আইপিএলে গিয়ে এখন ফিরতে না পেরে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন স্ল্যাটার

ক্ষোভ ঝেড়েছেন স্ল্যাটার।
ফাইল ছবি: এএফপি

ভারতের করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এমন অবস্থায় আইপিএলে আসা ভারতীয় ক্রিকেটার, আম্পায়ার, ধারাভাষ্যকারেরা পড়েছেন সবচেয়ে বিপাকে।

সাবেক অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট ওপেনার মাইকেল স্ল্যাটার ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছিলেন এবারের আইপিএলে। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সরকারের নেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্তে আপাতত দেশে ফেরা হচ্ছে না স্ল্যাটারের। এই মুহূর্তে, করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে তিনি মালদ্বীপে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখান থেকেই অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায় খুঁজছেন স্ল্যাটার।

অস্ট্রেলিয়া সরকার সম্প্রতি ভারত থেকে নিজেদের দেশে সরাসরি সব ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আইপিএলে যাওয়া অস্ট্রেলীয়দের দেশে ফেরার দায়িত্ব তাঁদের নিজেদেরই নিতে হবে। তবে ভারত ছাড়ার ১৪ দিন পার না হলে কেউ অন্যভাবেও অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন না। যদি কেউ তথ্য গোপন করে ঢুকে পড়েন, তাঁর জরিমানা এমনকি পাঁচ বছরের জেলও হতে পারে।

স্ল্যাটার যেহেতু ভারত ছেড়েছেন ১৪ দিন হয়নি, তিনি মালদ্বীপ হয়েও অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে পারছেন না। এমন সিদ্ধান্তে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ওপর ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্ল্যাটার। মরিসনের উদ্দেশে স্ল্যাটার টুইট করে বলেছেন, ‘আপনার হাতে রক্ত লেগে রয়েছে।’

সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাবেক টেস্ট তারকা। টুইটারে স্ল্যাটার লিখেছেন, ‘যদি অস্ট্রেলিয়া সরকার আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকত, তাহলে আমাদের দেশে ফেরার অনুমতি দিত। এটা লজ্জার। প্রধানমন্ত্রীর হাতে রক্ত লেগে রয়েছে। আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহারের সাহস তাকে কে দিয়েছে?
প্রধানমন্ত্রীকে স্ল্যাটার বলেন, ‘নিজেদের কোয়ারেন্টিন সিস্টেম আগে ঠিক করেন। আইপিএলে কাজ করার জন্য আমার কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্র রয়েছে। অথচ তিনি দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন।’

অ্যাডাম জাম্পা আইপিএল থেকে ফিরে গেছেন।
ছবি: বিসিসিআই

এমন এক সময় স্ল্যাটার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করছেন, যখন অস্ট্রেলিয়ার প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক পল কেলি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অতিমাত্রায় সাবধান করে দিয়েছেন সবাইকে। এই মুহূর্তে ভারতে অন্তত ৯ হাজার অস্ট্রেলিয়ান আছেন। তাঁদের মধ্যে ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, প্যাট কামিন্সের মতো জাতীয় দলের তারকাও আছেন।

সব মিলিয়ে এই তালিকায় আইপিএল–সংশ্লিষ্ট আছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে ১২ জন ক্রিকেটার, ১১ জন কোচ, ৪ জন ধারাভাষ্যকার, ২ জন আম্পায়ার ও ৫ জন আছেন সাপোর্ট স্টাফ। এ ছাড়া একজন ধারাভাষ্যকারও আছেন, যিনি নিউজিল্যান্ডের নাগরিক হলেও অস্ট্রেলিয়াতে বসবাস করেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্ল্যাটারের এমন অবস্থানের পক্ষে ও বিপক্ষে সমালোচনা হচ্ছে প্রচুর। কেউ স্ল্যাটারকে দোষ দিয়ে বলছেন, ‘আমরা এখনো মহামারির মধ্যে আছি। কিন্তু আপনি নিজের ইচ্ছায় ভারতে যাওয়া বেছে নিয়েছেন। আপনি এর ঝুঁকিটা জানেন কিন্তু তারপরও সেখানে গেছেন।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘আমি আপনার এবং আপনার মতো যাঁরা এমন বিপদে পড়েছেন, সবার দুঃখ বুঝতে পারছি। কিন্তু যখন ভারতে প্রতিদিন এক লাখের ওপর আক্রান্ত হচ্ছে, ওই সময় ৪ এপ্রিল সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। সীমান্ত খুলে দিলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে।’