পারিবারিক কষ্ট নিয়ে সংবাদ, চটেছেন স্টোকস

স্টোকসের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে স্পর্শকাতর তথ্য প্রচার করেছে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘দ্য সান’। ছবি : এএফপি
স্টোকসের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে স্পর্শকাতর তথ্য প্রচার করেছে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ‘দ্য সান’। ছবি : এএফপি

মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কষ্টই থাকতে পারে। থাকতে পারে পারিবারিক দুঃসহ কোনো স্মৃতি। কিন্তু সেগুলো যদি অপ্রাসঙ্গিকভাবে কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে যায়, তাহলে যে-কেউই ক্ষুব্ধ হতে পারেন, বিপন্ন বোধ করতে পারেন। যেমনটা হয়েছেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের তারকা বেন স্টোকস। গত এক বছরে ইংল্যান্ডের হয়ে কত কিছুই না করেছেন। দেশকে এনে দিয়েছেন সাফল্য। যে বিশ্বকাপ এত দিন অধরা কষ্ট হয়ে ছিল ইংলিশ ক্রিকেটে, সেই বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর ভূমিকা দুর্দান্ত। অ্যাশেজে হেডিংলি টেস্টে ইতিহাস গড়া ইনিংস খেললেন। সেই ইনিংসে অবিস্মরণীয় এক জয় পেল ইংল্যান্ড। এসবের প্রতিদান স্টোকসকে এভাবে দিল ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘দ্য সান’!

স্টোকস পরিবারের একটি অসম্ভব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছে দ্য সান। যে স্পর্শকাতর বিষয়টি তাঁর পরিবার এত দিন চেপে রেখেছিলেন বুকের কষ্ট বানিয়ে। স্টোকস বিষয়টিকে বলছেন ‘সাংবাদিকতার নামে জঘন্য ও নোংরা কাজ’। স্টোকসের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইংলিশ ক্রীড়াজগতের অনেক বড় তারকা। এঁদের মধ্যে আছেন ক্রিকেটার জো রুট ও ফুটবল তারকা মারকাস রাশফোর্ড।

‘দ্য সান’ ছেপেছে স্টোকস পরিবারে ৩১ বছর আগে ঘটে যাওয়া এক বিয়োগান্ত ঘটনার বিবরণ। সেটি স্টোকসের মা ডেব স্টোকসকে ঘিরে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টোকসের সৎ ভাই অ্যান্ড্রু স্টোকস ও বোন ট্রেসি স্টোকসকে ১৯৮৮ সালে ক্রাইস্টচার্চে নিজেদের বাসায় গুলি করে খুন করেছিলেন ডেবের সাবেক স্বামী রিচার্ড ডান। ঘটনার সময় স্টোকসের জন্মই হয়নি। ন্যক্কারজনক এই কাণ্ডের সময়ে অ্যান্ড্রুর বয়স ছিল চার, ট্রেসির বয়স ছিল আট।

কিন্তু অমন কেন করেছিলেন রিচার্ড ডান? তখন ডানের সঙ্গে ডেবের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। ডেবের সঙ্গে বিচ্ছেদটা একদম মেনে নিতে পারেননি ডান। আস্তে আস্তে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। অবস্থা আরও খারাপ হয় যখন ডান শোনেন, রাগবি কোচ জেরার্ড স্টোকসের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ডেব। আদালতের নির্দেশে সপ্তাহে দু’দিন বাচ্চাদের দেখভালের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডান। এমনই এক দিনে দুই বাচ্চাকে রাইফেল দিয়ে গুলি করে খুন করেন ডান, নিজেও আত্মহত্যা করেন। পরে দুই শিশুসন্তানের মৃতদেহ সহ ডানের লাশ উদ্ধার করে ক্রাইস্টচার্চ পুলিশ। ঘটনাটা নিয়ে তখন নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমে বেশ লেখালেখি হয়েছিল।

