ধবলধোলাইয়ে আসবে ঈদের খুশি

ওয়ানডে সিরিজ জয় আগেই নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এখন ধবলধোলাইয়ের অপেক্ষাছবি: জিম্বাবুয়ে টুইটার

দেশ থেকে কোনো এক নিকটাত্মীয় হোয়াটসঅ্যাপে হৃষ্টপুষ্ট এক গরুর ছবি পাঠিয়েছেন। সেটা দেখেই তাঁর মনে পড়ে গেল, ‘আরে, দেশে তো ঈদ এসে গেছে! কিন্তু জিম্বাবুয়েতে ঈদ কবে?’

ওই পেসারের মতো হারারেতে বাংলাদেশ দলের অনেক ক্রিকেটারের মুঠোফোনের অ্যালবামই এখন ভরে উঠেছে দেশ থেকে পাঠানো কোরবানির পশুর ছবিতে। সেসব ছবি দেখেই এখানে যা একটু ঈদের আমেজ পাচ্ছেন তাঁরা। নইলে হারারের ঈদ নিয়ে সবার অবস্থা ওই বোলারের মতোই।

হারারেতে ঈদ আজ না আগামীকাল, গতকাল দুপুর পর্যন্তও সেটা নিশ্চিত জানা ছিল না বাংলাদেশ দলের। পরে অবশ্য দ্বিধাদ্বন্দ্বটা দূর করে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ে দলের মুসলিম ক্রিকেটার সিকান্দার রাজা। বাংলাদেশের মতো জিম্বাবুয়েতেও ঈদ হবে আগামীকালই। তবে জৈব সুরক্ষাবলয়ের সফরে ঈদটা ক্রিকেটারদের কাটাতে হবে হোটেলের মধ্যেই।

অবশ্য এখানে ঈদ নিয়ে খেলোয়াড়দের কারও তেমন ভাবনা আছে বলে মনে হচ্ছে না। কাল তাদের মনোজগতে বিচরণ ছিল শুধু হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজকের শেষ ওয়ানডেটির।

ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতে পারছে না জিম্বাবুয়ে
ছবি: জিম্বাবুয়ে টুইটার

আগের দুই ম্যাচের মতো এটিও জিতে ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করতে হবে বাংলাদেশকে। জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করতে পারলেই শুধু আসবে উৎসবের আনন্দ, ঈদের খুশি।

শেষ ওয়ানডে সামনে রেখে কাল দুপুরে ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল বাংলাদেশ দলের। এসব দিনে যা হয়, প্রথম দুই ওয়ানডেতে না খেলা ক্রিকেটাররাই মূলত এসেছিলেন মাঠে। আগের দুই ম্যাচে খেলাদের মধ্যে দেখা গেছে কেবল অধিনায়ক তামিম ইকবাল, মোসাদ্দেক হোসেন ও মোহাম্মদ মিঠুনকে।

নেটে ব্যাটিং অনুশীলন শেষে মাঠের এক পাশে বসে কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে অনেকটা সময় কথা বলেছেন তামিম। আলোচনার মূল প্রসঙ্গ যা–ই হোক, দুজনের মতবিনিময়ে আজকের একাদশ প্রসঙ্গটাও আসা অস্বাভাবিক নয়। দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম ম্যাচের উইনিং কম্বিনেশন না ভাঙলেও আজ শেষ ম্যাচে একাদশে দু–একটি পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছিল কাল।

মোসাদ্দেক হোসেন বা মোহাম্মদ মিঠুনের একজনকে বাইরে রেখে আজ সুযোগ দেওয়া হতে পারে নুরুল হাসানকে। পেসার মোস্তাফিজুর রহমানও যেহেতু চোট কাটিয়ে নেটে ঠিকঠাক বোলিং করতে পারছেন, আগের দুই ম্যাচের পেস আক্রমণ থেকে কাউকে সরিয়ে তাঁকে একাদশে রাখার আলোচনাও আছে।

তবে এটা বেশ মধুর এক সমস্যাই। তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দুই ম্যাচেই ভালো করেছেন। সাইফউদ্দিন–তাসকিন তো এখন ব্যাট হাতেও ভরসা দিতে শুরু করেছেন! দ্বিতীয় ম্যাচে শরীফুল নিয়েছেন ৪ উইকেট। মোস্তাফিজ আজ খেললে কার জায়গায় খেলবেন, সেটি ঠিক করতে লটারি করার চেয়ে ভালো ব্যবস্থা আর নেই।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভালো করেছেন স্পিনাররা
ছবি: এএফপি

শুধু পেসাররা কেন, হারারের উইকেটে যেখানে স্পিনারদের জন্য বলতে গেলে কিছুই নেই, সেখানেও টেস্ট–ওয়ানডেতে সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। এটা দেখে সবচেয়ে আনন্দিত এই সফরেই দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ।

কাল হারারেতে আসা সাংবাদিকদের কাছে দল থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় ধরা পড়ল হেরাথের সেই খুশি। দলের সঙ্গে অল্প কদিন থেকেই শ্রীলঙ্কার এই সাবেক স্পিনারের মধ্যে বিশ্বাস জন্মে গেছে, আসন্ন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং তার আগের সিরিজগুলোতে বাংলাদেশের ভালো করায় বড় প্রভাবক হবেন স্পিনাররাই।

স্পিন কোচ যেহেতু, সাকিব আল হাসান আর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে তো হেরাথকে আলাদা কিছু বলতেই হবে। আর এ দুজনের জিম্বাবুয়ে সিরিজটাই এমন যাচ্ছে যে হেরাথের কথায় তাঁদের নিয়ে শুধু প্রশংসা আর প্রশংসা।

‘সাকিব টেস্ট, ওয়ানডে দুটোতেই ভালো বোলিং করেছে। প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তো সে ব্যাটিং–বোলিং দুটোতেই নিজের চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে’—সাকিবকে নিয়ে এ কথা বলার পর মিরাজকেও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি, ‘এশিয়ার বাইরে গিয়ে স্পিনারদের ভালো করা, উইকেট নেওয়া সহজ নয়। তবে মিরাজ প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশ বা যেখানেই খেলুক না কেন তার সামর্থ্য আছে। কোন কন্ডিশনে কখন কী করতে হব, সেটা সে জানে।’

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ব্যাটিং–বোলিং দুই বিভাগেই ভালো করেছে বাংলাদেশ
ছবি: এএফপি

কিছু ব্যক্তিগত ব্যর্থতা বাদ দিলে জিম্বাবুয়ে সিরিজটা এখন পর্যন্ত ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের দুই বিভাগেই বাংলাদেশের সাফল্যের প্রদর্শনী হয়ে আছে। আজ শেষ ওয়ানডের পর টি–টোয়েন্টি সিরিজেও থাকবে একই প্রত্যাশা। তার সঙ্গে যদি ব্যক্তিগত ব্যর্থতার ছোট ছোট গর্তগুলো ভরাট করে নেওয়া যায়, তাহলে তো আরও ভালো।

ক্রিকেটারদের ঈদটা এবার পারিবারিক আনন্দের আবহে না কাটলেও বাংলাদেশ দল তখন দেশে ফিরতে পারবে ঈদের আনন্দ সঙ্গে নিয়েই।