তিনি জানতেন, বাংলাদেশকে হারাতে পারবেন

অবিশ্বাস্যভাবে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিলেন কার্তিক। প্রথম আলো ফাইল ছবি
অবিশ্বাস্যভাবে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিলেন কার্তিক। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রেখেই সেদিন বাংলাদেশকে হারিয়েছিলেন, জানালেন দীনেশ কার্তিক

বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের বীরত্বগাথা নিয়ে আজকাল প্রায়ই দীনেশ কার্তিককে কথা বলতে দেখা যায়। কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন, নিজের ওই ইনিংসের হাইলাইটস বারবার দেখতে পছন্দ করেন তিনি। এবার জানালেন, তিনি আগে থেকেই জানতেন, বাংলাদেশকে হারাতে পারবেন।


ম্যাচটা ছিল বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়।


বিশেষ করে মোস্তাফিজুর রহমানের ১৮তম ওভারটার পরে তো আরও বেশি। তাঁর আঁটসাঁট বোলিংয়ে ১৮তম ওভারে মাত্র ১ রান তুলেছিল ভারত। তাতেই জয়ের আশা বাড়ে বাংলাদেশের। শেষ দুই ওভারে ৩৪ লাগবে, এমন সমীকরণে উইকেটে আসেন দীনেশ কার্তিক। রুবেলের করা ১৯তম ওভারে ২২ রান তোলেন তিনি। শেষ ওভারে ১২ লাগলেও আসল ক্ষতি হয়েছিল রুবেলের ওভারেই। শেষ ওভারেও সৌম্য শেষ চেষ্টা করেছিলেন ভারতের রানের গতিতে লাগাম দেওয়ার। পঞ্চম বল পর্যন্ত পেরেছিলেনও।

২০১৮ সালে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে বাংলাদেশকে হারাতে ভারতের দরকার ছিল ১ বলে ৫ রান। বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৬৭ রানের ম্যাচটি এসে ঠেকে ইনিংসের শেষ বলে। বোলার সৌম্য সরকার আগের বলেই আউট করেছিলেন অলরাউন্ডার বিজয় শঙ্করকে। শেষ বলে নিশ্চয়ই ৫ রান দিয়ে বসবেন না সৌম্য। স্ট্রাইকে থাকা দিনেশ কার্তিক নিশ্চয়ই শেষ বলে ৬ মারবেন না। বাংলাদেশি সমর্থকদের মনে হয়তো এমন সম্ভাবনাগুলোই উঁকি দিচ্ছিল।


কার্তিকের ওপর অবশ্য সেদিন ভর করেছিলেন পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ন চন্দরপল কিংবা নিদেনপক্ষে জিম্বাবুয়ের ব্রেন্ডান টেলর। তাঁরা প্রত্যেকেই ম্যাচ জেতার জন্য শেষ বলে চার বা তার চেয়ে বেশি রান প্রয়োজন দেখে ছক্কা মেরে সকল সংশয় উড়িয়ে দিয়েছিলেন। টেলরের উদাহরণটা তো আবার বাংলাদেশের বিপক্ষেই। একই পরিস্থিতিতে ইনিংসের শেষ বলে মাশরাফিকে সীমানাছাড়া করেছিলেন এই জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান। ততক্ষণে মাত্র ৭ বলে ২৩ রানে করে ফেলেছিলেন কার্তিক। শেষ বলটাও যেন চার-ছক্কা না হয়, সে জন্য কার্তিকদের নাগালের বাইরে বল ফেলেছিলেন সৌম্য। সৌম্যর ওয়াইড ইয়র্কারটি নিখুঁত ছিল না। আবার একদম বাজে বলও ছিল না। কিন্তু দিনটা ছিল কার্তিকের। তিনি ওয়াইড ইয়র্কারকে কাভারে ছক্কা বানিয়ে ছাড়েন। বল বাউন্ডারি পার হতেই কার্তিক দুই হাত বাতাসে উঁচিয়ে উল্লাসে মাতেন। আর দুই হাত মাথায় দিয়ে বসে পড়েন সৌম্য। কার্তিকের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ভারত নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল জেতে ৪ উইকেটে।



স্টার স্পোর্টস তামিলের 'মাইন্ড মাস্টার্স শো' তে কার্তিক জানিয়েছেন, অমন একটা মুহূর্তের জন্য বহুদিন অপেক্ষা করছিলেন। মহেন্দ্র সিং ধোনির কারণে কখনই ভারতের মূল দলে নিজের জায়গা পাকা করতে না পারা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান এই ম্যাচটাকেই বেছে নিয়েছিলেন নিজের জাত চেনানোর জন্য, 'অমন একটা মুহূর্তের অপেক্ষাই করছিলাম আসলে, সবাইকে দেখানোর জন্য যে আমিও পারি। এমন একটা সুযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমি প্রচুর অনুশীলন করেছি। তাই অবশেষে যখন অমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম, সবকিছুই যেন আপনা-আপনি হতে থাকল। সেই পর্যায়ে বেশ মজাই লেগেছিল। প্রচুর অনুশীলন করার ফলে অমন পরিস্থিতে কি করতে হয় সেটা আমার জানা ছিল। আমার বিশ্বাস ছিল আমি ম্যাচটা বের করে আনতে পারব। দুই ওভারে ৩৪ রান লাগত, তাতে কী!'