ঘটনার তিন বছর পর জন্ম স্টোকসের। সন্তান হারানোর বেদনা বেন স্টোকসকে দিয়ে ভোলেন ডেব।

টুইটারে স্টোকসের ক্ষোভ। ছবি : বেন স্টোকসের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া
টুইটারে স্টোকসের ক্ষোভ। ছবি : বেন স্টোকসের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

এত দিন নিজেদের পরিবারের এই স্পর্শকাতর ঘটনা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই কাউকে কিছু বলেননি স্টোকস। সানের 'কল্যাণে' সেই খবরটাও বের হয়ে গেল। শুধু স্টোকসের বাবা-মা নন, ‘দ্য সান’ এ নিয়ে জেরা করেছে স্টোকসের সৎ বোন, রিচার্ড ডানের প্রথম ঘরের মেয়ে জ্যাকিকেও। সে সময় জ্যাকির বয়স ছিল ১৮। ট্যাবলয়েডে জ্যাকি বলেছেন, ‘আমি তখন একটা দোকানে কাজ করতাম। ওই ঘটনার আগের দিন বাবা দেখা করতে এসেছিলেন। কিন্তু আমি বাসায় ছিলাম না। এর পরে আর বাবার সঙ্গে দেখা হয়নি। পরে ওই ঘটনার কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি।’

ট্যাবলয়েডের প্রথম পাতায় সেই খবর দেখে টুইটারে নিজের ক্ষোভ ঝেড়েছেন স্টোকস, ‘আমার পরিবারের সঙ্গে ৩১ বছর আগে ঘটে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর ও ব্যক্তিগত এক ঘটনা নিয়ে আজ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য সান। সাংবাদিকতার নামে এ রকম জঘন্য ও নোংরা প্রতিবেদন নিয়ে কী বলা উচিৎ, আমি জানি না। সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার দিক দিয়েও জিনিসটা কীভাবে যুক্তিযুক্ত, আমার জানা নেই। তিরিশ বছর ধরে এই ঘটনা ভুলে থাকার চেষ্টা করছে আমার পরিবার। কিন্তু ‘দ্য সান’ সেই আগের ক্ষত আবার জাগিয়ে তুলেছে। গত শনিবার আগে থেকে কিছু না জানিয়েই আমার বাবা-মায়ের ক্রাইস্টচার্চের বাসায় এক সাংবাদিককে পাঠিয়ে দিয়েছিল তারা, চূড়ান্ত ব্যক্তিগত সেই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি তারা, সে জিনিস নিয়ে ট্যাবলয়েডের প্রথম পাতায় রগরগে খবর ছাপিয়েছে। আমার নাম ভাঙিয়ে আমার ও আমার পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধা না রেখে শুধু কিছু বাড়তি বিক্রিবাট্টার আশায় তারা যা করল, তা ন্যক্কারজনক। আমার নামকে ব্যবহার করে এভাবে আমার বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তানদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বিঘ্ন করার এই উদ্যোগ আমি কখনই সফল হতে দেব না। তা ছাড়া তারা যা লিখেছে, তা অতিরঞ্জিত। এখন যেহেতু কাহিনিটা প্রকাশ হয়েই গেছে, আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমাদের ব্যক্তিগত ঘটনা নিয়ে আর যেন ঘাঁটাঘাঁটি না করা হয়।’

‘দ্য সান’ এর ওপরে ক্রীড়াবিদদের ক্ষোভের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ১৯৮৯ সালে হিলসবরো স্টেডিয়ামের দুর্ঘটনা নিয়ে ‘দ্য সান’ পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন ছাপিয়েছিল বলে অভিযোগ লিভারপুল ক্লাবের। সে কারণে ইংলিশ এই ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে দ্য সানের সম্পর্ক মোটেও সুবিধার নয়। সাবেক লিভারপুল তারকা থেকে শুরু করে এই তালিকায় আছেন বর্তমান কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপও। সানের এক সাংবাদিকের সঙ্গে কিছুদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে রাজি হননি ক্লপ।