তাহলে লিজেন্ডস কাপই ছিল করোনার আখড়া?

শচীন টেন্ডুলকার।ছবি: টুইটার

মাঠে দর্শক ছিল। এর মধ্যে অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। লিজেন্ডস ক্রিকেট নামে পরিচিতি পাওয়া ‘রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ’ টুর্নামেন্টটাই কি ভারতের সাবেকদের নিয়ে গড়া দলটার জন্য ধাক্কা হয়ে এল?

অবস্থাদৃষ্টে তেমনটা মনে হতে বাধ্য। টুর্নামেন্টে খেলা ভারতের কিংবদন্তি ও সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যে এ নিয়ে তিনজন যে গত দুদিনে করোনায় আক্রান্ত হলেন! গত পরশু শচীন টেন্ডুলকারের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দুঃসংবাদ মিলেছে। ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তির করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরের কিছুক্ষণ পর এসেছে টুর্নামেন্টে ভারতের দলের হয়ে খেলা আরেক সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের আক্রান্ত হওয়ার খবর।

আর কাল করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাটা দুই থেকে তিন হয়ে গেল সুব্রামানিয়াম বদ্রিনাথের কারণে। সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে, সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্রচারণার উদ্দেশে আয়োজিত টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে করোনার আক্রমণের শিকার হয়ে পড়ছেন ক্রিকেটাররা।

কোভিড-১৯ টেস্টে পজিটিভ হওয়ার সংবাদটা কাল টুইটারে জানিয়েছেন বদ্রিনাথ। এই মুহূর্তে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন ৪০ বছর বয়সী সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান।
টুইটারে বদ্রিনাথের বিবৃতির শুরুটা অবশ্য পরশু টেন্ডুলকার যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেটির সঙ্গে মিলে যায়, ‘করোনার বিষয়ে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছিলাম, নিয়মিত পরীক্ষাও করিয়েছি। যা-ই হোক, আমার কোভিড-১৯ টেস্টে পজিটিভ এসেছে। মৃদু কিছু উপসর্গ আছে।’

২০১৮ সালে ভারতের জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়া বদ্রিনাথ সব নিয়মকানুন মেনে চলার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন, ‘আমি সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব। বাসায় নিজেকে আইসোলেশনে রাখব, আর আমার চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে যা যা করা লাগে সব করব।’

বদ্রিনাথসহ টেন্ডুলকার-ইউসুফরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন, সেটা তো সব ক্রিকেটপ্রেমীরই প্রার্থনা। তবে গত দুদিনে ভারতীয় দলের এভাবে একের পর এক করোনার খবরে লিজেন্ডস কাপের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে।

কদিন আগে লিজেন্ডস ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে শচীন টেন্ডুলকার।
ছবি: টুইটার

ভারতের রায়পুরে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টটিতে ভারত, বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা—৬টি দল অংশ নিয়েছিল। টেন্ডুলকার, বীরেন্দর শেবাগ, ব্রায়ান লারা, সনৎ জয়াসুরিয়া, জ্যাক ক্যালিসদের মতো কিংবদন্তিদের আরেকবার মাঠে ব্যাট-বল হাতে আলো ছড়াতে দেখে নস্টালজিয়ায় মজেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

এতটুকু পর্যন্ত সব ঠিকই আছে, কিন্তু করোনার এই সময়ে টুর্নামেন্টটা আয়োজন করা, তা-ও মাঠে দর্শকের উপস্থিতিতে...সেটা ঠিক ছিল কি না, তা আবার প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে।

প্রশ্ন উঠবে নাই–বা কেন! উপমহাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে করোনা আবার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে, ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে মৃত্যুর হারও। এমন অবস্থায় একদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের বর্তমান দলের সিরিজের মাঝপথে এসে যেখানে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) দর্শক ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেখানে রায়পুরে টুর্নামেন্টটা হয়েছে কিনা গ্যালারিভর্তি দর্শক নিয়ে!

ইংল্যান্ডের সঙ্গে কোহলি-রোহিতদের বর্তমান ভারতীয় দলের চার টেস্টের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে মাঠে দর্শক ছিল, পাঁচ টি-টোয়েন্টির প্রথম দুটিতে দর্শক থাকলেও হঠাৎ করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তৃতীয় ম্যাচ থেকে দর্শকশূন্য মাঠে খেলা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই যেখানে এত নিরাপত্তার আয়োজন, জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আয়োজিত লিজেন্ডস কাপ ক্রিকেট সেখানে ছিল বেপরোয়া। ফাইনাল পর্যন্ত মাঠে দর্শক ছিল।

তা-ও কী! টিভির পর্দায়ই দেখা গেছে, দর্শকের অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। সামাজিক দূরত্ব বা অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালন তো অনেক দূরের ব্যাপার! টেন্ডুলকার-ইউসুফদের এভাবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর টুর্নামেন্টে জৈব সুরক্ষা বলয় ঠিকভাবে পালন করা হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অবশ্য এখন পর্যন্ত শুধু ভারতীয় দলেই করোনা এভাবে হানা দেওয়ার খবর এসেছে। তাই সমস্যাটা টুর্নামেন্টের আয়োজক কর্তৃপক্ষের ছিল নাকি ভারতীয় দলের, তা আলোচনার দাবি রাখে বটে।