পাকিস্তানের মাথাব্যথার ওষুধ দিল ভারত

২০১৯ বিশ্বকাপে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান।
ছবি: সংগৃহীত

যেদিন থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ঘোষণা করল যে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা ভারতে হবে, সেদিন থেকেই সম্ভবত পাকিস্তান দুশ্চিন্তায় ভুগছে।

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) দুশ্চিন্তাটা ভিসা নিয়ে। শুধু ক্রিকেটারই তো নন, বিশ্বকাপে যাওয়া মানে দলের পাশাপাশি পাকিস্তান থেকে ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা, দলসংশ্লিষ্ট আরও অনেকে, সাংবাদিক, দর্শক...অনেকেরই ভারতে যেতে হবে। ভারত তাঁদের সবাইকে ভিসা দেবে তো! দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের যে ইতিহাস, তাতে দুশ্চিন্তায় পিসিবি ভুগবে নাই–বা কেন! দুশ্চিন্তা কি, পাকিস্তানের বড় মাথাব্যথাই হয়ে গিয়েছিল প্রশ্নটা।

তবে পাকিস্তানের মাথাব্যথার দাওয়াই এল ভারত থেকেই। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, আইসিসির সর্বশেষ সভায় আইসিসিকে ভারত নিশ্চয়তা দিয়েছে, পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়া হবে।

পিসিবি চেয়ারম্যান এহসান মানি।
ফাইল ছবি: এএফপি

ভারতের কাছ থেকে ভিসা পাওয়া নিয়ে পিসিবির দুশ্চিন্তাটা কত বেশি ছিল, সেটা বোঝা গেছে আইসিসির কাছে করা তাদের অনুরোধে। পিসিবি আবদার জানিয়েছিল ভারত ভিসা দিতে রাজি না হলে বিশ্বকাপটা যেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরিয়ে নেওয়া হয়। ভিসা দেওয়ার ব্যাপারে ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছ থেকে যাতে লিখিত নিশ্চয়তা নেওয়া হয়, সে দাবিও আইসিসির কাছে করে রেখেছিল পিসিবি।

গত ফেব্রুয়ারিতে পিসিবি চেয়ারম্যান এহসান মানি এ নিয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে বেশ ঝাঁজালো বক্তব্যও দিয়েছিলেন। ‘এই তিন মোড়ল মানসিকতা থেকে বের হওয়া দরকার। আমরা শুধু জাতীয় দলের জন্যই ভিসার লিখিত নিশ্চয়তা চাইছি না, সমর্থক, বোর্ড কর্মকর্তা, সাংবাদিক সবার জন্যই চাইছি। আমরা আইসিসিকে বলে রেখেছি মার্চ শেষ হওয়ার আগেই ভারতের কাছ থেকে লিখিত নিশ্চয়তা আসা উচিত, যাতে আমরা বুঝতে পারি, এ ব্যাপারে আমরা ঠিক কোন জায়গায় আছি। না হলে আমরা বিশ্বকাপটা সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আইসিসিকে চাপ দেব,’ ফেব্রুয়ারিতে এটাই ছিল মানির হুঁশিয়ারি।

এভাবে হুঁশিয়ারির সুরে পিসিবির কথা বলা অবশ্য বিসিসিআইয়ের কর্মকর্তারা খুব একটা ভালোভাবে নেননি। সে সময়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিসিআইয়ের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদন আসে ভারতের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে। যেখানে বিসিসিআইয়ের বর্তমান সভাপতি ও কিংবদন্তি ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে এহসান মানির দারুণ সম্পর্কের কথা টেনে ওই বিসিসিআই কর্মকর্তা বলেন, মানি নিজেও জানেন যে এভাবে লিখিত নিশ্চয়তা দেওয়া বিসিসিআইয়ের হাতে নয়, সেটা আসলে ভারতের সরকারের সিদ্ধান্ত। বরং এভাবে কথা বলে মানি পাকিস্তানে তাঁর কোনো স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করছেন কি না, সে প্রশ্নও তোলেন বিসিসিআইয়ের ওই কর্মকর্তা।

সৌরভ গাঙ্গুলি।
ফাইল ছবি: এএফপি

মানি কী কারণে হুমকি দিয়েছেন, তা আর জানা যায়নি। তবে পিসিবি চেয়ারম্যানের হুমকিতেই হোক বা ভারতের বিশ্বকাপ আয়োজনের ধাপ মেনে এগিয়ে চলাতেই হোক, পাকিস্তানের মাথাব্যথা কমতে যাচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তেমনটাই জানাচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, আইসিসিকে ভারত এই নিশ্চয়তা দিয়েছে, পাকিস্তান দল ভারতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ঝামেলায় পড়বে না। ভারতের সরকার পাকিস্তান দলকে ভিসা দেবে। ১ এপ্রিল আইসিসির ত্রৈমাসিক সভায় ভারত এই নিশ্চয়তা দিয়েছে বলে জানাচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

যদিও এখানে প্রশ্ন থেকে যায়। প্রতিবেদনে শুধু পাকিস্তান দলের কথা বলা আছে। কিন্তু পাকিস্তানের দাবি তো শুধু দলের জন্য ভিসা নয়, দলের পাশাপাশি সব সময় দর্শক-সাংবাদিক-কর্মকর্তা সবার ভিসার নিশ্চয়তাই চেয়ে এসেছে পিসিবি।

পাকিস্তান আর ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন, দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনা তো আর নতুন কিছু নয়। সেটির প্রভাব অন্য অনেক কিছুর মতো দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্কেও সব সময় পড়েছে। ২০১৩ সালের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়নি। ২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা ভারতের টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলে খেলার সুযোগ পান না। ভারতের ক্রিকেটাররা অবশ্য আইপিএলের বাইরে অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগেই খেলার অনুমতি পান না। কিন্তু এই নাকউঁচু স্বভাবের বাইরে বেরোলেও ভারতের ক্রিকেটাররা যে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ পিএসএলে খেলার সুযোগ পেতেন, ভিসা পেতেন সময়মতো...তার নিশ্চয়তা কোথায়!

পাকিস্তান দল অবশ্য এর আগে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়ও ভারতের ভিসা পেয়েছে। কিন্তু ভারতীয় দল এক দশকেরও বেশি সময়ে কখনো প্রতিবেশী পাকিস্তানে যায়নি।