‘নেতা’ ধোনিকে খোঁচা দিলেন গম্ভীর

এম এস ধোনি।ছবি: টুইটার

গত মৌসুমের হতাশা এবার ভুলতে চাইছে চেন্নাই সুপার কিংস। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গতবার প্রথমবারের মতো আইপিএলের প্লে-অফ খেলতে পারেনি মহেন্দ্র সিং ধোনির দল, হতাশা কাটাতে এবার বেশ আগেভাগেই অনুশীলনে নেমে পড়েছিল। কিন্তু মাঠে নামার পর শুরুটা ভালো হয়নি তাদের। প্রথম ম্যাচে দিল্লি ক্যাপিটালসের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে চেন্নাই।

দলের হারের সঙ্গে সঙ্গেই আলোচনা শুরু হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়ে। চেন্নাইয়ে তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে আলোচনা হয়নি, হচ্ছে তাঁর ব্যাটিং নিয়ে। গত মৌসুম থেকেই আইপিএলে বেশ ম্রিয়মাণ ধোনির ব্যাট। এ মৌসুমের শুরুটাও ভালো হয়নি। প্রথম ম্যাচে শূন্য এসেছে ধোনির ব্যাট থেকে।

ধোনির এই ফর্ম দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন গৌতম গম্ভীর। ইদানীং একটু বেশি নিচে ব্যাট করছেন চেন্নাই অধিনায়ক। দলকে নেতৃত্ব দিতে চাইলে ধোনির আরও ওপরে ব্যাট করা উচিত বলে মনে করেন গম্ভীর।

ধোনির সমালোচনা করতে ছাড়েন না গম্ভীর।
ফাইল ছবি

দিল্লির বিপক্ষে ৭ নম্বরে নেমেছিলেন ধোনি। একটু নিচে নেমে ব্যাট করার এই পরিকল্পনা কাজে আসেনি। নেমে প্রথম বলে কোনো রান করতে পারেননি। দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে গেছেন। ঝড় তোলার কাজটা পরে বুঝে নিয়েছেন স্যাম কারেন। সেদিন দল জিতলে হয়তো এ নিয়ে আর খুব একটা আলোচনা হতো না। কিন্তু দিল্লির দুই ওপেনার পৃথ্বী শ ও শিখর ধাওয়ান মিলে চেন্নাইয়ের ১৮৮ রানকেও মামুলি বানিয়ে দিয়েছেন।

গত আইপিএলে ধোনি মিডল অর্ডারেই ব্যাট করেছেন। চেন্নাইয়ের আইপিএল ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না ব্যক্তিগত কারণে টুর্নামেন্টের আগেই টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন, ঘাটতি পূরণে ধোনি চার কিংবা পাঁচে নেমেছেন নিয়মিত। কিন্তু ধোনিকে আগের মতো আর ম্যাচের গল্প বদলে দেওয়া ইনিংস খেলতে দেখা যায়নি।

এবার রায়না ফিরে এসেছেন। দলে ফাফ ডু প্লেসি, মঈন আলী, আম্বাতি রাইডুর মতো ব্যাটসম্যান আছেন। তাই নিজে সাতে নেমে এসেছিলেন ধোনি। হয়তো ভেবেছিলেন শেষ দিকে ধুমধাড়াক্কা ইনিংস খেলে ভূমিকা রাখবেন। যেসব ইনিংস খেলেই ধোনি নিজেকে কিংবদন্তিতুল্য উচ্চতায় তুলেছেন।

চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
ছবি: বিসিসিআই

গৌতম গম্ভীরের ধারণা, ধোনির বোঝা উচিত ওই ভূমিকা তাঁর আর কখনো পালন করা হবে না। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে দুবার আইপিএল জেতানো গম্ভীর স্টার স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘এম এস ধোনির উচিত আরও ওপরে উঠে ব্যাট করা। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শেষ পর্যন্ত সবার উচিত সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। আমরা সব সময় বলি, একজন নেতাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। আপনি যদি সাতে নেমে ব্যাট করেন, তাহলে আপনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন না।’

ধোনি–সংক্রান্ত আলোচনায় গম্ভীর বরাবরই একটি পক্ষ নেন। কদিন আগেই ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের ১০ বছর পূর্তিতে সবাই ধোনির জয় এনে দেওয়া সেই ছক্কা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা নিয়ে বিরক্তি জানিয়েছেন। সেদিন তাঁর ৯৭ রানের ইনিংসটিই যে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল, সেটি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন গম্ভীর। এবারও সুযোগ পেয়ে ধোনিকে খোঁচা দেওয়ার লোভ সামলাতে পারেননি গম্ভীর। প্রকৃত নেতা আগে নেমে ব্যাটিংয়ের ভার নেন বলে প্রকারান্তরে ধোনিকেই তো খোঁচা দিয়ে দিলেন গম্ভীর।

২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে যুবরাজ সিং ও সুরেশ রায়নাকে পেছনে ঠেলে ধোনি ব্যাটিং অর্ডারের ৫ নম্বরে উঠে এসেছিলেন, খেলেছিলেন ৯১ রানের ইনিংস। ভারতকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন বিশাল এক ছক্কা মেরে। কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো মঞ্চে টেন্ডুলকার-শেবাগ-কোহলির বিদায়ের পর ধোনির এভাবে বুক চিতিয়ে ওপরে উঠে আসা, ৯১ রানের ইনিংস খেলা আর ওভাবে ছক্কা মেরে ইনিংস শেষ করা...সব মিলিয়ে ধোনি আর তাঁর নেতৃত্বের বন্দনা হওয়ারই কথা!

মহেন্দ্র সিং ধোনি
ছবি : রয়টার্স

কিন্তু তা এতটাই হয়েছিল যে অন্য প্রান্তে গৌতম গম্ভীরও যে ৯৭ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে জয়ের পথে নিয়ে এসেছেন, সেটি যেন কেউ তেমন মনেই রাখেননি! গম্ভীরের তা নিয়ে জ্বলুনি যে আছে, তিনি মুখে স্বীকার না করলেও তা সহজেই অনুমেয়। সে কারণে কি ধোনিকে এখন ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে উঠে আসার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে খোঁচা মারছেন গম্ভীর? ‘না’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার আগে দুবার ভাবতে হয় বটে!

আজ রাতে আইপিএলে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে খেলতে নামবে চেন্নাই। সেদিন দিল্লির ব্যাটিং–ঝড়ের পর চেন্নাইয়ের মূল সমস্যা বোলিং বলে মনে হয়েছিল। যেকোনো উইকেটেই প্রতিপক্ষ ১৮৮ রান এত অনায়াসে তাড়া করতে পারা মানেই বোলিং ইউনিটে কোনো সমস্যা ছিল।গম্ভীর মানছেন, চেন্নাইয়ের বোলিং নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে, ‘হ্যাঁ, ওদের বোলিং লাইনআপে কিছু ঝামেলা আছে।’

তবে গম্ভীরের কাছে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং দুর্বলতাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। আর সে দুর্বলতা ঢাকতে সমাধান? গম্ভীর দাওয়াই বদলাচ্ছেন না। সেটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘সে (ধোনি) আর চার বা পাঁচ বছর আগের ধোনি নয়, যে কিনা চাইলে নেমেই বোলারদের বেধড়ক পেটাতে পারে। আমার ধারণা, ওর চার বা পাঁচে নামা উচিত। এর নিচে নয়।’