পাকিস্তানের এই দলকে ওয়াপদার দলও হারাতে পারবে!

পাকিস্তানের টেস্ট দল নিউজিল্যান্ডেও হতাশ হয়েছে।
ছবি: এএফপি

শান মাসুদ, হারিস সোহেল ও মোহাম্মদ আব্বাস বাদ পড়েছেন। হাসান আলী ফিরেছেন। ২০ জনের দলে ৯ জনই নবাগত! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৬ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া দুই টেস্টের সিরিজের জন্য কাল চমকজাগানিয়া এক দলই ঘোষণা করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

কিন্তু দল ঘোষণার পর পিসিবির নির্বাচকদের যদি দুদণ্ড শান্তি মিলত! সমালোচনা কিংবা প্রশংসা তো নিয়মিতই হয়। তবে পাকিস্তানের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান কামরান আকমলের সমালোচনার ঝাঁজটা একটু বেশিই হলো। তাঁর মতে, পাকিস্তানের এই দলকে নাকি ওয়াপদার দল নিয়েও হারাতে পারবেন তিনি!

‘আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি, লিখেও দিতে পারি যে ওয়াপদা কিংবা এসএসজিসির (সুই সাউদার্ন গ্যাস করপোরেশনের ক্রিকেট টিম) দলও (পাকিস্তানের) এই দলকে হারাতে পারবে। আমার হাতে ক্ষমতা দিন, আমি ওয়াপদার খেলোয়াড়দের নিয়ে একটা দল গড়ব। আমি বাজি ধরতে পারি, ওরা চার দিনের মধ্যে এই দলকে হারাবে’—বলেছেন কামরান।

কামরানের চোখে, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এমন দুর্বল দল আর কখনো তিনি দেখেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে পাকিস্তানের এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা তিনি মানতে পারছেন না।

শুধু বাবর আজম ও আজহার আলী ছাড়া ব্যাটিংয়ে আর ভরসা করার মতো কাউকে দেখছেন না আকমল, ‘মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান নিয়ে আপনি ম্যাচ জিততে পারেন না—বাবর আজম ও আজহার আলী। বাবর মাত্রই লম্বা চোট থেকে ফিরেছে, আর আজহারের ব্যাটিং দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ স্পিনারদের বিপক্ষে নড়বড়ে হতে পারে।’

কামরান আকমল - যখন খেলতেন পাকিস্তানের জার্সিতে।
ছবি: পিসিবি।

পাকিস্তান একেবারে ঘূর্ণি পিচ বানালেও এ ক্ষেত্রে সুবিধা করতে পারবে না বলেই মনে হচ্ছে কামরানের, ‘ওদের এত অভিজ্ঞ বোলিংয়ের বিপক্ষে আমাদের এত অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপ কী করবে, তা-ই ভাবছি। বুঝতে পারছি তারা বল নিচু হয়ে আসার মতো, ঘূর্ণি পিচ বানাবে সফরকারীদের জন্য। সেটা সত্ত্বেও স্পিন খেলার মতো একটা শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ দরকার ছিল আমাদের। আমার মতে, এটা পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপ।’

দলে হারিস সোহেল ও আবদুল্লাহ শফিকের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কামরান। তাঁর দাবি, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলা উসমান সালাউদ্দিনের সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল।

সব মিলিয়ে এই দলের ব্যাখ্যায় কিংবদন্তি অধিনায়ক ইমরান খানের ব্যবহৃত একটা শব্দ টেনে এনেছেন কামরান। ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচের আগে ইমরান টুইটে লিখেছিলেন, ‘জেতার মতো আক্রমণাত্মক কৌশল নিতে সরফরাজ আহমেদের (বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অধিনায়ক) উচিত বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান বা বোলার নেওয়া। কারণ, রাইল্লু কাত্তারা চাপের মুখে কদাচিৎই ভালো করতে পারে।’

পাকিস্তানকে ১৯৯২ বিশ্বকাপ জেতানো কিংবদন্তি অধিনায়ক ও বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান ‘রাইল্লু কাত্তা’ বলতে কী বুঝিয়েছেন, সেটি সে সময়ে বেশ আলোচনার বিষয় ছিল। কারও মতে, রাইল্লু কাত্তা বলতে মূলত পাকিস্তানে মুটিয়ে যাওয়া ষাঁড়কে বোঝানো হয়, যেটি কোনো কাজে আসে না। তবে মানুষের ক্ষেত্রে ‘রাইল্লু কাত্তা’ বলতে এমন মানুষকে বোঝানো হয়, যাঁর জীবনে কোনো লক্ষ্য নেই, যিনি কোনো কাজই খুব ভালোভাবে পারেন না।

কামরানও পাকিস্তানের এই দলকে নিয়ে কাল বললেন, ‘এটা টেস্ট ক্রিকেট, কোনো দ্বিতীয় গ্রেডের অনুষ্ঠান নয় যে আপনি রাইল্লু কাত্তাদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নেবেন। প্রধান নির্বাচক যখন বলেন, দলে নেওয়া ব্যাটসম্যানদের অনেকে বোলিংও করতে পারেন, শুনে মনে হয় কৌতুক। টেস্ট ক্রিকেটে আপনার আধা বোলার বা আধা ব্যাটসম্যান নিয়ে লাভ নেই, এখানে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান-বোলার দরকার হয়।’

দলের প্রধান কোচ মিসবাহ-উল-হকের হাত থেকে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বের অনেকটাই যে পাকিস্তানের বোর্ড কেড়ে নিয়েছে, সেটিকেও যথার্থই মানছেন কামরান, ‘মিসবাহর কাজের কারণেই পিসিবি অধিনায়ক বাবর আজমের হাতে দল নির্বাচনের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে। এই অসম্মানের জন্য মিসবাহর দিক থেকে কোনো জবাব আসেনি। কিন্তু এটা তাঁর প্রাপ্যই, কারণ সাম্প্রতিক অতীতে তিনি দল নির্বাচনে গড়বড় করে ফেলেছেন, যেটার কারণে সব বিভাগেই দলের পারফরম্যান্স খারাপ হয়েছে।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পাকিস্তান দল:

ওপেনার: আবিদ আলী, আবদুল্লাহ শফিক, ইমরান বাট।
মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান: আজহার আলী, বাবর আজম, ফাওয়াদ আলম, কামরান গুলাম, সালমান আলী আঘা, সউদ শাকিল।
অলরাউন্ডার: ফাহিম আশরাফ, মোহাম্মদ নাওয়াজ।
উইকেটকিপার: মোহাম্মদ রিজওয়ান, সরফরাজ আহমেদ।
স্পিনার: নউমান আলী, সাজিদ খান, ইয়াসির শাহ।
ফাস্ট বোলার: হারিস রউফ, হাসান আলী, শাহীন শাহ আফ্রিদি, তাবিশ খান।