দ্বিতীয় সুপার ওভারেও খেলা শেষ না হলে কী হতো?

এমন এক ম্যাচে জেতার পর পাগলাটে উদ্‌যাপনই হলো পাঞ্জাবের।ছবি: আইপিএল

গতকাল আইপিএল নাটকের চূড়ান্ত দেখিয়ে ছাড়ল। মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ম্যাচটি টাই হওয়াতে গড়াল সুপার ওভারে। প্রথম সুপার ওভার পর্বে  ঘটল অদ্ভুত এক ঘটনা। যশপ্রীত বুমরার বলে কোনোমতে ৫ রান তুলল পাঞ্জাব। মোহাম্মদ শামিও কম গেলেন না। মাত্র ৫ রানের পুঁজি নিয়েই লড়লেন। মুম্বাইকে ৫ রানের বেশি করতে দিলেন না এই পেসারও।

খেলা গড়াল দ্বিতীয় সুপার ওভারে। ক্রিস জর্ডানের বলে ১১ রান তোলে মুম্বাই। এবার অবশ্য আর রান তোলায় আপত্তি দেখায়নি পাঞ্জাবের ব্যাটসম্যানরা। ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছেন ক্রিস গেইল। মায়াঙ্ক আগারওয়ালও টানা দুই চার মেরে ২ বল আগেই ম্যাচ শেষ করে এসেছেন। কিন্তু যদি গেইল-আগারওয়াল এবারও ঠিক ১১ রান করতেন তাহলে কী হতো?

ক্রিকেটে সুপার ওভার এসেছে বেশ আগেই। তবে ক্রিকেটের সুপার ওভারের নিয়মটা বদল হয়েছে কিছুদিন আগেই। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালই বাধ্য করেছে নিয়ম বদলাতে। এর আগে নিয়ম ছিল—মূল ম্যাচ টাই হলে, সুপার ওভারে ম্যাচ গড়াবে। আর সুপার ওভার যদি টাই হয়, সে ক্ষেত্রে দুই দলের চার-ছক্কার সংখ্যা হিসাব করা হবে।

দ্বিতীয় সুপার ওভার জেতানোর নায়ক আগারওয়াল ও গেইল।
ছবি: আইপিএল

সেখানেও যদি পার্থক্য করা না যেত তখন আরও জটিল হিসেবে যেতে হতো। তখন সুপার ওভারের রানের হিসেবটা উল্টো দিক থেকে করা হতো। অর্থাৎ পঞ্চম বল শেষে কোন দলের রান কম ছিল সেটা দেখা হতো। সেটাও সমান হলে চতুর্থ বল শেষে কত রান সেটি দেখা হতো। এভাবে এগিয়ে (পড়ুন পিছিয়ে) যেত।

২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে অত কঠিন হিসেবে যেতে হয়নি। শুধু চার-ছক্কার হিসেবেই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ইংল্যান্ড।

এ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি, কড়া সমালোচনার মুখে নিয়ম পালটায় আইসিসি। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সুপার ওভার চলতেই থাকবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় সুপার ওভারে টাই হলে তৃতীয় সুপার ওভার। আর তৃতীয় সুপার ওভারে টাই হলে চতুর্থ সুপার ওভার। এভাবে চলতেই থাকবে খেলা। অনেকটা ফুটবলের টাইব্রেকের সাডেন ডেথের মতো। এ নতুন নিয়মই কালই প্রথম দেখা গেল মাঠে।

এ নিয়মেও কিছু ফাঁক রাখা হয়েছে। ফুটবলে সাডেন ডেথ প্রায় সময়ই অনেক দীর্ঘ হয়। স্বীকৃত ফুটবলে এক ম্যাচের মীমাংসায় ৪৮টি পেনাল্টি নেওয়ারও রেকর্ড রয়েছে। ফুটবলে মাত্র একটি করে শট নেওয়া হয় বলে সময়টা মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে না। কিন্তু ক্রিকেটে ছয়টি বল করতে হয়, বল সীমানা পার হয়, ফলে সময় এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলে ম্যাচ রেফারিকে একটি ক্ষমতা দিয়ে রাখা হয়েছে।

ম্যাচ রেফারি চাইলেই আগ থেকে সুপার ওভারের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। এর মধ্যে মীমাংসা না হলে ম্যাচটা টাই বলেই ধরে নেওয়া হবে।

এ ছাড়া আবহাওয়ার কারণে বা সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান যদি আপত্তি জানায় সে ক্ষেত্রেও টানা সুপার ওভার নীতি থেকে সরে আসার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রেও ম্যাচটা টাই হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

এ দুই পেসারই ম্যাচটা দ্বিতীয় সুপার ওভারে নিলেন।
ছবি: আইপিএল

ফুটবলের সাডেন ডেথের সঙ্গে আরেকটি দিক থেকেও পার্থক্য আছে এখানে। নির্ধারিত পাঁচ পেনাল্টিতে শট নেওয়া ফুটবলার সাডেন ডেথে এগারোজনের শট নেওয়া শেষ না হলে ফিরতে পারেন না। কিন্তু সুপার ওভারে এতটা কড়াকড়ি নেই।

এখানে শুধু প্রথম সুপার ওভারে ব্যাট বা বল করা খেলোয়াড়েরা দ্বিতীয় সুপার ওভারে সে কাজটায় অংশ নিতে পারবেন না। অর্থাৎ প্রথম সুপার ওভারে ব্যাট করা ব্যাটসম্যান আবার তৃতীয় ওভারে ব্যাটিংয়ে নামতে পারবেন। আর দ্বিতীয় সুপার ওভারে বল করা বোলার আবার চতুর্থ সুপার ওভারে বল বুঝে নিতে পারবেন। যদি কখনো এমন কিছু বাস্তবে দেখা যায় আর কি!