পাকিস্তান পাঁচে, বাংলাদেশের পাশে এখনো লেখা শূন্য

হতাশা দূর হচ্ছে না বাংলাদেশের।ছবি: প্রথম আলো

রাওয়ালপিন্ডিতে আরেকটি ব্যাটিং–ধস দক্ষিণ আফ্রিকাকে হার মানতে বাধ্য করেছে। ৯৫ রানের এ হারে সিরিজও ২-০ ব্যবধানে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর প্রোটিয়াদের এভাবে হারিয়ে এক ঢিলে বেশ কয়েকটি পাখি মেরেছে পাকিস্তান।

১৭ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল পাকিস্তান। আর সে সঙ্গে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে একলাফে পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে তারা। আর ইদানীং র‍্যাঙ্কিং থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায়ও উন্নতি হয়েছে বাবর আজমের দলের। সেখানেও প্রোটিয়াদের টপকে পাঁচে উঠে গেছে পাকিস্তান।

আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকাই পুরোনো এক ক্ষত জাগিয়ে তুলেছে বাংলাদেশের। টেস্টে সেরা দল নির্বাচনের এ নতুন ধরনে বাংলাদেশের পাশে যে এখনো শূন্য লেখা রয়েছে।  

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে অনেক প্রাপ্তি পাকিস্তানের।
ছবি: এএফপি

বাংলাদেশ সফরের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ খর্বশক্তির দল ঘোষণার পরই একটা আশা জেগেছিল—আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অবশেষে বুঝি কিছু পয়েন্ট পাচ্ছে বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের আগে বাংলাদেশ খেলেছেই মাত্র তিনটি টেস্ট। তিনটিই হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশের পাশে কোনো পয়েন্ট ছিল না।

ঘরের মাঠে দুই বছর আগে প্রায় পূর্ণ শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করেছিল বাংলাদেশ। সেখানে এবার অধিনায়ক, মূল দুই অলরাউন্ডার ও মূল তিন ব্যাটসম্যানকে ছাড়া বাংলাদেশ সফরে এসেছে দলটি। এমন এক দলের বিপক্ষেই তো টেস্ট জেতা বা ড্র করার সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু চট্টগ্রামে উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি রানের লক্ষ্য দিয়ে হারের রেকর্ড গড়ে আপাতত বাংলাদেশ সে সুযোগটা হাতছাড়া করেছে।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে চার ম্যাচ শেষেও তাই বাংলাদেশের নামের পাশে শূন্য পয়েন্ট। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে বেশ আশা জেগেছিল। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে কোন দল কত পয়েন্ট পেল, সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কোন দল সম্ভাব্য কত শতাংশ পয়েন্ট পেল। এর আগে একটি পূর্ণাঙ্গ ও একটি অর্ধেক সিরিজ খেলায় বাংলাদেশের তাই এ দিক দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল।

সিরিজের শেষ ম্যাচে আরেকটি সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।
ছবি: প্রথম আলো

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে পূর্ণ ১২০ পয়েন্ট পেলে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে যেত বাংলাদেশ। ওদিকে পাকিস্তানের কাছে ধবলধোলাই হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকাও বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়ত। পাকিস্তান প্রোটিয়াদের দুই ম্যাচেই হারিয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে যেমন সাত থেকে পাঁচে উঠে এসেছে, তেমনি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও পাঁচে চলে এসেছে। ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা দুই ক্ষেত্রেই নেমে এসেছে ছয়ে।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এগিয়ে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টে জিততে পারলে মূল্যবান ৬০ পয়েন্ট পাবে দল। এতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকাতে না পারলেও শতকরা হিসাবে শ্রীলঙ্কাকে (১৬.৭%) ঠিকই পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ। কারণ, এই এক জয়েই সম্ভাব্য পয়েন্টের ২০ ভাগ অর্জন করবে বাংলাদেশ।

এতে অবশ্য টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মূল উদ্দেশ্যে কোনো দাগ পড়বে না। টেস্টে কোন দল সেরা, সেটা নির্ধারণ করার জন্যই সিরিজভিত্তিক ১২০ পয়েন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সে অনুযায়ী লর্ডসে ১৮ জুন হতে যাওয়া ফাইনালের একটি স্থান পাকা করে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড। ৭০ শতাংশ পয়েন্ট পেয়ে দুই নম্বরে আছে দলটি। তিনে থাকা অস্ট্রেলিয়া অবশ্য একটু ঝামেলায় পড়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের সিরিজ বাতিল হওয়ায় নিউজিল্যান্ডকে টপকাতে পারছে না অস্ট্রেলিয়া। ওদিকে শীর্ষে থেকেও ফাইনাল নিশ্চিত নয় ভারতের। সম্ভাব্য পয়েন্টের ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ পেয়েছে ভারত।

ইংল্যান্ড ও ভারতের এ সিরিজ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের স্থানও নির্ধারণ করে দেবে।
ছবি: টুইটার

কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটা এটা বদলে দিতে পারে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার টেস্টের সিরিজে অন্তত দুটি ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতলে ভারতই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলবে। কিন্তু সিরিজ যদি ড্র হয়ে যায়, বা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিততে বাধ্য হয়, তখনই বিপদ ঘটবে। সম্ভাব্য পয়েন্টের হার কমে যাবে দুই দলের। ভারত ও ইংল্যান্ড, দুই দলেরই তখন ৬৯ শতাংশের নিচে নেমে যাবে পয়েন্ট। আর তখন দুই ও তিনে থাকা নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া শীর্ষ দুইয়ে চলে যাবে। অর্থাৎ ফাইনাল এ দুই দলই খেলবে।

ওদিকে বর্তমানে চারে থাকা ইংল্যান্ডের শীর্ষে দুইয়ে ওঠার সুযোগ মাত্র একটি উপায়ে। আর তা হলো ভারতকে ভারতের মাটিতেই ৩-০ বা ৪-০ ব্যবধানে হারানো। অর্থাৎ, চেন্নাই টেস্টের প্রথম চার দিনের দাপটটা পুরো সিরিজেই ধরে রাখতে হবে ইংল্যান্ডকে।