তামিম ও বাঁহাতিদের দুঃস্বপ্নের শেষ কোথায়

আবারও কেমার রোচের রাউন্ড দ্য উইকেট বোলিংয়ের শিকার তামিম ইকবাল।ছবি: শামসুল হক

তামিম ইকবালের অনলাইন আড্ডার কথা মনে আছে? ক্রিকেটারদের সঙ্গে একদিন হাসিঠাট্টায় তামিম তাঁর ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার কেমার রোচ–ভীতির কথা বলছিলেন। আজ চট্টগ্রাম টেস্টেও সেই রোচের বলেই আউট হন তামিম। এমনটা এর আগেও দেখা গেছে। ‘রাউন্ড দ্য উইকেট’ থেকে আসা নতুন বল যেন তামিমের জন্য বিভীষিকা। হয় ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হচ্ছেন, নয়তো এলবিডব্লু। এ দুটি না হলেও বেরিয়ে যাওয়া বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ।

রোচের বোলিংয়ে তামিমের গল্পটা এমনই। ওয়ানডে ক্রিকেটে এই রোচের বলেই ৭ বার আউট হয়েছেন তামিম। টেস্ট ক্রিকেটে এ নিয়ে চতুর্থবার। তামিম যেন রোচেরই উইকেট! তবে শুধু তামিম নন, রোচ বাঁহাতিদের জন্যই যম। গত কয়েক বছর বাঁহাতিদের একরকম বলেকয়েই আউট করছেন এই পেসার।

বাঁহাতিদের বিপক্ষে রোচের সাফল্যের মূল রাউন্ড দ্য উইকেট বোলিং। আজকাল নতুন বলটা হাতে পাওয়ার পর ওপাশে যদি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকে, তাহলে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকেই বোলিং শুরু করেন রোচ। কিছু বল ভালো লেংথ থেকে অ্যাঙ্গেলের কারণে ভেতরে আসে, কিছু সুইং করে বেরিয়ে যায়। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের ব্যাটের দুই পাশ দিয়েই পরাস্ত করে যান রোচ। সে কারণেই সাফল্য ধরা দেয় দ্রুত। বিশ্বের সব বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জন্যই ডানহাতি ‘বোলারের রাউন্ড দ্য উইকেট’ থেকে আসা বল অস্বস্তিকর।

ডান হাতি বোলারের ‘রাউন্ড দ্য উইকেটে’ এসে বোলিং দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে তামিমের জন্য।
ছবি: প্রথম আলো

টেস্ট বোলারদের এই কৌশল বুঝতে অনেক সময় লেগেছে। টেস্টের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ডানহাতি বোলারদের রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বোলিং করা ছিল দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিকল্পনার অংশ। বোলাররা ওভার দ্য উইকেট থেকে বোলিং করেই অভ্যস্ত। সেটি কাজে না এলে হয়তো রাউন্ড দ্য উইকেটে বোলিং করার ভাবনাটা ভাবেন তাঁরা। ব্যাটসম্যানরা ততক্ষণে উইকেটে হয় থিতু হয়ে যায়, বলও হয়ে যায় পুরোনো। আজ সেটি করেননি রোচ। বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি ওপেনার দেখে শুরু থেকেই রাউন্ড দ্য উইকেটে বোলিং করেছেন তিনি।

২০০৫ সালের অ্যাশেজে রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বোলিং করেছিলেন ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। বাঁহাতি অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টের বিপক্ষে সেটি দারুণ কাজে দেয়। গিলক্রিস্ট ডানহাতি পেসারকে রাউন্ড দ্য উইকেটে একেবারেই পছন্দ করতেন না। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা এই উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যানের জন্য ২০০৫ অ্যাশেজ ছিল ভুলে যাওয়ার মতোই। সেবার ৯ ইনিংসে ব্যাটিং করে ৮ বারই বাঁ হাতি বোলারের রাউন্ড দ্য উইকেট বোলিংয়ের শিকার হন তিনি। এর মধ্যে ফ্লিনটফের বলেই চারবার। ফ্লিনটফের সেই কৌশলই গত পাঁচ বছর ধরে বোলাররা অনুসরণ করে যাচ্ছেন। সাফল্যও পাচ্ছেন।

গত পাঁচ বছরে টেস্ট ক্রিকেটে ডানহাতি বোলারদের রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে বোলিং করার হার শতকরা ৪০ ভাগ। এর আগের ১০ বছরে যা ছিল মাত্র ২১ ভাগ। গত পাঁচ বছরে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা বোলারদের উইকেট নেওয়ার গড় ২৭। ওভার দ্য উইকেটে গড় ৩৭। এর আগের ১০ বছর রাউন্ড দ্য উইকেটে গড় ছিল ৩৮, ওভার দ্য উইকেটে ৩৭।

গত পাঁচ বছরে টেস্ট ক্রিকেটের সেরা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের রেকর্ডেও ভাটা পড়েছে ডানহাতিদের রাউন্ড দ্য উইকেটের বোলিংয়ে। গত অ্যাশেজে যেমন ডেভিড ওয়ার্নারকে বলে কয়ে আউট করেন স্টুয়ার্ট ব্রড। মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, হেনরি নিকোলস, ররি বার্নস, টম ল্যাথাম, দিমুথ করুনারত্নে, বেন স্টোকস, ডিন এলগারদেরও রান করার হার কমে গেছে ডানহাতিদের রাউন্ড দ্য উইকেট–তত্ত্বে।