটে আর্চার তসলিমাকে মঈন আলী ও আইএসআই নিয়ে করা টুইটটি মুছে ফেলতে বলেছিলেন। তবে টুইটারে নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করে তসলিমার দ্বিতীয় টুইটটি এখনো আছে। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘নিন্দুকেরা ভালো করেই জানে, মঈন আলীকে নিয়ে করা টুইটটি ব্যঙ্গাত্মক। কিন্তু তারা এটাকে ইস্যু হিসেবে ধরে নিয়ে আমাকে অপদস্থ করছে। কারণ, আমি মুসলিম সমাজকে ধর্মনিরপেক্ষ করার চেষ্টা করি এবং ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধাচরণ করি। মানবজাতির অন্যতম মর্মান্তিক বিষয় হলো, নারীবাদের পক্ষ নেওয়া বামপন্থীরা নারীবাদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ইসলামপন্থীদের সমর্থন দেয়।’

আর্চার এই টুইটেরও কড়া উত্তর দেন টুইটারে, ‘ব্যঙ্গাত্মক? কিন্তু কেউ তো হাসছে না, এমনকি আপনিও নন, এখন অন্তত যে কাজটা আপনি করতে পারেন, তা হলো টুইটটি মুছে ফেলা।’