দল ঘোষণার আগে ডমিঙ্গোর জন্য অপেক্ষা

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।ছবি: প্রথম আলো

১৬ জনের দল ঠিক করে অপেক্ষায় আছেন মিনহাজুল আবেদীন। অপেক্ষা নিউজিল্যান্ড থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যাওয়া প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর মতামত জানা।

কোচের সঙ্গে কথা বলে শ্রীলঙ্কাগামী দলে আরও দু–একজন ক্রিকেটার ঢোকানোর ইচ্ছা প্রধান নির্বাচকের। আজ সন্ধ্যায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের বাসায় বোর্ড কর্মকর্তা ও নির্বাচকদের এক সভার পরও সেটিই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শ্রীলঙ্কা সফরের দলটা শেষ পর্যন্ত হবে ২০–২১ জনের। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ডমিঙ্গোর ঢাকায় ফেরার কথা ৯ এপ্রিল রাতে। তার আগে কালই তাঁর সঙ্গে দল নিয়ে আলোচনা করার কথা নির্বাচকদের।

নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলকে যে রকম কঠোর কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, শ্রীলঙ্কায় ব্যাপারটা তত কঠোর হবে না বলেই এখন পর্যন্ত জানে সবাই।

মিনহাজুল জানিয়েছেন, ১২ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় গিয়ে তিন দিনের কোয়ারেন্টিন করেই অনুশীলন করতে পারবে বাংলাদেশ দল। ২১ এপ্রিল প্রথম টেস্ট শুরুর আগে ১৫ ও ১৬ এপ্রিল অনুশীলন, এরপর ১৭–১৮ এপ্রিল ক্রিকেটাররা দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন নিজেদের মধ্যে। সে জন্যই আরও কয়েকজনকে দলের সঙ্গে পাঠাতে চান মিনহাজুল, যাঁরা সিরিজের আগে দেশে ফিরে আসবেন।

রাসেল ডমিঙ্গো নিজেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
ছবি: শামসুল হক

‘ওরা (শ্রীলঙ্কা) তো আমাদের নেট বোলার দেবে না। প্রস্তুতি ম্যাচেরও ব্যবস্থা করবে না। ছেলেরা নিজেদের মধ্যে একটা দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। সে জন্য ১৬ জনের বাইরে আরও কয়েকজনকে নেওয়া যায় কি না, সেটা নিয়ে কোচের সঙ্গে কথা বলব’—মুঠোফোনে বলেছেন প্রধান নির্বাচক।

ওদিকে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো নিজেও আছেন এক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। শ্রীলঙ্কা সফরের পর তিনি আর বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকছেন কি না, আলোচনা সেটা নিয়েই। ডমিঙ্গোর কোচিং সামর্থ্য নিয়ে বিসিবির প্রশ্ন নেই।

তবে সেই সামর্থ্য এবং তাঁর কোচিং প্রক্রিয়া বাংলাদেশ দলের উপযোগী কি না, প্রশ্ন সেখানে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক পরিচালক বলছিলেন, ‘একসময় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা দলের কোচ ছিলেন, সেটি তো এমনি এমনি নয়। তবে তাঁর কোচিংয়ের ধরনটা হয়তো আমাদের জন্য ঠিক নয়। আমাদের ক্রিকেটারদের শুধু উদ্দীপনামূলক কথা বললেই হয় না, ওদের পেছনে লেগে থাকতে হয়। সেটাই অনুপস্থিত ডমিঙ্গোর মধ্যে।’

নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররাও বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্ধি করেছেন বলে খবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রিকেটারের কথা, ‘সব খেলোয়াড় তো আর এক রকম নয়। কেউ কেউ আছে যাদের একই জিনিস বারবার বলতে হয়, ধাক্কাতে হয়। ডমিঙ্গো সে রকম নন।’

বিসিবি কর্মকর্তাদের সভায়ও উঠেছে ডমিঙ্গোর প্রসঙ্গ।
ছবি: সংগৃহীত

দলের সঙ্গে যাওয়া বিসিবি পরিচালক জালাল ইউনুস ও নির্বাচক হাবিবুল বাশারের মাধ্যমে বোর্ডের কাছে কোচের ব্যাপারে এমন মতামতই দিয়েছেন নেতৃস্থানীয় ক্রিকেটাররা। অবশ্য ভালো মানের কোচ পাওয়া এই বাজারে কতটা কঠিন, সে অভিজ্ঞতা কয়েকবারই হয়েছে বিসিবির। আরেকবার কোচ বদলের পথে যাওয়ার আগে ভাবনায় রাখতে হচ্ছে সেটিও।

২০১৯ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডমিঙ্গোর অধীনে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩০টি ম্যাচ খেলে ১৭টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ দল। জয় ১৩টিতে। টেস্টে ৬ ম্যাচ খেলে ১টি জয়, ওয়ানডেতে ৯ ম্যাচে জয় ৬টি এবং টি–টোয়েন্টিতে ১৪ ম্যাচে জয় ৬টিতে।

শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে গতকাল বিসিবি কর্মকর্তাদের এক সভায়ও এসেছে ডমিঙ্গোর প্রসঙ্গ। সভার পর বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ অবশ্য কোচ প্রসঙ্গে দুই রকম কথাই বললেন, ‘খেলবে খেলোয়াড়েরা, কোচরা নন। কোচ তো হাজার পরিকল্পনা দিতে পারেন। আপনি যদি মাঠে সেটা কাজে লাগাতে না পারেন, তাহলে পরিকল্পনা দিয়ে লাভ কী? আবার খেলোয়াড়েরা ভালো খেলছে কিন্তু পরিকল্পনা ভালো হচ্ছে না, তাহলেও হবে না।’

ডমিঙ্গোর কোচিং প্রক্রিয়া বাংলাদেশ দলের উপযোগী কি না, প্রশ্ন উঠেছে।
ছবি: প্রথম আলো

শ্রীলঙ্কায় দলের সঙ্গে ‘টিম ডিরেক্টর’ হিসেবে যাবেন খালেদ মাহমুদ। কোচ–খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রবহমান রসায়নটা তখন নিশ্চয়ই আরও ভালোভাবে ধরতে পারবেন তিনি। শ্রীলঙ্কায় দলের পারফরম্যান্স তো বটেই, খালেদ মাহমুদের মূল্যায়নের ওপরও অনেকটাই নির্ভর করবে বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে ডমিঙ্গোর ভবিষ্যৎ।
অবশ্য মাহমুদ যেটা বলেছেন, কোচ তো আর মাঠে নেমে খেলে দেবেন না।

নিউজিল্যান্ডের পর শ্রীলঙ্কায়ও বাংলাদেশ দল পাবে না সাকিব আল হাসানকে। দল নিয়ে বলতে গিয়ে মাহমুদও প্রথমে সামনে আনলেন সে প্রসঙ্গই, ‘সাকিবের না থাকাটা একটা বড় ব্যাপার আমাদের জন্য। সাকিব থাকলে টিমের ভারসাম্যে সুবিধা হয়। সাকিব থাকা মানে একজন ব্যাটসম্যান ও একজন বাড়তি বোলার পাওয়া।’