পন্টিং-মাশরাফির আয়নায় সেই ম্যাচ

আফগান-জুজু জয় হলো। এবার সামনে অস্ট্রেলিয়া-বাস্তবতা। সম্ভাবনার নিক্তিতে বিশ্বকাপে এই ম্যাচেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। ব্রিসবেনের গতিময় বাউন্সি উইকেটে সামলাতে হবে অস্ট্রেলিয়ান পেস! তবে সম্ভাবনা তো ১০ বছর আগেও ছিল না। কিন্তু কার্ডিফে সেদিন উড়ে যাওয়ার শঙ্কাকে বাংলাদেশ রূপ দিয়েছিল রূপকথার জয়ে।
অস্ট্রেলিয়া তখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তো বটেই, প্রায় অপরাজেয় দল। ম্যাচের আগে বাজির দর ছিল ৫০০-১! বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই ম্যাচের একাদশটাই মনে করুন—গিলক্রিস্ট, হেইডেন, পন্টিং, মার্টিন, ক্লার্ক, হাসি, ক্যাটিচ, হগ, গিলেস্পি, ক্যাসপ্রোইচ ও ম্যাকগ্রা। কিন্তু ক্রিকেট-বিশ্বকে চমকে ও থমকে দিয়ে বাংলাদেশ জিতেছিল ৫ উইকেটে। দুই দলের বাকি ১৮ ম্যাচের সব কটিই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। তার পরও যতবার মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ, ঠিকই ঘুরেফিরে আসে ওই ম্যাচ।
আসছে এবারও। ২১ ফেব্রুয়ারি ম্যাচ ব্রিসবেনে, কিন্তু আলোচনায় কার্ডিফ। স্মরণীয় ওই জয়ের সাক্ষী একজনই আছে বাংলাদেশের এই দলে। এখন তিনি অধিনায়কও। মাশরাফি বিন মুর্তজার মনে আলাদা জায়গা নিয়ে আছে ওই জয়, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট ও আমাদের সমর্থকদের জন্য সেটি ছিল অসাধারণ এক মুহূর্ত। অস্ট্রেলিয়া তখন সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বসেরা দল।’ তবে দলের অধিনায়ক তিনি, সেবার জিতলেও যে এবার তা কাজে লাগবে না, জানেন ভালো করেই, ‘আশরাফুল দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছিল। তবে সেটি অনেক আগের ঘটনা...ওই দলের একমাত্র আমিই টিকে আছি...ওই ম্যাচ নিয়ে তাই এখন ভেবে লাভ নেই।’
বাংলাদেশের দারুণ কিছু করার সূচনা হয়েছিল সেদিন মাশরাফির হাত ধরেই। ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই ফিরিয়েছিলেন বিপজ্জনক অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে। পরে ২৫০ রান তাড়ায় আশরাফুল করেছিলেন ১০১ বলে ১০০। চতুর্থ উইকেটে ১৩০ রানের জুটি গড়েছিলেন সেই সময়ের অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের (৪৭) সঙ্গে। বাংলাদেশ জিতেছিল ৫ উইকেটে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৭ রান। জেসন গিলেস্পির প্রথম বলেই স্লোয়ার বলটিকে লং অনের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন আফতাব আহমেদ। তখনকার বাংলাদেশ কোচ, এখনকার জিম্বাবুয়ে কোচ ডেভ হোয়াটমোরের এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে ওই সময়ের কথা, ‘ছক্কাটি হওয়ার পরই ছেলেরা সবাই খুশিতে পাগলের মতো লাফাচ্ছিল।’
সেদিন ১৬ বলে ১ রান করে আউট হয়েছিলেন রিকি পন্টিং। পরে যোগ হয়েছে ম্যাচ হারের যন্ত্রণা। এমন যন্ত্রণা, যা কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে আজও, ‘এটা সম্ভবত ক্রিকেট ইহিতাসের অন্যতম বড় অঘটন। অধিনায়ক হিসেবে আমার সবচেয়ে বাজে হার তো বটেই।’
স্কাই স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকক্ষে বসে ম্যাচের শেষ মুহূর্তের উত্তেজনাকে আরও জীবন্ত করে তুলেছিলেন ডেভিড লয়েড। ওই ম্যাচটিকে এক লাইনে ফুটিয়ে তোলে যেন লয়েডের একটি কথাই, ‘রিখটার স্কেলে ওই অঘটনের মাত্রা ধরতে গেলে আসলে স্কেল ছাড়িয়ে যায়!’ এএফপি।