তামিমদের বিপক্ষে না খেলে উবারে খাবার ডেলিভারির চাকরি

সমারসেটেও খেলেছেন মিকেরেন।ছবি: টুইটার

করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বকেই জীবনের অন্য রূপ দেখাতে বাধ্য করেছে। ক্রীড়াজগৎও এর বাইরে নয়। অর্থবিত্তে টইটম্বুর ইউরোপিয়ান ফুটবলে অর্থের জন্য হাহাকার দেখা গেছে এবার। দেউলিয়া হতে বসেছিল অনেক ক্লাব। ক্রিকেট–দুনিয়াও এর প্রভাব কম টের পায়নি। বড় থেকে ছোট—সব ক্রিকেট বোর্ডই আর্থিক ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফুটবলার, ক্রিকেটার কিংবা অন্য খেলার বড় তারকাদের অন্য রূপও দেখা গেছে এবার।

এ দুঃসময়ে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারকারা। আর নিজেদের বেলায় অনুশীলন করতে না পারা কিংবা খেলায় ফিরতে না পারার আফসোস করতে দেখা গেছে অনেককে। এখন ধীরে ধীরে খেলা শুরু হলেও মাঠে দর্শক ফেরেনি সব জায়গায়। এ নিয়েও আফসোস আছে। কিন্তু এসব তো শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেট জাতির গল্প! করোনাকাল এর বাইরেও যে কত স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে, সেটা টের পাওয়া গেল এক টুইটে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার কথা ছিল নেদারল্যান্ডসের পল ফন মিকেরেনের। কিন্তু করোনা বিশ্বকাপটাই দিয়েছে পিছিয়ে। প্রতিকূল সময়ে টিকে থাকতে মিকেরেন চাকরি নিয়েছেন উবারে খাবার ডেলিভারির দেওয়ার।

মিকেরেনের আন্তর্জাতিক অভিষেক ২০১৩ সালে। গত সাত বছরে ৫টি ওয়ানডের সঙ্গে ৪১টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এই পেসার। খেলেছেন ২০১৬ বিশ্বকাপেও। ভারতে অনুষ্ঠিত সে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের গ্রুপসঙ্গী ছিল নেদারল্যান্ডস। মিকেরেন বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত বল করেছিলেন। ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে নেন সৌম্য সরকার ও নাসির হোসেনের উইকেট। আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তো ১১ রান দিয়েই পেয়েছিলেন ৪ উইকেট!

২০২০ সালেও দলকে বিশ্বকাপে নিয়ে আসেন এই পেসার। বাছাইপর্বে ৯ ম্যাচে নেন ১৫ উইকেট। বিশ্বকাপের মূল পর্বে এবারও প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশের সঙ্গী ছিল নেদারল্যান্ডস। স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়াও ছিল গ্রুপ ‘বি’তে। করোনায় সব থমকে না গেলে গত ১৯ অক্টোবরেই স্কটিশদের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে বোলিং করার কথা ছিল তাঁর। ২১ অক্টোবরে বল করার কথা ছিল তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমদের বিপক্ষে।
করোনাভাইরাস সব পরিকল্পনাই ভেস্তে দিয়েছে। বিশ্বকাপ পিছিয়ে গেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বিশ্বকাপটা এখন আর অস্ট্রেলিয়ায় নয়, হবে ভারতে। আর এবারের বিশ্বকাপ হবে ২০২২ সালে। ক্রিকেটের বড় শক্তিরা এখন বিশ্বকাপ ভুলে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে মেতেছে। ইংল্যান্ড, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলো সিরিজও আয়োজন করছে। আর এসবের ফাঁকে আড়ালে চলে যাচ্ছে ক্রিকেট শক্তিতে পিছিয়ে থাকা দলগুলো। সেসব দেশের ক্রিকেটারদের কী অবস্থা, সেটা বোঝা গেছে মিকেরেনের এক টুইটে।

আকমলের সঙ্গে কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে মিকেরেন।
ছবি: টুইটার

বিশ্বজুড়ে এভাবে মহামারি ছড়িয়ে না পড়লে এবারের বিশ্বকাপের পর্দা নামত গতকাল। ১৫ নভেম্বর ছিল ফাইনাল। এ নিয়ে টুইট করেছে ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর টুইটার অ্যাকাউন্ট, ‘আজ এমসিজিতে ২০২০ সালের ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ছিল।’ সে টুইটের জবাবেই কঠিন বাস্তবতার কথা শুনিয়েছেন মিকেরেন। ২৭ বছর বয়সী ডাচ পেসারের আক্ষেপটা বিদ্ধ করবে যে কাউকে, ‘এখন আমার ক্রিকেট খেলার কথা ছিল। অথচ এবারের শীত মৌসুমে আমাকে উবার ইটসে খাবার ডেলিভারির কাজ করা লাগছে। ব্যাপারটা মজার, কীভাবেই না বদলে যায় সবকিছু। (তবু) হাসি থামাবেন না।’

সাত বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, এমন একজনকে খাবার ডেলিভারি করে জীবন কাটাতে হচ্ছে! করোনা আসলেই বারবার চমকে দিচ্ছে সবাইকে।