তাঁরও পরামর্শ, পারলে আইন নিজের হাতে তুলে নিন

সুইচ হিটে হাত পাকিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু শটটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছেছবি: এএফপি

ওয়ানডে সিরিজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বিতর্ক থামেনি। শেন ওয়ার্নের মতে, বিষয়টি নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলে ভালো হয়।

ইয়ান চ্যাপেল তো আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বলেছেন বোলারদের। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই দাবি গ্লেন ম্যাক্সওয়েলেরও। তাঁর দাবি, পারলে ‘সুইচ হিট’ থামানোর পথ বের করো!

মানে, ব্যাটসম্যানদের উদ্ভাবনী কৌশলের বিরুদ্ধে বোলারদেরও এমন কিছু বের করা উচিত—ওই তো, এক অর্থে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াই।

বেচারা বোলার! ডেলিভারির ঠিক আগ মুহূর্তে কিংবা বল ছাড়ার পর, ব্যাটসম্যান ডানহাতি থেকে বাঁ হাতি হয়ে গেলে বোলারের কিছুই করার থাকে না। তখন বোধ হয় বোলারের চেয়ে অসহায় পৃথিবীতে কেউ নেই!

ভেবে দেখুন, ম্যাক্সওয়েলের জন্য অফসাইডে একরকম ফিল্ডিং সাজিয়ে বল করছেন। কিন্তু বল ছোড়ার আগ মুহূর্তে ম্যাক্সওয়েল বাঁ হাতি হয়ে ফিল্ডিং সাজানোর পুরো ফায়দা তুলে নিলেন। এমনকি যে প্রান্ত থেকে বল করছেন, সেটার ফায়দাও তুলে নেওয়া যায় সুইচ হিটে।

ব্যাটসম্যানকে এভাবে ‘স্টান্স’ পাল্টাতে কারও অনুমতি নেওয়ার দরকার পড়ে না। খেলার আইনে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু বল করার ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম।

ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সুইচ হিটে বিশাল ছক্কা মারেন ম্যাক্সওয়েল
ছবি: এএফপি

আম্পায়ারকে বলে নিতে হয়, কোন প্রান্ত থেকে বল করা হবে। দৌড় শুরুর আগে ব্যাটসম্যান যে ‘স্টান্স’-এ দাঁড়িয়ে থাকেন, তা দেখে সাজাতে হয় ফিল্ডিং আর বলের লাইন-লেংথ। অথচ ব্যাটসম্যান কি না এই পুরো প্রচেষ্টার ফায়দা তুলে নিচ্ছেন বিনা নোটিশে!

বিষয়টি চ্যাপেলের ভালো লাগেনি। ওয়ানডে সিরিজে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি এই ক্রিকেট বিশ্লেষক তবু অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের ওপর পুরোপুরি খুশি হতে পারেননি।

বিশেষ করে ম্যাক্সওয়েলের সুইচ হিট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন চ্যাপেল। কাল শেষ ম্যাচে সুইচ হিটে ছক্কা মেরে বলকে ১০০ মিটার দূরত্বে আছড়ে ফেলেন ম্যাক্সওয়েল। পুরো সিরিজেই যখন খুশি তখন সুইচ হিট শট খেলার চেষ্টা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা।

ম্যাক্সওয়েলের সুইচ হিট বোলারদের জন্য আতঙ্ক। এই শটে তিনি বেশ সফল
ছবি: এএফপি

ম্যাক্সওয়েলের জন্য এই শট অনেকটা সহজাত বলেই সফলতার হারও ভালো।কিন্তু চ্যাপেলের যুক্তি ছিল, ‘কীভাবে খেলার একদিক অর্থাৎ বোলারদের আম্পায়ারের কাছে জানাতে হয় কীভাবে তারা বল করবে, কিন্তু ব্যাটসম্যান ডান হাতে দাঁড়াচ্ছে, আমি ফিল্ডিং দলের অধিনায়ক, আমি ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য ফিল্ডিং সাজালাম এবং বল পৌঁছানোর আগে ব্যাটসম্যান বাঁ হাতি হয়ে গেল! সে বাঁ হাতি হয়ে যাচ্ছে, এর পেছনে মূল কারণ হলো সে ওই ফিল্ডিংয়ের (ডানহাতির জন্য সাজানো) সুযোগ নিতে চায়। যে প্রশাসকেরা এসব আইন তৈরি করেন, তাঁরা একটু বলবেন কীভাবে এটা অন্যায় না?’

খেলোয়াড়ি জীবনে ভীষণ কুশলী এই অধিনায়ক আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বলেছিলেন বোলারদের, ‘আমি যদি অধিনায়ক হতাম, তাহলে নিজে বল করতে যেতাম। আমি আম্পায়ারকে বলতাম, আমি ডানহাতি বোলার এবং ওভার দ্য উইকেটে বল করব। এরপর দৌড়ে গিয়ে রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করতাম। আম্পায়ার নির্ঘাত অভিযোগ করত এবং আমি বলতাম, তাহলে আপনি ব্যাটসম্যানের ওই অন্যায় কাজটাও থামান, আমিও অন্যায়টা করব না।’

চ্যাপেলের এই কথায় সায় দিয়েছিলেন ওয়ার্ন, ‘বোলার হিসেবে আমাদের বেছে নিতে হয় কোন হাতে বল করব, কোন প্রান্ত থেকে করব। ওটা (সুইচ হিট) ঠিক ভালো লাগে না। এটা নিয়ে কথা বলা দরকার। কোনটা ঠিক, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার।’

কাল তৃতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষে দুই কিংবদন্তির এসব কথা ম্যাক্সওয়েলের কানে তুলেছিলেন সংবাদকর্মীরা।

অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডারের কাছে কথাগুলো ভালো না লাগাই স্বাভাবিক, ‘খেলার আইনের ভেতরেই আছে এটি (সুইচ হিট)। আমি মনে করি, কয়েক বছরে ব্যাটিং বিবর্তিত হতে হতে অনেক উন্নতি ঘটেছে। ঠিক এ কারণেই অনেক বড় স্কোর তাড়া করে জয় আসছে কিংবা বড় বড় স্কোর হচ্ছে। এটার সঙ্গে লড়াইয়ের দায়িত্বটা বোলারদের। প্রতিদিনই তাদের দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়।’

ম্যাক্সওয়েল আরেকটু ব্যাখ্যা করলেন, ‘ব্যাটসম্যানদের থামাতে তাদের নতুন নতুন কৌশলের প্রয়োগের ঘটাতে হয়। ঠিক যেভাবে তারা মাঠের এক পাশে ফিল্ডিং সাজিয়ে রান করার জায়গা রাখে না। আমি মনে করি ব্যাটসম্যানদের কৌশল বিবর্তিত হতে হতে যে পর্যায়ে উঠে এসেছে, বোলারদেরও এই মানে উঠে আসা উচিত। দেখবেন, নাকল-বল কিংবা ওয়াইড ইয়র্কার দিয়ে ফিল্ডিং সাজানো হচ্ছে বা অন্যান্য কৌশল ফলানো হচ্ছে। ওয়ানডে ক্রিকেটের কৌশল অনেক পাল্টেছে। এটাও (সুইচ হিপ) তার ভিন্ন এক কৌশল।’

বোলাররা, শুনতে পাচ্ছেন?