পেইনের ‘যৌন উত্তেজক বার্তা’ কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ খুললেন তাঁর স্ত্রী

একপ্রকার বাধ্য হয়েই অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছেড়েছেন টিম পেইন। অনেকেই বলছেন, আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজের দল থেকেও বাদ পড়তে পারেন তিনি। ক্যারিয়ারের এমন দুঃসময়ে স্ত্রী বনিকে পাশে পাচ্ছেন পেইন। পুরোনো ঘটনা সামনে নিয়ে এসে পেইনকে এভাবে যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে দেওয়াকে বনির কাছে মনে হয়েছে তাঁর স্বামীর প্রতি ঘোরতর অন্যায়!

ঘটনা মূলত ২০১৭ সালের নভেম্বরের। ক্রিকেট তাসমানিয়ার এক নারী কর্মীকে কিছু যৌন উত্তেজক বার্তা ও অশ্লীল ছবি পাঠিয়েছিলেন পেইন। সেই নারী কর্মী বিষয়টি ক্রিকেট তাসমানিয়া ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে জানান। এটা নিয়ে তদন্তও হয়। কিন্তু ক্রিকেট তাসমানিয়া ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কারও কাছেই তখন মনে হয়নি যে পেইন আচরণবিধি ভেঙেছেন! পেইনকে তারা কোনো ধরনের শাস্তি না দিয়েই ছেড়ে দেয়।

স্বামী টিম পেইনের সঙ্গে বনি পেইন
ছবি: বনি পেইনের ইনস্টাগ্রাম

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট প্রশাসন পেইনকে শাস্তি না দিলেও স্ত্রীর কাঠগড়ায় ঠিকই দাঁড়াতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১৬ সালে পেইনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বনি স্বামীর এমন কাজে কষ্ট হয়তো পেয়েছিলেন, কিন্তু বিষয়টি দুজনে মিটিয়েও নিয়েছিলেন। দ্য সিডনি টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বনি বলেছেন, ‘আমরা দুজনে ২০১৮ সালে বিষয়টি সামলে নিয়েছি। ওই ঘটনা আসলে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর করতে সাহায্য করেছে।’

সেই ঘটনা সে সময় পেইন ও তাঁর স্ত্রী সামাল দিলেও সেটা আবার সামনে চলে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম নিউজ কর্পই বিষয়টি প্রথম সামনে এনেছে। এরপর অন্য সব সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে খবর ছাপা হয়েছে। একপর্যায়ে পেইন অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এভাবে পেইনকে নেতৃত্ব ছাড়তে হওয়ার বিষয়টি ভালো লাগেনি বনির, ‘টিমের জন্য আমার অনেক খারাপ লাগছে। সত্যি বলতে কি, তার নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়টি আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।’

অস্ট্রেলিয়র টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন টিম পেইন
ফাইল ছবি

এখানেই থামেননি বনি। তিনি এরপর যোগ করেন, ‘এটা দুঃখজনক যে মনে করেছে যে এ ঘটনার জন্য তাকে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। আমার কাছে এটা অন্যায় মনে হয়েছে। বিষয়গুলো আবার সামনে নিয়ে আসা এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করাটা আমাকে কিছুটা হতাশও করেছে। আমরা তো কয়েক বছর আগেই এর সমাধান করে ফেলেছিলাম। আবার এটাকে সামনে নিয়ে আসাটা অন্যায়।’

এ ঘটনার কারণে পেইন নেতৃত্ব ছেড়ে দিন, এটা চাননি অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারও। মেলেবোর্ন হেরাল্ড সানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এটি বলেছেন পেইন নিজেই। নেতৃত্ব ছাড়তে তাঁকে কেউ বাধ্য করেছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে পেইন বলেছেন, ‘এটা শুধুই আমার সিদ্ধান্ত। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন ছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, এটাই ঠিক সিদ্ধান্ত।’ পেইন এরপর যোগ করেন, ‘জে এল (জাস্টিন ল্যাঙ্গার) আমাকে বলেছেন যে আমার এ সিদ্ধান্তে তাঁর খারাপ লেগেছে।’

অস্ট্রেলিয়ার জাস্টিন ল্যাঙ্গার চেয়েছিলেন পেইন নেতৃত্ব না ছাড়ুন
ফাইল ছবি

পেইনকে অধিনায়কত্ব না ছাড়ার জন্য বার্তাও পাঠিয়েছিলেন ল্যাঙ্গার। কিন্তু পেইন উল্টো ল্যাঙ্গারকে তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে বুঝিয়েছেন। মেলবোর্ন হেরাল্ড সানকে পেইন বলেছেন, ‘তিনি চেয়েছেন, আমি যেন অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাই। তবে আমি তাঁকে বুঝিয়েছি যে কেন এ সময়ে আমার নেতৃত্ব ছাড়া উচিত। বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরেছেন এবং বলেছেন, তিনি আমার পাশেই আছেন।’

অস্ট্রেলিয়া দলে পেইনের সতীর্থরাও তাঁর পাশেই আছেন। সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে পুরোনো ঘটনা আবার সামনে আসার পর থেকেই নানাভাবে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা পেইনকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন। পেইন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি সতীর্থদের প্রত্যেকের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছি। তারা লিখেছে, আমার পাশেই আছে সবাই। এও লিখেছে যে আমরা সবাই-ই ভুল করি, কিন্তু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’