পাঞ্জাব কিংস: গেইল-রাহুলে শিরোপা?

গেইলেই এখনো আস্থা পাঞ্জাবের।ছবি: আইপিএল

সাফল্যের আশায় মানুষ কত কিছুই না করে!

মারকাটারি ব্যাটসম্যান, কার্যকরী বোলার, ঝড়ো অলরাউন্ডার, বিজ্ঞ কোচ—কোনো কিছু দিয়েই যখন বছরের পর বছর ধরে আইপিএল শিরোপার ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে না, পাঞ্জাবের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি তখন আক্ষরিক অর্থেই সবকিছু নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিল। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব নয়, আগাপাশতলা খোলনলচে বদলে ফেলা ফ্র্যাঞ্চাইজিটির নাম এখন পাঞ্জাব কিংস।

এমন না যে দলের মালিকের পরিবর্তন হয়েছে। আগের মালিকই সাফল্য লাভের আশায় নিজেদের ঢেলে সাজিয়েছেন। গ্যালারিতে মালিক হিসেবে এখনও বলিউড তারকা প্রীতি জিনতা, ব্যবসায়ী নেস ওয়াদিয়া —তাঁদের দেখা যাবে।

১৩ বছর ধরে আইপিএল খেললেও এখনো শিরোপার স্বাদ না পাওয়া দলটা কি এবার সফলতার মুখ দেখবে? মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। একনজরে দেখে নেওয়া যাক পাঞ্জাব কিংসের খুঁটিনাটি।

পাঞ্জাব কিংস।
ছবি: টুইটার

সম্পূর্ণ স্কোয়াড

ব্যাটসম্যান: লোকেশ রাহুল, ক্রিস গেইল, ময়ঙ্ক আগরওয়াল, ডেভিড মালান, সরফরাজ খান, শাহরুখ খান
পেসার: মোহাম্মদ শামি, ঝাই রিচার্ডসন, রাইলি মেরেডিথ, অর্শদীপ সিং, দর্শন নালকাণ্ডে, ইশান পোরেল
স্পিনার: রবি বিষ্ণই, মুরুগান অশ্বিন
অলরাউন্ডার: মোজেস হেনরিকেস, ক্রিস জর্ডান, দীপক হুদা, ফাবিয়ান অ্যালেন, মানদীপ সিং, হরপ্রীত ব্রার, জলজ সাক্সেনা, সৌরভ কুমার, উৎকর্ষ সিং
উইকেটকিপার: নিকোলাস পুরান, প্রাভসিমরান সিং

শক্তি
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, রাজস্থান রয়্যালস, মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মতো পাঞ্জাব কিংসেরও শক্তির জায়গা ব্যাটিং। বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটিং। যে দলের শুরুর চার ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল, ক্রিস গেইল, ময়ঙ্ক আগরওয়াল ও নিকোলাস পুরান—সে দলের আর যাই হোক রান তোলা সমস্যা হতে পারে না, যদি প্রত্যেকেই মোটামুটি ফর্মে থাকেন। যার প্রমাণ গতবার খুব ভালোভাবেই পাওয়া গিয়েছে। শুরুর পাওয়ার প্লেতে নিয়মিত ঝড় তুলত পাঞ্জাব, প্রায় ৬ ওভারে নিয়মিত ৫০ করে রান তুলত, উইকেট হারাত গড়ে একটা। রাহুল নিজে ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে, টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন।

তাঁকে যোগ্য সাহচর্য দিয়ে গেছেন ময়ঙ্ক আগরওয়াল। প্রথমে কয়েক ম্যাচে ক্রিস গেইলকে বসিয়ে রাখা হলেও পরে এই কিংবদন্তি ক্যারিবীয় তারকা একাদশে ফিরে জাত চিনিয়েছেন নিজের, পাঞ্জাবও প্রথমে বেশ কয়েক ম্যাচ হারার পর পাঁচটা ম্যাচ টানা জিতেছিল। যদিও শেষ দিকের ঝলক তাঁদের প্লে-অফে নিয়ে যেতে পারেনি। নিকোলাস পুরানও নিজের দিনে বেশ ভালোই জ্বলে উঠতে পারেন। এই চার মারকাটারি ব্যাটসম্যানের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছেন টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান, ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান।

