পরিকল্পনা তেমন না বদলেই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে উইন্ডিজ

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উইকেটের মিছিল আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের উল্লাস ছিল কাল প্রথম দিনের পরিচিত দৃশ্যছবি: এএফপি

প্রথম দিনে এর চেয়ে ভালো কিছু আর সম্ভবত আশা করতে পারত না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্টের প্রথম ঘণ্টাখানেক আর ৫০ রানের মধ্যেই বাংলাদেশের পাঁচ উইকেট নেই, শেষ পর্যন্ত ১০৩ রানে অলআউট সাকিব আল হাসানের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিন শেষ করেছে প্রথম ইনিংসে ৮ রানে পিছিয়ে থেকে, হাতে এখনো ৮ উইকেট বাকি!

এমন দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে কেউই একটু উচ্ছ্বসিত থাকার কথা। তবে সংবাদ সম্মেলনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল থেকে যাঁকে পাঠানো হলো, তাঁকে সম্ভবত আবেগ ছোঁয় না। দিন শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসার পর তাঁকে যা নিয়েই প্রশ্ন হলো, অল্প কয়েক শব্দে কোনোরকমে উত্তর দিয়েই শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারের। তবে এই অল্প কথায়ই যা বোঝালেন, তা হলো, বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরিকল্পনায় তেমন অদলবদলও করতে হয়নি!

আরও পড়ুন
আলজারি জোসেফ
ফাইল ছবি: এএফপি

বাংলাদেশকে ১০৫ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পথে জোসেফ নিজেই অনেক বড় ভূমিকা রেখেছেন। ৮.৫ ওভারে ৩৩ রানে ৩ উইকেট তাঁর, প্রথমটি তামিম ইকবালের। ১৬ রানেই ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তখন তামিম ও লিটনের ব্যাটে মাত্র ইনিংস পুনরুদ্ধারের আশা দেখছিল! জোসেফের পরের উইকেটটি বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করা সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে, বাংলাদেশের নবম উইকেট সেটি। তার তিন বল পর খালেদ আহমেদকে আউট করে বাংলাদেশ ইনিংসের শেষও টেনে দিয়েছেন জোসেফই।

কিন্তু দিন শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে জোসেফের উত্তর শুনে কে বলবে, ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে এমন একটা দিনের উচ্ছ্বাস তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্রও আছে! দিনটা তো ভালো কেটেছে—সাংবাদিক এমন মন্তব্য করে জোসেফের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন, তাতে জোসেফের উত্তর, ‘হ্যাঁ, আপনি যখন প্রথম দিনেই কোনো দলকে এক শ-র আশপাশে আউট করে ফেলতে পারবেন, সেটা তো ভালো দিনই।’

আরও পড়ুন
টসও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে গেছে
ছবি: এএফপি

পরের প্রশ্ন হলো টস নিয়ে। টস জেতা প্রভাব ফেলেছে কি না? তাতেও জোসেফের উত্তরে শব্দের কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, ‘উইকেটে বল একটু থেমে আসে, আর্দ্রতাও আছে। এমন উইকেটে টস আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ এবার আরেকটু ঘুরিয়ে প্রশ্ন, এমন উইকেটে বোলিং পরিকল্পনায় কোনো বদল এনেছেন কি না। জোসেফের এবার উত্তর একটু লম্বা, ‘সাধারণত টেস্টে বোলিংয়ের পরিকল্পনা সেভাবে বদলায় না। ব্যাটসম্যান হিসাব করে হয়তো একটু এদিক-সেদিক করে নিতে হয়। এখানে উইকেটটা একটু ধীর, সে কারণে একটু মানিয়ে নিতে হয়েছে, ফুল লেংথে বল ফেলতে হয়েছে।’

এ পর্যায়ে যেন সংবাদকর্মী আর জোসেফের ‘খেলা’ জমেছে! জোসেফের কাছ থেকে বাড়তি কিছু শব্দ বের করার ‘খেলা।’ কিন্তু ব্যাটসম্যানের ফাঁদে পা না দিয়ে নিজের মতো লাইন-লেংথে বোলিং করে ব্যাটসম্যানকেই উল্টো শট খেলতে বাধ্য করার কৌশলের মতো, এখানেও জোসেফই জয়ী!

আরও পড়ুন

এই টেস্টের আগে বাংলাদেশ দলের সংবাদ সম্মেলনে টপ অর্ডারের ধসে পড়া নিয়ে প্রশ্ন তো ‘ধ্রুবক’ই ছিল। আগের কয়েকটি টেস্টে যে বাংলাদেশের টপ অর্ডার দ্রুতই ভেঙে গেছে। কালও তার ব্যতিক্রম হলো না। তা বাংলাদেশের আগের কয়েকটি টেস্টে টপ অর্ডারের ধসে পড়া দেখে কোনো বাড়তি পরিকল্পনা এঁটেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ? জোসেফকে এ প্রশ্নে তাঁর উত্তর, ‘প্রত্যেক টেস্টেই তো সবাই চায় দ্রুত উইকেট তুলে নিতে। কিন্তু সব সময় সেটা হয় না। তবে এটার জন্য আমাদের পরিকল্পনা বদলায়নি।’

সাকিবই বাংলাদেশের হয়ে যা একটু লড়েছেন ব্যাট হাতে
ছবি: এএফপি

পরিকল্পনা না বদলেই প্রতিপক্ষের এমন সাফল্য অবশ্য বাংলাদেশের জন্য অশনিবার্তা।

অথচ এই টেস্টে ক্যারিবিয়ান খেলোয়াড়দের ক্লান্ত থাকার কথা ছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষ হয়েছে চার দিন আগে, তারপরই এই সিরিজে নামতে হলো জোসেফ-ব্রাফেটদের। তা নিয়ে প্রশ্নেও অবশ্য জোসেফের তেমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল না, ‘এটা আদর্শ না, কিন্তু কাজটাই এমন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাঠে নেমে ঠিকমতো কাজটা করা।’

আরও পড়ুন

সবশেষে আইপিএল টেনে বুঝি সংবাদের কোনো কোণ বের করার চেষ্টা করলেন সাংবাদিক। তাতেও ইতরবিশেষ হলো না। আইপিএলের কারণে তাঁর বোলিংয়ে সাহায্য পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে জোসেফের উত্তরটা হলো একেবারে ছাঁচে বাঁধা, ‘হ্যাঁ, সেখানে আমি কোচদের সঙ্গে কাজ করেছি। ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছি, শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, সব ধরনের ক্রিকেট নিয়েই। এসব কিছুই আমাকে সাহায্য করেছে।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন