পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে আমিরকে চান ওয়াসিম আকরাম

পাকিস্তানের সাবেক পেসার মোহাম্মদ আমির।ফাইল ছবি: এএফপি

এমন কোনো দিন যেন যেতে চায় না, যখন মোহাম্মদ আমিরকে ঘিরে পাকিস্তানের ক্রিকেটে কোনো খবর বেরোয় না।

পাকিস্তানের জাতীয় দল ঘিরে রাজনীতিকে কারণ দেখিয়ে গত ডিসেম্বরে মাত্র ২৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছিলেন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার। পরে অবশ্য অবসরের ঘোষণা থেকে ফিরে এসে শুধু জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বর্তমান নির্বাচক ও কোচরা যত দিন আছেন, তত দিন তিনি পাকিস্তান দলের সঙ্গে নেই।

কিন্তু আলোচনা তাঁকে নিয়ে চলছে তো চলছেই! কখনো আমির নিজে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সমালোচনা করে আলোচনায় আসছেন, তো কখনো তাঁকে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বলছেন অন্য কেউ।

পাকিস্তানের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ উইকেট ওয়াসিম আকরামের।
ফাইল ছবি

নতুন করে আমিরের খবরের শিরোনাম হওয়ার কারণ, তাঁকে নিয়ে এবার কথা বলেছেন ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আমিরকে যাঁর উত্তরসূরি ভাবা হতো, পাকিস্তানের সেই কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম।

পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ পিএসএলে আমিরের দল করাচি কিংসের কোচ ও ক্রিকেট পরিচালক আকরামের মত, আগামী অক্টোবরে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে আমিরকে রাখা উচিত পাকিস্তানের।

আমিরকে দলের বাইরে রাখায় পাকিস্তানের বর্তমান টিম ম্যানেজমেন্টের কড়া সমালোচনা করেছেন ওয়াসিম আকরাম, ‘আমি খুবই বিস্মিত এতে। কারণ, আমির অনেক অভিজ্ঞ একজন বোলার, বিশ্বে টি-টোয়েন্টিতে সেরা বোলারদের একজন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ওর পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে থাকা উচিত।’

বিশ্বকাপের দলে আমিরকে দেখতে চাওয়ার নেপথ্যে যুক্তিযুক্ত কারণও দেখালেন আকরাম, ‘বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে আপনার অভিজ্ঞ বোলারদের দরকার হয়, যারা তরুণ বোলারদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিতে পারবে।’

ক্যারিয়ারের শুরুর দিক থেকে আমিরের দুই দিকে বল বাঁক খাওয়ানোর ক্ষমতা, ইয়র্কার-বাউন্সার দেওয়ার দক্ষতা মিলিয়ে তাঁকে তখন বলা হতো ‘ওয়াসিম আকরামের ক্লোন’।

কিংবদন্তির অনুসরণ ক্যারিয়ারটাকে এগিয়ে নেওয়ার পথে অবশ্য করতে পারেননি আমির। আকরাম যেখানে পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা উইকেটশিকারি, আমির ২০১০ সালে লর্ডসে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলেন।

আমির অনেক অভিজ্ঞ একজন বোলার, বিশ্বে টি-টোয়েন্টিতে সেরা বোলারদের একজন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ওর পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে থাকা উচিত।
পাকিস্তানের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম

পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে ফিরেছেন, কিন্তু আগের ধার আর অতটা নিয়মিত ছিল না। এর মধ্যেই অবশ্য ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কিংবা ২০১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে তর্ক সাপেক্ষে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন তিনিই।

আমিরকে ঘিরে প্রত্যাশা বেশি ছিল বলেই হয়তো তাঁর এভাবে সরে যাওয়া বেশি আলোচিত। তাঁর অবসরের ঘোষণা ঠিক হলো কি না, এ নিয়ে আলোচনা এখনো চলে। এর আগে আমির ধকল কমানোকে কারণ দেখিয়ে শুধু টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন, বিতর্ক তখনো হয়েছিল। তবে আকরাম এ নিয়ে এত আলোচনার কিছু দেখেন না।

পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে আলাপে সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক বলেছেন, ‘অন্য অনেকেই তো এমন করেছে, কিন্তু তাদের নিয়ে তো কেউ কিছু বলে না। তাহলে শুধু আমিরকে নিয়ে এত কথা কেন? আমার মনে হয়, ও যদি (টেস্ট ছাড়া) অন্য সংস্করণে খেলতে চায়, সে ক্ষেত্রে ওর (সেসব সংস্করণের) পাকিস্তান দলে থাকা উচিত।’

তা বিশ্বকাপ নিয়েই যখন কথা হলো, বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সম্ভাবনা নিয়ে কথা হবে না? অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বিশ্বকাপ, কিন্তু এ মুহূর্তে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দেশটিতে। অবস্থার উন্নতি না হলে বিশ্বকাপটা ভারত থেকে সরিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে টুর্নামেন্ট আয়োজিত হলে পাকিস্তানের ভালো করার সম্ভাবনা আরও বাড়বে জানিয়ে আকরামের বিশ্লেষণ, ‘টি-টোয়েন্টি দলে আমাদের আরও কয়েকজন খেলোয়াড় লাগবে, যারা ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারে, যারা ব্যর্থতার ভয় ভুলে গিয়ে খেলতে পারবে। শুধু সে ক্ষেত্রেই আমরা ভালো করতে পারব।’