পন্তে ভারতের দিন কাটল সুন্দর

দুর্দান্ত এক ইনিংসে ভারতকে এগিয়ে দিয়েছেন পন্ত।
ছবি: বিসিসিআই

এমন পরিসংখ্যান নিয়ে কেউ যে ঘাঁটাঘাঁটি করে, সেটিই জানা ছিল না হয়তো কারও। ইএসপিএন ক্রিকইনফো তবু ঘটনাটি জানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিল। ২০১৪ সালের পর এমন কিছু নাকি ঘটেনি।

তা কী ঘটেনি? ২০১৪ সালের পর টেস্টে কেউ কখনো জেমস অ্যান্ডারসনকে রিভার্স সুইপ করার চেষ্টা করেননি। অবশ্য ঋষভ পন্ত যে শট খেলেছেন, তাকে ঠিক সুইপও বলা যায় না। অনেকটা স্কুপের চেষ্টা করেছিলেন। সেটা ঠিকভাবে ব্যাটেও লাগেনি। তাতে কী, ওত পেতে থাকা স্লিপ কর্ডনের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল সেটাই।

অ্যান্ডারসনের হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা বেশ চোখে লাগছিল। ওই যে ২০১৪ সালের পর থেকে এমন কিছু করার ‘স্পর্ধা’ কেউ দেখাননি। আর ভারতীয় উইকেটকিপার তখন ৮৯ রানে ব্যাট করছেন! ওই অবস্থাতেই এমন এক শটে নড়বড়ে নব্বইয়ে ঢুকলেন পন্ত।

দিনের শেষ সেশনের বিজ্ঞাপন এই এক শটেই বর্ণনা করা যায়। যে ইনিংসেই আচমকা মোড় ঘুরে গেল আহমেদাবাদ টেস্টের। সিরিজে নির্ধারণী চতুর্থ টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল ভারত। পন্তের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি উল্টো ৮৯ রানে এগিয়ে থেকে দিন শেষ করতে সাহায্য করল তাঁর দলকে। ৭ উইকেটে ২৯৪ রানে দিন শেষ করেছে স্বাগতিক দল।

আগ্রাসী ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে পিছু হটতে বাধ্য করেছেন পন্ত।
ছবি: বিসিসিআই

নব্বইয়ের ঘরে যেতে রিভার্স সুইপ বা স্কুপ করেছেন পন্ত। তাঁর সেঞ্চুরি ছোঁয়াটা হলো আরও দেখনদারি ঢঙে। ৮৩তম ওভারের প্রথম বলে অমন শট খেলা পন্ত সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ৮৪তম ওভারের প্রথম বলে। এবার এশিয়ায় এসে নিজের বোলিং সত্তাকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন জো রুট। ইংলিশ অধিনায়কের বলটা খুব খারাপ ছিল না। কিন্তু ৯৪ রানে থাকা পন্তের ও নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে। এক হাঁটু মুড়ে ব্যাট ঘোরালেন। বল আছড়ে পড়ল স্কয়ার লেগের গ্যালারিতে। বল গ্যালারি থেকে ফিরে আসার আগেই হেলমেট খোলা হয়ে গেল পন্তের। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি দেখা গ্যালারির অভিবাদন বুঝে নিলেন সগৌরবে।

ওভারের প্রথম বলেই কিছু ঘটার ব্যাপারটি দেখা গেল পরের ওভারেও। এবার অ্যান্ডারসনের বেশ বাইরের এক বল অন সাইডে খেলতে গিয়ে শর্ট উইকেটে ধরা পড়লেন পন্ত। কার হাতে? কাকতালই হবে, যাঁকে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন, সেই রুট। ১০১ রানে শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নিলেন পন্ত। কিন্তু এর আগেই ম্যাচের সুর বদলে গেছে।

১ উইকেটে ২৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু হয়েছিল ভারতের। চা-বিরতির আগে ভারত আরও ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল। শেষ সেশনে যখন নামছে ভারত, তখন দলের স্কোর ১৫৩। গতকাল মাত্র ২০৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ার আশা করছিল। চেতেশ্বর পূজারা (১৭), বিরাট কোহলিরা (০) ৪১ রানের মধ্যেই বিদায় নিয়েছেন। অজিঙ্কা রাহানেও (২৭) দলকে ৮০ রানে রেখে ফিরেছেন। নিজের স্বভাবজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে কিছুটা রাশ টেনেও টিকে থাকতে পারেননি রোহিত শর্মা। এক রানের জন্য ফিফটি হাতছাড়া করে যখন ফিরছেন, ভারতের রান তখন ১২১। চা-বিরতির আগে পন্তকে একা রেখে ফিরেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। ১৪৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় ভারত।

দিনটা কাটিয়ে দিয়েছেন সুন্দর ও প্যাটেল।
ছবি: বিসিসিআই

সেই ভারতের সপ্তম উইকেট পড়ল ২৫৯ রানে। ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে শুধু সময় কাটানোয় মনোযোগ দেননি পন্ত। বরং দ্রুত রান তুলে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলাটাই গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর কাছে। ২৬ ওভারের জুটিতে তাই এসেছে ১১৩ রান। ১১৫ বলে সেঞ্চুরি করা পন্ত পঞ্চাশ থেকে সেঞ্চুরি ছুঁতে মাত্র ৩৩ বল সময় নিয়েছেন। দিনের প্রায় আধা ঘণ্টা বাকি থাকতে পন্ত ফিরলেও দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন সুন্দর। অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে প্রায় ১০ ওভার কাটিয়ে দিয়েছেন। তুলে নিয়েছেন আরও ৩৫ রান। ৬০ রানে অপরাজিত আছেন সুন্দর। তাঁর সঙ্গী আছেন ১১ রানে।