ধোনি পরামর্শক, কিন্তু মাঠে খেলতে হবে কোহলিদের

কোহলি-ধোনিফাইল ছবি

একসময় ভারতীয় দলের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন সুনীল গাভাস্কার। ২০০৪ সালে জন রাইট যখন ভারতের কোচ ছিলেন, তখন পরামর্শক হিসেবে দলে ছিলেন গাভাস্কার। মাঠের বাইরে থেকে কীভাবে দলকে উজ্জীবিত করতে হয়, সেই অভিজ্ঞতা ভালোই জানা গাভাস্কারের। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সে দায়িত্ব পাচ্ছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতীয় দলের সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে থাকছেন ধোনি। কিন্তু পরামর্শক হিসেবে যতই ড্রেসিংরুমে বা বিরতির সময় খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করুন কিংবা কৌশল ঠিক করে দেন না কেন ধোনি, মাঠের খেলাটা বিরাট কোহলিদেরই খেলতে হবে। সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক গাভাস্কার।

বিশ্বকাপ দলের অনুশীলনে ধোনি
ছবি: বিসিসিআই টুইটার

ধোনির অধিনায়কত্বে ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে ভারত। সর্বশেষ আইপিলেও চ্যাম্পিয়ন ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। ক্রিকেটের ছোট সংস্করণে ভারতীয় দলের সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে ধোনির উপস্থিতিতে কোহলিদের উপকার হবে বলেই মনে করেন গাভাস্কার। কিন্তু মাঠের সাফল্যের পুরোটাই নির্ভর করবে আসল সময়ে ক্রিকেটাররা কীভাবে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত করেন, এর ওপর।

‘ধোনিকে পরামর্শক হিসেবে নেওয়া হয়েছে ভালো কথা, কিন্তু পরামর্শকের ভূমিকা ড্রেসিংরুমে। মাঠে নেমে তো আর পরামর্শক কিছু করতে পারবে না। ড্রেসিংরুমে পরামর্শক অবশ্যই তার ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এত দ্রুতগতির খেলা যে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত যেকোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউটে ব্যাটসম্যান বা ফিল্ডারদের হয়তো এমন কিছু বলা হলো, সেখান থেকে ম্যাচ ঘুরে গেল। এই জায়গায় ধোনিকে পরামর্শক করাটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে অবশ্যই ভারতের লাভ হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ধোনি ড্রেসিংরুমেই থাকবে। মাঠে নেমে খেলাটা কোহলিদেরই খেলতে হবে। চাপ সামলে তারা ম্যাচ জিততে পারবে কি না, তার ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে,’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতাককে বলছিলেন গাভাস্কার।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেটাও ১৪ বছর আগে। এরপর আর সাফল্যের দেখা মেলেনি। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল ভারত। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছিল ভারত। ওয়ানডেতেও বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ভারত সাফল্য পাচ্ছে না বেশ কিছুদিন ধরে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারত ১৮০ রানে হেরে যায় পাকিস্তানের কাছে। এরপর ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকেও বাদ পড়ে ভারত। এবার নিউজিল্যান্ডের কাছে কোহলিরা হারেন ১৮ রানে।

নকআউট পর্বে ভারতের ভালো খেলতে না পারার বিষয়টা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে গাভাস্কারকে, ‘আমি যা দেখছি, বড় প্রতিযোগিতায় ভারত নকআউট পর্বে বারবার সমস্যায় পড়েছে। এটা হচ্ছে, দল ঠিকভাবে নির্বাচন না করার জন্য। প্রথম একাদশ ঠিকঠাক বাছাই করতে হবে। এটা করতে পারলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

ভারতকে দল নির্বাচন নিয়ে আরেকটু সতর্ক হতে বলেছেন গাভাস্কার
ফাইল ছবি

অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা অবশ্য বেশ মনের মতোই হয়েছে ভারতের। আগামীকাল কোহলির ভারত মহারণে নামবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই বিশ্বকাপের পরই কোহলি টি-টোয়েন্টি থেকে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবেন। কোহলির এমন সিদ্ধান্ত হয়তো ভালোই হবে ভারতের জন্য।

এবারের বিশ্বকাপে হয়তো অনেক নির্ভার হয়ে খেলতে পারবেন কোহলি, এমনটাই মনে হয়েছে গাভাস্কারের, ‘কেউ যখন অধিনায়ক হয়, তখন সে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারে না। কোনো ব্যাটসম্যান যদি খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়, তার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে হয়। যাতে সে রানে ফিরতে পারে। তেমনি বোলারদের সঙ্গে কথা বলে কৌশল ঠিক করতে হয়। এসব প্রক্রিয়া কিন্তু তার খেলার ওপর ছাপ ফেলে। খুব বেশি নিজের ওপর মনঃসংযোগ করতে পারে না। কিন্তু এই চাপ যদি কারও না থাকে, তাহলে সে অনেক ভালো খেলতে পারে। নিজের খেলায় মন দিতে পারে। এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বিরাটের জন্য ভালোই হবে। ওকে এসব দায়িত্ব নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না।’