দল পাকিস্তানে, দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয় অ্যানালিস্ট ‘হোম অফিসে’

দলের সঙ্গে থাকা হচ্ছে না অ্যানালিস্ট প্রসন্ন আগোরামের।
ছবি: টুইটার

২৬ জানুয়ারি করাচিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে মাঠে নামবে, তখন প্রোটিয়া টিম ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য বাড়ি থেকে কাজ করবেন। কেবল ভারতীয় হওয়ার জন্য পাকিস্তানে যেতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সঙ্গে। প্রসন্ন আগোরাম দক্ষিণ আফ্রিকার পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন ১১ মাস ধরে।

করোনার এই সময় ‘হোম অফিস’ বা বাড়ি থেকে কাজ করার ধারণাটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অতিমারির গোটা সময় সারা দুনিয়ার বহু করপোরেট অফিসই তাদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করাকে উৎসাহ দিয়েছে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। কিন্তু ক্রিকেট মাঠে কোনো দলের পারফরম্যান্স অ্যানালিস্টের বাড়ি থেকে কাজ করার নজির কম। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তান সফরের জন্য তাঁর ভিসা করানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ‘নিরাপত্তা’র কথা বিবেচনা করে প্রোটিয়াদের এই ভারতীয় অ্যানালিস্টকে ভিসা না দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পাকিস্তানে অনুশীলন শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ছবি: টুইটার

দলের সঙ্গে পাকিস্তান যেতে না পারার ব্যাপারটি মেনেই নিতে পারছেন না প্রসন্ন। তিনি ভারতীয় এক পত্রিকাকে বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে আমি একজন মৃত ব্যক্তি, যে হেঁটে বেড়াচ্ছে।’ তাঁকে সবচেয়ে বেশি আক্ষেপে পোড়াচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে যোগ দেওয়ার পর প্রথম বিদেশের মাটিতে সিরিজে দলের সঙ্গে থাকতে না পারাটা। এখন তিনি বাড়ি থেকে যতটা সম্ভব দলকে সাহায্য করতে চান। কিন্তু মাঠে বসে কাজ করা আর বাড়িতে ভার্চ্যুয়াল কাজ করার মধ্যে যে বিস্তর পার্থক্য, সেটা তিনি জানেন, ‘যেভাবেই কাজ করি, মাঠে বসে কাজ করতে না পারাটা বিশাল একটা ধাক্কা। এটা দলের খেলোয়াড়দের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাঁরা কেউই তাঁদের পারফরম্যান্সের তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ হাতে পাবে না। তবে এটা ঠিক এমন সমস্যায় আমিই প্রথম পড়িনি। জিম্বাবুয়ের ভারতীয় কোচ লালচাঁদ রাজপুত একই কারণে পাকিস্তান সফর করতে পারেননি। পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারও ভারতে আসতে পারেননি।’

এর আগে বাংলাদেশের সফরেও এমন সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ভারতীয় নাগরিক হওয়ায় পাকিস্তানে যেতে পারেননি কম্পিউটার অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন।

কোচ বাউচারের সঙ্গে প্রসন্ন।
ছবি: টুইটার

নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তাঁর কাজে বিস্তর বাধার শঙ্কা রয়েছে। প্রসন্ন খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিং রুমে পাঠাতে পারবেন না। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে মাঠে ইন্টারনেট ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ম্যাচ চলাকালীন কেবল দলের ম্যানেজার ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সেই ফোনও নাকি নজরদারির মধ্যে থাকবে। প্রয়োজনীয় লজিস্টিক্যাল কারণেই কেবল ম্যানেজার ড্রেসিং রুমে বসে তাঁর ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। সাধারণত অ্যানালিস্টরা ম্যাচ চলাকালীন যা যা করেন, তাঁর কিছুই প্রসন্ন করতে পারবেন না।

তাহলে প্রসন্ন কীভাবে কাজ করবেন। ম্যাচ চলাকালীন কিছু করতে না পারলেও প্রসন্ন খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের বিশ্লেষণ তৈরি করে রাখবেন। খেলা শেষে খেলোয়াড়েরা যখন হোটেলে ফিরবেন, তখনই সেই সব বিশ্লেষণ তাঁদের পাঠানো হবে। খেলোয়াড়েরা কথা বলতে চাইলে জুমে বা অন্য কোনো উপায়ে সেটি করবেন। পাকিস্তান দলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারদের খেলার ভিডিও সংগ্রহ করে তার বিশ্লেষণ অবশ্য প্রসন্ন এরই মধ্যে তৈরি করে পাঠিয়ে দিয়েছেন দলের কাছে।