পেশাদারি চিন্তায় কী হয় দেখাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

গত মার্চে ভারতকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের উল্লাস অস্ট্রেলিয়া নারী দলের।ছবি: আইসিসি

ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডসদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের কথা কার না মনে আছে! বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানের দৃষ্টিতে ওই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের উচ্চতায় কেউই যেতে পারবে না। আরেকটু আধুনিক যুগে এলেই এই শতাব্দীর প্রথম দশকের অস্ট্রেলিয়ার কথা মাথায় আসে। রিকি পন্টিংরা টানা তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছিল সেই সময়টায়।

এখনকার অস্ট্রেলিয়া নারী দল পন্টিংদের বিশ্বজয়ী দলকেও ছাড়িয়ে গেছে। ওয়ানডেতে টানা জয়ের রেকর্ড ২০০৩ সালের পন্টিং-গিলক্রিস্টদের অস্ট্রেলিয়াকে ছুঁয়ে ফেলেছে মেগ লেনিংয়ের দল। টানা ২১ ওয়ানডে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া নারী দলকে হারাতে পারেনি কেউই।  

এই দলটাকে চোখ বন্ধ করে নারী ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দল বলা যায়। অথচ চার বছর আগেও অস্ট্রেলিয়া নারী দলটা এমন অপরাজেয় ছিল না। পেশাদারি দিয়ে এত অল্প সময়ে এত দূর এসেছে অস্ট্রেলীয় নারীরা।

আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটাও ছিল যথেষ্ট পেশাদারি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের কারণে ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে পেশাদারি মনোভাব জাগেনি। ইংল্যান্ডের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট এবং ক্যারি পেকারের ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট খেলে রিচার্ডস, হোল্ডিংরা হয়েছেন পেশাদারি ক্রিকেটার। সে সঙ্গে ক্যারিবীয়রা তাঁদের সময় ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষতা সম্পন্ন ক্রিকেটার।

পন্টিংরাও ঠিক তা-ই। শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টদের মতো অবিশ্বাস্য দক্ষতার ক্রিকেটার ছিল পন্টিংয়ের দলে। বাকি যাঁরা ছিলেন তাঁরা সেই অস্ট্রেলীয় পেশাদারি ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়েছেন সেরাদের সেরা। ম্যাথু হেইডেনের কথাই ধরুন। ১৯৯২ সালে টেস্ট অভিষেক হয়ে ছিল হেইডেনের। এরপর দুইবার টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছেন। অস্ট্রেলিয়া দলে নিয়মিত হতে তাঁর লেগেছে ৮ বছর। ২০০০ সালে এসে তিনি থিতু হন।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আজ হেইডেনকে ধরা হয় ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনারের একজন হিসেবে। এক সাক্ষাৎকারে হেইডেন যেমন বলেছিলেন, ‘আমি প্রথম যখন ডাক পেয়েছিলাম তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পরে বুঝতে পেরেছি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কী জিনিস। পরে যখন সুযোগ পেয়েছি তখন মনে হয় ঠিক সময়েই সুযোগ পেয়েছি।’

ওয়ানডেতে ২০১৭ সালের শুরু থেকে র‍্যাঙ্কিংয়ের প্রথম পাঁচ দলের চার দলের ব্যাটারদের গড় ৩০-এর আশ পাশে, অস্ট্রেলিয়ার ৪০ এর ওপর। ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটেও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে সাড়ে ৬ ব্যবধানে এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়ানরা।

অস্ট্রেলিয়ায় শুধু ক্রিকেট নয়, সব খেলাতেই চলে এমন প্রক্রিয়া মেনে। প্রতিভা সব জায়গাতেই থাকে। কিন্তু প্রতিভা খুঁজে বের করে তাদের উন্নতি ধরে রাখাটাই পার্থক্য গড়ে দেয়। অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট একই প্রক্রিয়া মেনে হয়েছে সফল।

ইংল্যান্ডও যখন সত্যিকারের পেশাদার দলে পরিণত হয়েছিল, তখনো তাদের বাকিদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা মনে হতো। কিন্তু ইংল্যান্ডের প্রক্রিয়া ছিল সীমিত। অস্ট্রেলিয়া প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ করেছে এবং সেটা ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন অস্ট্রেলিয়া নারী দলে যা দেখা যাচ্ছে, সেটা তখনই হয় যখন কোনো দল পেশাদারিকে নিজেদের সংস্কৃতির অংশ মনে করা শুরু করে।

আর বাকিরা এখন অস্ট্রেলিয়ার ধারেকাছেও নেই। ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইক রেট মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাকি দলের পার্থক্যটা দিবারাত্রির। অস্ট্রেলিয়া এক পাশে, আরেক পাশে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভারতরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে।

ওয়ানডেতে ২০১৭ সালের শুরু থেকে র‍্যাঙ্কিংয়ের প্রথম পাঁচ দলের চার দলের ব্যাটারদের গড় ৩০-এর আশ পাশে। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের গড় ৪০ এর ওপর। ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটেও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে সাড়ে ৬ ব্যবধানে এগিয়ে আছে। ওয়ানডেতে যার মানে অন্তত ২০ রান এগিয়ে থাকা।

বোলিং ইকোনমি ও গড়েও একই চিত্র। অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের সঙ্গে অন্যদের তুলনা টানা বেশ কঠিন। আর ব্যাটিং ও বোলিংয়ের মিলিত ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া ২০ রান এগিয়ে থাকে। শীর্ষ পাঁচের অন্য দলগুলোর যেখানে সম্বল থাকে ৩/৪ এর মতো। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্ষেত্রে তো সে ব্যবধান ঋণাত্মক ঘরে।

তবে মেয়েদের ওয়ানডে বোলিং বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে আছে। মাঝারি মানের দল বোলিং দল বলা যায় বাংলাদেশকে। বোলিং গড় ও ইকোনমিতে বাংলাদেশ শীর্ষ দশের পাঁচে আছে।

ওয়ানডেতে টানা জয়

২১ অস্ট্রেলিয়া পুরুষ, ২০০৩

অস্ট্রেলিয়া নারী, ২০১৮-২০

১৭ অস্ট্রেলিয়া নারী, ১৯৯৯-২০০০

১৬ অস্ট্রেলিয়া নারী, ১৯৯৯-২০০০

ভারত নারী, ২০১৬-২০১৭