তামিম-সাকিবের ব্যাটে বোলারদের লড়াইয়ের পুঁজি

তামিম-সাকিবের জুটিতে লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
তামিম-সাকিবের জুটিতে লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
>ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ উইকেটে ১৭১ রান তুলেছে বাংলাদেশ

টানা পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে হার। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সমতায় ফিরতে হলে স্কোরবোর্ডে যত বেশি সম্ভব রান তুলতে হতো। সেটি যে তামিম ইকবালের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছিল তা বলাই বাহুল্য। ওয়ানডে সিরিজে রান ফোয়ারা ছোটালেও টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে হতাশ করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে দেখা গেল সেই পরিণত তামিমকেই। তাঁর ও সাকিবের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভর করে ৫ উইকেটে ১৭১ রান তুলেছে বাংলাদেশ।

ফ্লোরিডার লডারহিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ঘরের পাশের মাঠের মতো। হাতের তালুর মতো চেনা। কিন্তু প্রবাসী বাঙালিদের কল্যাণে তামিমদের কাছে মাঠটা অচেনা মনে হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের সময় গ্যালারি থেকে ভেসে এসেছে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ চিৎকার। পঞ্চম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে নামা বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানেরা এই প্রেরণাটুকু ভালোই কাজেই লাগিয়েছেন। তামিম-সাকিবের ৫০ বলে ৯০ রানের ঝোড়ো জুটিটা সমর্থকেরাও দারুণ উপভোগ করেছেন।

দলের এই দুই সিনিয়র খেলোয়াড়ের ব্যাটিংয়েই মূলত লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। তার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের টপ অর্ডারে দেখা গেছে সেই পুরোনো চিত্রই। তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে নামা লিটন দাস ফিরেছেন দ্বিতীয় ওভারেই। জায়গা করে ইনসাইড আউট খেলতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন লিটন (১)। চতুর্থ ওভারে অযথাই রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে উইকেট দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম (৪)। এ দুটি উইকেটই অ্যাশলে নার্সের। সৌম্য সরকার এসে ছটফটানিয়া ব্যাটিং করে ফিরেছেন ১৪ রান করে।

অন্য প্রান্তে তামিম খেলেছেন তাঁর নিজস্ব ঢংয়ে। বাজে বল পেলে ছাড়েননি। রোটেট করেছেন স্ট্রাইক। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়ে রানের গতি বাড়িয়েছেন সাকিব। প্রথম ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ৩৫। অষ্টম ওভারে সৌম্য আউট হওয়ার পর তামিমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাকিব। এরপর ধীরে ধীরে হাত খুলেছেন দুজনেই। ১০ম ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৬৭ ছিল যে স্কোর, ১৫তম ওভার শেষে তা ৩ উইকেটে ১১৬। ওভার প্রতি রান রেট ৭.৭৩।

ততক্ষণে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ছয় নম্বর ফিফটি পেয়ে যান তামিম। তার আগে ১৪তম ওভারে ৪৭ রানে ‘জীবন’ পেয়েছেন রোভম্যান পাওয়েলের হাতে। সুযোগটা আরও ভালোভাবেই কাজে লাগাতেই হয়তো ১৬তম ওভার থেকে আরও বিধ্বংসী হতে শুরু করেছিলেন তামিম। আন্দ্রে রাসেলের করা এই ওভারের প্রথম পাঁচ বল থেকে ২২ রান (৬,০,৬,৪,৬) নেওয়ার পর শেষ বলেও ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন লং অনে।

৪টি ছক্কা ও ৬টি চারে সাজানো তাঁর ৪৪ বলে ৭৪ রানের ইনিংসটা দারুণ বিনোদন দিয়েছে লডারহিলের প্রবাসী বাঙালিদের। রাসেলের করা সেই ওভারে (১৬তম) এ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০০ রানের মাইলফলকও টপকে যান তামিম।

সাকিব অপর প্রান্তে খেলেছেন অধিনায়কোচিত ইনিংস। ৩০ বলে ছুঁয়েছেন ফিফটির কোটা। টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে এটাই তাঁর প্রথম ফিফটি। আর এই সংস্করণে দুই বছরেরও বেশি সময় বিরতির পর ফিফটির দেখা পেলেন সাকিব। সর্বশেষ ফিফটি পেয়েছিলেন ২০১৬ সালের মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) লডারহিলের এ মাঠে ৫ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাকে সাকিব কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ৩৮ বলে ৬০ রানের ইনিংস। একটি ছক্কা ও নয়টি চারে ইনিংসটি সাজান তিনি।

শেষ ৫ ওভারে ৫৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ। তারপরও গোটা ইনিংসে ‘ডট’ বলের সংখ্যা ৪৪টি। ব্যাটসম্যানেরা এই ‘ডট’ বলের সংখ্যা কমাতে পারলে টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহটা হয়তো নতুন করে লেখানো যেত। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এই ইনিংস দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হলেও তামিম-সাকিবের ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে সমর্থকদের।