নিউজিল্যান্ডে ‘না পারিলে দেখ শতবার’

নিউজিল্যান্ডে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ দল।ছবি: টুইটার

কালীপ্রসন্ন ঘোষ গত হয়েছেন ১১১ বছর। একাধারে লেখক, সাংবাদিক ও বাগ্মী এই সাহিত্যিকের ‘পারিব না’ কবিতাটি তো প্রায় সবারই পড়া। নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে বাংলাদেশ দল চাইলে প্রেরণা খুঁজে নিতে পারে তাঁর সেই কবিতা থেকে—

‘পারিব না—এ কথাটি বলিও না আর,
কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার;
পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পার কি না পার কর যতন আবার
একবার না পারিলে দেখ শতবার।’

শতবার! এই ২৮ বারেই সমর্থক–প্রাণ ওষ্ঠাগত, সেখানে হারতে হারতে সেঞ্চুরি তুলে নিলে প্রাণবায়ু থাকবে কি না, সেটাই তো বড় প্রশ্ন। ‘শতবার’—এখনো অনেক দূরের পথ হলেও এই দুই দশকে একই দৃশ্য বারবার দেখতে কার ভালো লাগে!

২০০১ সালে প্রথম নিউজিল্যান্ড সফরে যায় বাংলাদেশ। আমিনুল ইসলাম–হাবিবুল বাশাররা তখনো জাতীয় দলে, বিপক্ষ দলে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। সেই ভেট্টোরি ক্যারিয়ার শেষ করে কোচিংয়ে নেমে এখন বাংলাদেশ দলের স্পিন পরামর্শক, হাবিবুল দলের নির্বাচক।

এ সময় পদ্মা–মেঘনা–যমুনা থেকে তাসমান সাগরেও প্রচুর জল গড়িয়েছে, কিন্তু নিউজিল্যান্ডে স্বাগতিকদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের জয়ের চাকা ঘোরেনি। হারের পর হার, আরও হার...জগদ্দল পাথরের মতো চেপে আছে বুকে। তবু চেষ্টা করতে হয়, না পারলে আবার, এভাবে শতবার—সেই ‘পারিব না’ কবিতাটির মতো।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের এখনো হারাতে পারেনি বাংলাদেশ দল। ছবিটি আজ দ্বিতীয় ম্যাচের। ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলার পথে কিউই অধিনায়ক টম লাথাম।
ছবি: এএফপি

কথাগুলো শুনতে ভালো না শোনালেও এটাই বাস্তবতা। ক্রিকেটে তা পাল্টানোর অন্য কোনো পথও নেই। সেই মাঠে নেমে খেলেই জিততে হবে। আর পাঁচটি দল তো ঠিকই জিতছে। বাকিরা পারলে এই দলের (বাংলাদেশ) কী সমস্যা?

কন্ডিশন মনমতো না হলেও একেবারে অচেনা তো নয়। প্রতিপক্ষের সঙ্গে দক্ষতায়ও বড়জোর আঠারো–কুড়ির ফারাক। কিন্তু মনোবলে যোজন যোজন ব্যবধানে পিছিয়ে। একের পর এক হারে মনোবল বাড়ে বলে কোথাও তো শোনা যায়নি!

তবে নিউজিল্যান্ড সফর ঘিরে বাংলাদেশের একটি স্বস্তির জায়গাও আছে। প্রতিপক্ষের মাঠে প্রথম জয় কিংবা ড্রয়ের আগে সর্বোচ্চসংখ্যক হারের প্রথম রেকর্ডটি বাংলাদেশ কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মাটিতে গড়েনি।

এ হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম ‘বাধা’ ছিল শ্রীলঙ্কা। ১৯৮৬ এশিয়া কাপ থেকে সেই যে টানা হারের শুরু হলো, আরও ২০ ম্যাচ সেই গ্লানি বহন করতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। ২০১৩ সালে মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি ও মোহাম্মদ আশরাফুলের (১৯০) ডাবল না পাওয়ার আক্ষেপের সেই টেস্টে ড্র দিয়ে কেটেছিল খরা। প্রতিপক্ষের মাঠে তিন সংস্করণ মিলিয়ে প্রথম জয় কিংবা ড্রয়ের আগে টানা সর্বোচ্চ হারের সেটি ছিল বিশ্ব রেকর্ড।

বাংলাদেশই এই রেকর্ড নতুন করে লিখিয়েছে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ২০১৯ সালে নেপিয়ারে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে। মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ২৩২ রান তুলেও জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি।

৮ উইকেটে জিতেছিল নিউজিল্যান্ড আর আজকের মতো সেই ম্যাচেও ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। কিন্তু দল জেতেনি, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে সেটি ছিল বাংলাদেশের টানা ২২তম হার।

অর্থাৎ, এখন অনাকাক্ষিত এই বিশ্ব রেকর্ড আরও বড় (!) করার পথে রয়েছে বাংলাদেশ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে আজ যেমন ২৮তম হারের মুখ দেখল তামিম ইকবালের দল।

পরিসংখ্যান বলছে, ২৯ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। আসলে ২০১৯ সালে এই মার্চেই তো ক্রাইস্টচার্চে সেই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। তৃতীয় টেস্টটি এরপর পরিত্যক্ত হয়। এ হিসাবমতো শতবার চেষ্টার পথে ২৮তম হারের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ।

এখানেই শেষ, নাকি ২৯তম হারটি শুক্রবারেই? সে যাই হোক, ‘পার কি না পার কর যতন আবার, একবার না পারিলে দেখ শতবার।’