তিন ওয়ানডে খেলেই বর্ষসেরার তালিকায় লিটন-তামিম

বছরের সেরাদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন লিটন ও তামিম।ফাইল ছবি: প্রথম আলো

২০২০ সালে বাংলাদেশের এমনিতেও খুব কম ওয়ানডে খেলার কথা ছিল। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তড়িঘড়ি করে আয়োজিত তিন ওয়ানডে ছাড়া আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে একটি সিরিজ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি সে সিরিজটাও হতে দেয়নি। বছরটা তাই মাত্র ৩ ওয়ানডে খেলেই শেষ করছে বাংলাদেশ দল। তবে মজার ব্যাপার হলো, মাত্র এই তিন ওয়ানডে খেলেই এ বছরের সেরাদের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস!

করোনাভাইরাস শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দলের সূচিতেই প্রভাব ফেলেছে। আন্তর্জাতিক সূচিতে এ বছর আর কোনো ওয়ানডে খেলবে না কোনো দল। তাই এখনই এ বছর ওয়ানডের সেরাদের তালিকা টেনে ফেলা যাচ্ছে। খেলার হিসাব টানলে দেখা যাচ্ছে, এক অস্ট্রেলিয়া ছাড়া কোনো দলের ম্যাচ সংখ্যাই দুই অঙ্কে যেতে পারেনি। এবার পারফরম্যান্সের সীমাটাও তাই বেশ কম ছিল। ওয়ানডের বর্ষসেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যেমন তিন ওয়ানডে খেলেই জায়গা পেয়ে যাচ্ছেন তামিম ও লিটন।

বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংসটি খেলেছিলেন লিটন।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

২০২০ সালটা বাংলাদেশ দলের ব্যস্ত থাকার কথা ছিল টি-টোয়েন্টি নিয়ে। অক্টোবর-নভেম্বরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তো ছিলই। হওয়ার কথা ছিল এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিও। কিন্তু করোনাভাইরাস আন্তর্জাতিক সূচিতে বিশাল এক শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। মার্চ মাসের পর অনেক দলই এখনো ঘরের মাঠে খেলা ফেরাতে পারেনি। অনেকে আবার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ দিয়ে ক্রিকেটে ফিরেছে। অধিকাংশ দলই আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এ দুই ফরম্যাটেই ব্যস্ত ছিল। সবচেয়ে বেশি ১৩টি ওয়ানডে খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ৯টি করে ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড ও ভারত। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তাই এ তিন দেশেরই দাপট।

এ বছরের ওয়ানডের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যানটা ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যেই উজ্জ্বল হয়ে আছেন বাংলাদেশের লিটন ও তামিম। মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন এ দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। দুটি করে সেঞ্চুরি পেয়েছেন দুজনই, ছিল দেড় শ ছাড়ানো ইনিংস। এ বছর ওয়ানডেতে আর কোনো ব্যাটসম্যানই দেড় শ ছাড়ানো ইনিংস খেলতে পারেননি। বছরের সর্বোচ্চ ইনিংসটিও এবার লিটনের। গত ৬ মার্চ তার রেকর্ড গড়া ১৭৬ রানের ইনিংসের পরই আছে ৩ মার্চ তামিমের খেলা ১৫৮ রানের ইনিংসটি।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রানে ছিলেন তামিমও।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই সিরিজে ৩১১ রান করেছিলেন লিটন, তামিম করেছিলেন তার চেয়ে ঠিক এক রান কম। দুজনই এক ম্যাচে অপরাজিত থাকায় তাঁদের গড়ও দেড় শ ছাড়ানো। তবে স্বাভাবিকভাবেই ০.৫০ গড়ে এগিয়ে লিটন।

অবশ্য লিটনের ১৫৫.৫০ গড়টাও বছরের সেরা গড় নয়! দক্ষিণ আফ্রিকার হেইনরিখ ক্ল্যাসেন এদিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে। ৩ ম্যাচে ২৪২ রান করা এই ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন মাত্র একবার। গড়টাও তাই তাঁর ২৪২। ক্ল্যাসেনের স্বদেশি ডেভিড মিলারও ৪ ইনিংসে ১৭৩ রান নেওয়ার পথে আউট হয়েছেন মাত্র একবার। ওমানের মোহাম্মদ নাদিম ৫ ম্যাচে ১৭২ রান করে আছেন তিন নম্বরে। বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে তাই থাকতে হচ্ছে চার আর পাঁচেই।

লিটন–তামিম অবশ্য সে দুঃখ কিছুটা ভুলতে পারেন অন্য এক তালিকা দেখে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের সে ম্যাচে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ২৯২ রান তুলেছিলেন তাঁরা। বাংলাদেশের সব রেকর্ড ভাঙা সে জুটিই এ বছর ওয়ানডের সেরা জুটি হয়েছে। বেশ অনেকটা পেছনে আছে অ্যারন ফিঞ্চ–ডেভিড ওয়ার্নারের ২৫৮ রানের জুটি। জানুয়ারিতে ভারতের ২৫৫ রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ান দুই ওপেনার ম্যাচ শেষ করেছিলেন সেই জুটি গড়ে।

বছরের সর্বোচ্চ জুটি এ দুজনের।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সর্বোচ্চ জুটিতে দুইয়ে থাকলেও এককভাবে ফিঞ্চ আছেন সবার ওপরে। ১৩ ইনিংসে ৬৭৩ রান করেছেন ফিঞ্চ। সেরা পাঁচে অস্ট্রেলিয়ারই চারজন। স্টিভ স্মিথ (৫৬৮), মারনাশ লাবুশেন (৪৭৩) ও ডেভিড ওয়ার্নারের (৪৬৫) পর জায়গাটি ভারতের কে এল রাহুলের (৪৪৩)। ছয়ে বিরাট কোহলি (৪৩১)।

শীর্ষ দশে ভারতের শ্রেয়াস আয়ারও আছেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও জনি বেয়ারস্টো আছেন আট আর নয়ে। ছয়ে থাকা নামটি চমকে দিতে পারে অনেককেই। এ বছর ছয় ওয়ানডেতে ১০০ গড়ে চার শ রান তুলেছেন ওমানের আকিব ইলিয়াস। লিটন ও তামিম আছেন ১২ ও ১৩ তে।