নটরাজনের দিকে ‘স্পট ফিক্সিং’–এর তির ছুড়লেন ওয়ার্ন?

বোলিং অ্যাকশনে নটরাজন।ছবি: এএফপি

এক সফরে তিন সংস্করণে অভিষিক্ত প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার থাঙ্গাসু নটরাজন। এক টেস্টে ওভারের প্রথম বলে পাঁচবার ‘নো বল’ করা প্রথম ক্রিকেটারও কি এই পেসার?

উত্তর পেতে গবেষণার বিকল্প নেই। আপাতত সে সময় কারও নেই। ব্রিসবেন টেস্ট জমে উঠেছে। কাল ভারতের এবারকার অস্ট্রেলিয়া সফরের শেষ দিন। এই শেষ দিনেই ফয়সালা হবে টেস্ট সিরিজের। নটরাজনের ভীষণ অদ্ভুত এই ‘বদভ্যাস’ তাই পাশ কাটিয়েছেন অনেকে।

কিন্তু শেন ওয়ার্ন তেমন মানুষ নন। হাতে মাইক্রোফোন এবং চোখের সামনে টেস্ট ক্রিকেট থাকলে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির মুখে কথার খই ফোটে। এবারের সিরিজেই নানা পদের কথা বলে বিতর্ক ও প্রশংসা দুটোই কুড়িয়েছেন ওয়ার্ন। আজ নটরাজনের ‘নো বল’ নিয়েও মুখ খুললেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ছয়টি ‘নো বল’ করেন বাঁহাতি এ পেসার। আজ অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ দিনেও নো বল করেছেন। প্রায় সব কটি নো বলেই তাঁর ডান পা ক্রিজের দাগ পেরিয়ে চোখে পড়ার মতো দূরত্বে গিয়ে পড়েছে। আর এর মধ্যে পাঁচটি নো বল তিনি করেছেন ওভারের প্রথম বলে। ভীষণ অদ্ভুত এবং খুঁতখুঁতে মনের সমর্থকদের জন্য ভ্রুকুটিজাগানিয়া বটে!

ক্রিকেট নিয়ে ওয়ার্ন বরাবরই একটু খুঁতখুঁতে। নানা সময় দেখা গেছে, খেলার কৌশলগত দিক, এমনকি নিয়ম পাল্টাতেও তাগাদা দিয়েছেন আইসিসিকে। ওয়ার্নের চোখে ভারতীয় পেসারের এভাবে নো বল করা স্বাভাবিক লাগেনি। টেস্টের তৃতীয় দিনেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন কিংবদন্তি।

এবার ফক্স ক্রিকেটকে কিংবদন্তি বললেন, ‘নটরাজন বল করার সময় একটি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় চোখে পড়ল। এ ম্যাচে সে সাতটি (আটটি) নো বল করেছে এবং সব কটিই বড় বড়। এর মধ্যে পাঁচটি নো বলই ওভারের প্রথম বলে—বিশাল বড়। বিষয়টি খুবই অদ্ভুত। আমরা সবাই নো বল করেছি, কিন্তু পাঁচটি নো বল ওভারের প্রথম বলে, এটা অবশ্যই কৌতূহলজাগানিয়া।’

কিসের কৌতূহল, তা মোটামুটি সবাই ধরতে পেরেছেন। ২০১০ লর্ডস টেস্টে মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ আসিফের সেই নো বল কেলেঙ্কারির পর এখন ক্রিজের বড় ‘নো’ দেখলেই ভ্রুকুটি জাগে অনেকের। স্পট ফিক্সিং নয় তো! খ্যাতিমান সংবাদকর্মী জ্যারড কিম্বারের আজকের টুইট সে ভুল ভাঙাতে পারে, ‘কোন বলটা নো হবে, তা নিয়ে লোকে বাজি ধরে না। লর্ডসে আমির-আসিফের ক্ষেত্রেও কিন্তু তেমন ঘটেনি। তারা নো বল করেছিল, এটা প্রমাণ করতে যে মাঠে যা ইচ্ছা তা করতে পারে তারা। সে নো বলে কোনো বাজি ধরা হয়নি।’

এ দৃশ্যই শেন ওয়ার্নকে চিন্তায় ফেলেছে।
ছবি: সংগৃহীত

তবে আসিফ বা আমিরের ক্ষেত্রে সেই নো বল নিয়ে বাজি না হলেও ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে যে এ নিয়ে বাজি ধরা হয়নি, সেটা যে নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না, এটা কিম্বারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন আরেক দর্শক। প্যাডি পি নামের আইডি ব্যবহার করা ওই দর্শক মনে করিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে চাইলেই এ নিয়ে বাজি ধরা যায়। তবে সেটা একটু অন্য ধরনে। যুক্তরাজ্যে চাইলে প্রতি ওভারের প্রথম বলে কত রান হবে, সেটার ওপরও বাজি ধরা যায়। সেটা আইনসিদ্ধ বেটিং সাইটগুলোতেই। আর বেআইনিভাবে সারা বিশ্বে চলা জুয়াতেও যে এ নিয়ে বাজি ধরা যেতে পারে, সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন ওই সমর্থক, ‘আপনি চাইলে যুক্তরাজ্যে করতে পারেন (নো বল নিয়ে বাজি ধরা) এবং আমার ধারণা, অনেক জায়গায় হয়তো বেআইনিভাবেও জুয়া খেলা হচ্ছে! তবে যা–ই হোক, শেনের এটা বলা একদম ঠিক হয়নি।’

টেস্ট সিরিজে বেশির ভাগ সময়ই নেট বোলারের ভূমিকায় ছিলেন নটরাজন। পর্যাপ্ত ম্যাচ অনুশীলন না পাওয়ায় এমন হতে পারে, মনে করছেন অনেকে। অনেকের আবার দাবি, নেটে বোলিংয়ের সময় ডান পা রাখার জায়গাটা তাঁর সতীর্থরা ভালোভাবে ঠিক করে দেননি বলেই ম্যাচে এমন হচ্ছে। অনেকে আবার ওয়ার্নের ছালও তুলছেন। টুঙ্কু ভরদ্বাজন নামের এক ক্রিকেটপ্রেমী তাঁর ভেরিফায়েড টুইটারে লিখেছেন, ‘নটরাজের নো বল নিয়ে শেন ওয়ার্ন এমনভাবে কথা বলছেন, যেন কোভিড। সহজ ব্যাখ্যা, গত মাসজুড়েই সে ছিল নেট বোলার।’