দুর্বলতা

পাঞ্জাবের টপ/মিডল অর্ডার যত দুর্দান্ত, লোয়ার অর্ডার ঠিক ততটা না। ফিনিশার হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। গতবার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ওপর ভরসা রেখে লাভ হয়নি। ফলাফল, পাঞ্জাব ছেড়ে ম্যাক্সওয়েল এখন কোহলিদের শিবিরে। ম্যাক্সওয়েলের অনুপস্থিতিতে আরেক অস্ট্রেলিয়ান মোজেস হেনরিকেসকে আনা হয়েছে। সঙ্গে দেশীয় তারকাদের মধ্যে লোয়ার-মিডল অর্ডারে সুযোগ দেওয়া হতে পারে দীপক হুদা, শাহরুখ খান, সরফরাজ খানদের। টি-টোয়েন্টির ফিনিশার হিসেবে যাঁদের ক্ষমতাকে অনায়াসেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়।

বছরের পর বছর ধরে পাঞ্জাবকে ডুবিয়েছেন বিদেশি পেসাররা। গত কয়েক বছরের কথাই ধরুন, বিভিন্ন সময়ে দলটায় এসে খেলে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেলডন কটরেল, দক্ষিণ আফ্রিকার কাইল অ্যাবট, নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি, অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ড্রু টাই, ইংল্যান্ডের স্যাম কারেন—কিন্তু কেউই থিতু হতে পারেননি। এবার সে অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় বেশ ভালোই খরচ করেছে পাঞ্জাব কিংস।

বিগ ব্যাশে আলো ছড়ানো পেসার ঝাই রিচার্ডসন ও রাইলি মেরেডিথকে দলে টেনেছে তারা। দেশীয় পেসার মোহাম্মদ শামির সঙ্গে এই দুজনের একজন ‘ক্লিক’ করতে পারলে তবেই এই মৌসুমে শিরোপার স্বপ্ন দেখতে পারে পাঞ্জাব। ওদিকে শামি নিজেও কবজির চোটে পড়ে এখনো আগের ফর্মে ফিরতে পারেননি। শামির সুস্থতার ওপর পাঞ্জাবের বোলিং আক্রমণের অনেকটাই নির্ভর করছে।

ঝাই রিচার্ডসনকে এবার কিনে নিয়েছে পাঞ্জাব কিংস।
ছবি : টুইটার

স্পিন বিভাগেও আন্তর্জাতিক কোনো তারকা নেই দলটায়। গতবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের রবি বিষ্ণই আলো ছড়িয়েছিলেন, এবারও তাঁর ওপর আশা করে থাকবেন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। দলে মুরুগান অশ্বিনও আছেন, তবে দুজন একই ধরনের রিস্ট স্পিনার খেলানোর ঝুঁকি হয়তো পাঞ্জাব নেবে না। অফস্পিনারের দায়িত্ব পালন করতে হবে বর্ষীয়ান ঘরোয়া ক্রিকেটার জলজ সাক্সেনাকে, যিনি এ বছর নিজের বোলিংয়ের দিকে আরও ভালোভাবে মনোযোগ দিচ্ছেন।

নতুন একধরনের ক্যারম বল নিয়ে আসছেন আইপিএলে, এর মধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে জলজ। আরও আছেন বাঁহাতি স্পিনার সৌরভ কুমার। ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার সৌরভ। ইকোনমি রেট কিংবা বোলিং গড় মোটামুটি ঈর্ষা করার মতোই। কিন্তু তাঁকে হুট করে পাঞ্জাব মূল একাদশে সুযোগ দেবে কি না, দেখার বিষয়।

গত দুই বছর আফগানিস্তানের মুজিব-উর-রহমানের ওপর পাঞ্জাব ভরসা করলেও এবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের কোনো স্পিনার না থাকার কারণে পাঞ্জাব সমস্যায় পড়ে কি না, এটাই দেখার বিষয়। বিদেশিদের মধ্যে স্পিনার হিসেবে ফাবিয়ান অ্যালেন আছেন। কিন্তু এই ক্যারিবীয় স্পিনিং অলরাউন্ডারের ওপর গত বছর সানরাইজার্স হায়দরাবাদ কোনো ভরসাই রাখেনি, খেলতে নামায়নি একটা ম্যাচেও। এবারও সে ধারার খুব বেশি ব্যতিক্রম হবে, বলা যাচ্ছে না।

সম্ভাব্য একাদশ: লোকেশ রাহুল, ক্রিস গেইল, ময়ঙ্ক আগরওয়াল, নিকোলাস পুরান, দীপক হুদা, শাহরুখ খান, মোজেস হেনরিকেস, মোহাম্মদ শামি, ঝাই রিচার্ডসন, রবি বিষ্ণই, অর্শদীপ সিং