ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে মুশফিক-লিটনের শতক

এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ইনিংস লিটনেরছবি: এএফপি

৬ ওভার ৫ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দলের রান ২৪—স্কোরকার্ডের এই ছবিটা এক টুকরো দুঃস্বপ্নই মনে হচ্ছিল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে তখন বাংলাদেশ দলের সর্বনিম্ন রানে অলআউটের রেকর্ড ঘাঁটাঘাঁটি শুরু হয়ে গেছে। মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের জুটির শুরুটা তখনই।

চট্টগ্রাম টেস্টেও টপ অর্ডারে ছোট্ট ধসের পর লিটন-মুশফিকের ১৬৫ রানের জুটি বিপদমুক্তির পর বাংলাদেশের দাপুটে অবস্থান নিশ্চিত করেছিল। আজ সেই জুটির সৌজন্যে বাংলাদেশ প্রথম সেশনে বাজে শুরুর পরও শেষ পর্যন্ত শক্ত ভিত পেয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৮২.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২৬৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ১২৮ রানে ব্যাট করছেন লিটন দাস। অন্য প্রান্তে ১১২ রানে অপরাজিত মুশফিকুর রহিম। ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ২৪১ রানের জুটি গড়েছেন দুজন।

মুমিনুল আজও ব্যর্থ
ছবি: প্রথম আলো

খেলাটা যখন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে, কোনো অধিনায়কই টস হারতে চায় না। অনিশ্চয়তায় ভরা মিরপুরের উইকেটে কেউই চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ার ঝুঁকি নিতে চায় না। মুমিনুল হকও সেই ঝুঁকিপূর্ণ পথ মাড়াতে চাননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে টসে জিতেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ওদিকে আগে ব্যাট করতে না পারার হতাশা লুকাননি লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে।

কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর সেই দিমুথের চোখে মুখেই আনন্দের ঝিলিক। আর মুমিনুল? বাংলাদেশ দলের চার নম্বর ব্যাটসম্যান ততক্ষণে আউট হয়ে ফিরে গেছেন ড্রেসিংরুমে। তাঁর আগে পরে আউট হয়েছেন টপ অর্ডারের আরও চার ব্যাটসম্যান। স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ দলের রান তখন ৫ উইকেটে মাত্র ২৪! শ্রীলঙ্কার দুই পেসার কাসুন রাজিতা ও আসিতা ফার্নান্ডোর ছোট ছোট সিম মুভমেন্ট ও অ্যাঙ্গেলের কাছেই ধরাশায়ী বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার।

রাজিতার বলে শূন্য রানে আউট দুই ব্যাটসম্যান
ছবি: প্রথম আলো

টপ অর্ডারের দরজায় প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছেন রাজিতা। ওবল সিমে করা দিনের দ্বিতীয় বলটিই মাহমুদুল হাসানের ডিফেন্সে ফাটল ধরায়। আউট সুইং ভেবে খেলার চেষ্টায় তালগোল পাকিয়ে উল্টো বোল্ড হন এই তরুণ ওপেনার।

মাহমুদুলের মতো ০ রানে আউট হন চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি করা তামিম ইকবালও। তবে নিজের আউটের ধরনে তামিমের হতাশই হওয়ার কথা। আরেক পেসার ফার্নান্ডোর লেগ স্টাম্প লাইনের বলটি ফ্লিক করতে গিয়ে তিনি ক্যাচ তুলেছেন পয়েন্টে।

৬ রানের মাথায় দুই ওপেনারকে হারিয়ে একটি জুটির খোঁজে ছিল বাংলাদেশ দল। তিনে নামা নাজমুল হোসেন ও অধিনায়ক মুমিনুলের শুরুটা বাউন্ডারিতে হওয়ায় ওই দুজনকে ঘিরেই ছিল যত আশা।

কিন্তু রাজিতা ছিলেন বাঁহাতি নিধনের মিশনে। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ওবল সিমে বল করে কিছু বল ভেতরে আর কিছু বাইরে নিয়ে ধন্দে ফেলে দেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই নাজমুল-মুমিনুল এই অ্যাঙ্গেলে ধুঁকছেন। আজ মিরপুরেও সেই দুর্বলতাকে আরেকবার সামনে নিয়ে এলেন রাজিতা।

বুকে ব্যথা করায় মাঠ ছেড়েছেন কুশল মেন্ডিস
ছবি: এএফপি

মুমিনুল অবশ্য আউট হয়েছেন ফার্নান্ডোর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে ৯ বলে ২টি চার মেরে ৯ রান করেই তিনি আউট। তবে নাজমুলের নাম লেখা ছিল রাজিতারই বলে। ঠিক পরের ওভারেই রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা ভেতরে আসা বলে নাজমুলকে বোল্ড করেন তিনি। নাজমুলের চোখে তখন অবিশ্বাস। এই বল কীভাবে এতটা ভেতরে ঢুকল, এই হিসেব যেন তিনি মেলাতেই পারছেন না!

অবিশ্বাস্যের ঘোর কাটতে না কাটতেই মাঠে আসেন সাকিব আল হাসান। চট্টগ্রাম টেস্টে লিটন দাসের পর ব্যাটিংয়ে নামলেও আজ দলের বিপদে এক ধাপ এগিয়ে এসেছেন তিনি। তবে তাতে খুব একটা পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারেননি। রাজিতার ঠিক পরের বলেই সাকিব এলবিডব্লিউ। ভালো লেংথ থেকে আরেকটি ভেতরে আসা বল সাকিবের প্যাড আঘাত করে। অ্যাঙ্গেলে বলটি বেরিয়ে যাবে, এই আশা থেকে সাকিব সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত আম্পায়ার্স কলে আউটই ধার্য থাকে।

এরপর থেকেই মুশফিক-লিটনের যুগলবন্দী শুরু।