নতুন কিছু করতে চান না এনামুল

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবার দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটিয়েছেন এনামুল হকসংগৃহীত

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর চার টেস্টের ক্যারিয়ারের সর্বশেষটি খেলেছিলেন। আট বছর পর সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিয়েই টেস্টে ফেরার সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে এনামুল হক। দলের পরিকল্পনায় বড় অদলবদল না এলে আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টে এনামুল যে সুযোগ পাচ্ছেন, সেটি মোটামুটি নিশ্চিত।

তা এত দিন পর হঠাৎ পাওয়া সুযোগটা কীভাবে কাজে লাগাতে চান এনামুল? ২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের সোজা হিসাব, হঠাৎ করে নতুন কিছু করতে যাওয়া ঠিক হবে না। এত দিন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যা করেছেন, তা-ই করে যেতে চান এনামুল।

সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে ১১৩৮ রান করেছেন, সেটির সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে তিনি আগে থেকেই ছিলেন। ইয়াসির আলীর চোটে টেস্ট দলে সুযোগ মিলেছে হঠাৎ করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজেই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট বলে কাকতালের প্রসঙ্গ চলে আসে। তবে এনামুল ব্যাপারটাকে দেখেন এভাবে, ‘ওভাবে চিন্তা করিনি। দেশের হয়ে খেলব, আবার সুযোগ এসেছে, এটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। এটাই ভেবেছি।’

এখানে আমাদের মানসিকভাবে শক্ত থাকা জরুরি। গত তিন-চার দিনে আমাদের কথা হয়েছে, আশা করি, এই ম্যাচে আমরা সেটা করে দেখাতে পারব
বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ভেঙে পড়া নিয়ে এনামুল হক

কিন্তু সাদা বলের জন্য যেখানে প্রস্তুত হচ্ছিলেন, সেখানে হঠাৎ করে টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া এনামুলের টেস্টের প্রস্তুতি ছিল কতটা? কাল অনুশীলনের ফাঁকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার পর এ প্রশ্নেও এনামুলের উত্তরে নিজেকে প্রমাণের তাগিদ, ‘সাদা বলে ডাক পেয়েছিলাম, সাদা বলেই অনুশীলন করছিলাম। কিন্তু আগেও অনেকবার বলেছি যে আমি টেস্ট ক্রিকেটই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, এটা নিয়ে আমার মধ্যে অনেক বেশি প্যাশন কাজ করে। সে কারণে এখানে যখন সুযোগ পাব, সেটা সব সময়ই কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। আট বছর পর টেস্ট দলে ডাক পেয়েছি, আমার জন্য এটা অনেক বড় সুযোগ। আমি যে টেস্টটা আসলেই পছন্দ করি, ভালোবাসি, সেটা দেখানোরও বড় সুযোগ।’

সুযোগ কাজে লাগানোর প্রসঙ্গেই পরে বললেন, ‘রোমাঞ্চিত অনেক। নতুন কিছু করতে চাই না। যেভাবে এত দিন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি, যেভাবে দেশের হয়ে টেস্ট খেলার কথা কল্পনা করেছি, সেটাই করতে চাই।’

সেন্ট লুসিয়া টেস্টে খেলবেন এনামুল
ছবি: প্রথম আলো

এত দিন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট যেভাবে খেলেছেন, সে প্রসঙ্গেই চলে আসে এনামুলের সর্বশেষ টেস্ট থেকে এ পর্যন্ত সময়ে রানের হিসাব। ২০১৫ থেকে এ পর্যন্ত প্রথম শ্রেণিতে ৫ হাজারের বেশি রান এনামুলের—এক সাংবাদিক পরিসংখ্যানটা তুলে ধরতেই এনামুল বললেন, ‘এটাই আমার সাহস, এটাই আমার শক্তি। এই পরিসংখ্যানগুলো দেখলে সেটা একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস হিসেবে কাজ করে। অবশ্যই ব্যাপারটা এভাবে কাজ করে যে আমি এত দিন ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের পরিকল্পনাই থাকে যে তার অনেক অভিজ্ঞতা বাড়ুক এবং সেটা সে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারুক।’

এনামুল কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশেরই লাভ। এনামুল খেললে তো টপ অর্ডারেই খেলবেন, গত কিছুদিনে যা বাংলাদেশের বড় দুশ্চিন্তা।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবার রানের অনেক রেকর্ড গড়েছেন এনামুল
ছবি: প্রথম আলো

টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ের এই দুশ্চিন্তা কাটাতে তাঁর কী পরিকল্পনা, প্রশ্নে এনামুলের উত্তর, ‘সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব, যাতে বাংলাদেশ দলের জন্য ভালো স্কোর দিতে পারি। এখানে দ্রুত উইকেট পড়া থামানো থেকে শুরু করে রান এগিয়ে নিয়ে যাওয়া...সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ।’

এভাবে বারবার টপ অর্ডারের ভেঙে পড়া নিয়ে দলের ভেতরেও আলোচনা যে হচ্ছে, তা-ও জানিয়েছেন এনামুল, ‘সবাই মিলেই উন্নতি আনতে হবে। এখানে আমাদের মানসিকভাবে শক্ত থাকা জরুরি। গত তিন-চার দিনে আমাদের কথা হয়েছে, আশা করি, এই ম্যাচে আমরা সেটা করে দেখাতে পারব।’

সব শেষে আশাবাদী এনামুলের কণ্ঠে বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনার গানও থাকল। আট বছর পর ফিরে ড্রেসিংরুমের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বললেন, ‘(এত বছর পর ফিরে) খুবই ভালো লাগছে। প্রত্যেক খেলোয়াড়, সবাই ভালোভাবে স্বাগত জানিয়েছে। দল হিসেবে আমরা দারুণ অবস্থানে আছি। হয়তো ফল পক্ষে আসছে না, তবে আমাদের বাংলাদেশকে আরও সামনে নিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা আছি। আশা করব, আমি সেই দলের অংশ হয়ে থাকতে।’